দেশ বিদেশ

ফোর-জি সেবা চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা

কাজী সোহাগ

১৫ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১:৪০ পূর্বাহ্ন

অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালুর প্রক্রিয়া নিয়ে। তরঙ্গের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। গত ১০ই জুলাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে তরঙ্গ নিলামের খসড়া নীতিমালা। এতে ৯০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গের দাম প্রতি মেগাহার্টজ ২৪০ কোটি টাকা, ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের দাম ২৮০ কোটি টাকা ও ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ২১৬ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার যে কোনো তরঙ্গ দিয়ে যেকোনো প্রযুক্তির সেবা বা প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা সুবিধার জন্য মেগাহার্টজ প্রতি ৮০ কোটি টাকা আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেয়া এ মূল্যকে ব্যবসাবান্ধব নয় বলে জানিয়েছে মোবাইল অপারেটররা। তাদের প্রত্যাশা বিভিন্ন ব্যান্ডের তরঙ্গের দাম মেগাহার্টজ প্রতি সর্বোচ্চ ২ কোটি ডলার বা ১৬০ কোটি টাকা হতে পারে। এ হিসাবে তিন ধরনের ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্টজের দাম প্রত্যাশার চেয়ে ৫৬ থেকে ১২০ কোটি টাকা বেশি। দামের এ বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছে মোবাইল অপারেটররা। তারা এর আগে বিষয়টি জানিয়ে যৌথভাবে চিঠি দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদকে। এদিকে তরঙ্গ নিলামের খসড়া নীতিমালার বিষয়ে ১৮ই জুলাই পর্যন্ত আগ্রহী যে কেউ মতামত দিতে পারবেন। অপারেটররা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে। তরঙ্গ দাম বেশি হওয়ায় অপারেটররা এ নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে কিনা তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তারা জানান, যে দাম ধরা হয়েছে তা আসলে ব্যবসাবান্ধব নয়। এর ফলে আমাদের ব্যবসার ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে। এত দামে তরঙ্গ কেনার পর নেটওয়ার্ক সমপ্রসারণে বিনিয়োগ করতে হবে আরো ২২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) সেবা চালুর পর মুঠোফোন অপারেটররা এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর বিপরীতে থ্রিজি থেকে অপারেটররা ঘরে তুলতে পেরেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে ফোর-জিতে বিনিয়োগ করলে সেটিও লাভজনক হবে না। আবার নিজেদের যে তরঙ্গ আছে তা দিয়ে গ্রাহকদের সেবার মান বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে। অপারেটররা জানিয়েছে, নিলাম প্রক্রিয়ায় তারা আসলে অংশ নেবে কি নেবে না তা নির্ধারণ করবেন বিনিয়োগকারীরা। সবগুলো অপারেটরের বিনিয়োগকারী বিদেশি। মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবীর বলেন, অপারেটররা এদেশের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ মানসম্মত সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য প্রয়োজন ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ। ফোর-জি সেবার জন্য তরঙ্গের দাম আসলে অপারেটরদের ব্যবসাকে বাধাগ্রস্ত করবে। একইসঙ্গে গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা দেয়াটাও পড়বে চ্যালেঞ্জের মুখে। তাই এমন একটি মূল্য নির্ধারণ করা দরকার হবে, যা সব পক্ষের জন্য লাভজনক হয়। পাশাপাশি ব্যবসাবান্ধবও হয়। এদিকে এখন বাংলাদেশ সফর করছেন বাংলালিংকের প্যারেন্টস কোম্পানি ভিওন-এর সিইও জন-ইভস সার্লিয়ার। তরঙ্গের উচ্চমূল্য প্রসঙ্গে তিনি গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভিওন বাংলালিংককে দেশের শীর্ষস্থানীয় যোগাযোগ এবং ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আগ্রহী। এজন্য আগামী ২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভিওন মনে করে টেলিযোগাযোগ খাতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কর হার এবং তরঙ্গের উচ্চমূল্যের সম্মিলিত অর্থনৈতিক চাপ বিনিয়োগের অন্তরায় এবং তা বিবেচনায় আনা উচিত। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় করের চাপ এবং প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের দাম বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ। এটি দেশব্যাপী থ্রি-জি এবং ফোর-জি চালুর ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে প্রভাবিত করবে যা উন্নত গ্রাহক সেবার অন্তরায়। এদিকে তরঙ্গ বরাদ্দে নিলামের ভিত্তিমূল্য দুই বছর আগের ভিত্তিমূল্যের চেয়ে ৭ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার বাড়ানোর কথা গত মে মাসেই জানিয়েছিল বিটিআরসি। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতাসহ (টেক নিউট্রালিটি) তরঙ্গের এই নিলাম অনুষ্ঠিত হবে- এ কারণ উল্লেখ করে এবার নিলামের ভিত্তিমূল্য দুই বছর আগের ভিত্তিমূল্যের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে বলে খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা হলো যে কোনো তরঙ্গে যে কোনো প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়ার সুবিধা। বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটররা বর্তমানে টু-জি ও থ্রি-জি সেবার জন্য তিনটি আলাদা ব্যান্ডের তরঙ্গ ব্যবহার করে। এই তিনটি ব্যান্ড হলো ৯০০, ১ হাজার ৮০০ ও ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা পেলে এই তিনটি ব্যান্ডের তরঙ্গ দিয়েই টু-জি, থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা দিতে পারবে অপারেটররা। এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যে (সেপ্টেম্বর) এ সেবাটি চালু করা হবে।

 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status