শেষের পাতা

নায়িকা অন্তরাকে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে

রুদ্র মিজান

৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

সংবাদটি ছিল সাদামাটা- ‘চিত্রনায়িকা অন্তরা আর নেই’। ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০১৪ সালের ৮ই জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৫টায়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ওই সময়ে প্রচার করা হয়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন। অন্তরাকে হত্যা করা হয়েছিলো। এমনটিই দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। সর্বশেষ বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন তার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করার।
হত্যার অভিযোগ অন্তরার স্বামীর বিরুদ্ধে। প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন পারভীন আক্তার অন্তরা। কিন্তু শুরুতেই প্রতারণার শিকার হন তিনি। পাগল মন, প্রেমের কসম, লেডি র‌্যাম্বো, শয়তান মানুষ, নাগ-নাগিনীর প্রেমসহ  বিভিন্ন  দর্শকপ্রিয় ছবির এই নায়িকা বাস্তবে প্রেমে পড়েছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা উত্তরপাড়ার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম খোকন মিয়ার। গাজীপুরে শুটিং করতে গিয়েই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান অন্তরা।
সোমবার দুপুরে এ বিষয়ে কথা হয় অন্তরার স্বজনদের সঙ্গে। স্বজনরা জানান, চলচ্চিত্রে তখন বেশ ভালো অবস্থান অন্তরার। অন্তরার এই অবস্থান, সৌন্দর্য ও অর্থের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই নানা কৌশলে তাকে বশ করেন খোকন। প্রথম দিকেই খোকন তাকে জানান, তার স্ত্রী নেই, মারা গেছেন। অন্তরাকে তার ভালোলাগে। প্রথমে ভক্ত, পরে বন্ধু। একপর্যায়ে প্রেম। ২০১০ সালের ২৬শে মে অন্তরাকে বিয়ে করেন খোকন। তার আগেও অন্তরার একটি বিয়ে হয়েছিলো। ওই পক্ষে অপ্সরি জান্নাত নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তা জেনেই তাকে বিয়ে করেন খোকন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে খোকনের বেলায়। বিয়ের কিছুদিন পরেই তার গোপন তথ্যটি জেনে যান অন্তরা। খোকনের স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রয়েছে। অন্তরা তার দ্বিতীয় স্ত্রী। শুরু হয় কলহ। খোকন তাকে গাজীপুরে নিয়ে যেতে চান। রাজি হন না তিনি। এক পর্যায়ে রাজধানীর রমনা এলাকার আড়ং প্লাজার নবম তলার একটি ফ্ল্যাটে সংসার শুরু করেন খোকন-অন্তরা।
কিন্তু বনিবনা হচ্ছিলো না দুজনের। নায়িকা অন্তরার অভিনয়, বিভিন্নস্থানে শুটিংয়ের জন্য আসা-যাওয়াকে মেনে নিতে পারছিলেন না খোকন। এ নিয়ে দুজনের কলহ চরম আকার ধারণ করে। দূরত্ব সৃষ্টি হয় অন্তরা-খোকনের। এরমধ্যেই আইয়ান ইসলাম অর্থ নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় এই দম্পতির। এ অবস্থাতেই অন্তরাকে গাজীপুরে নিতে চাপ দেন খোকন। সতীনের সংসারে যাবেন না অন্তরা। এ নিয়ে গাজীপুরে আদালতে শরণাপন্ন হন খোকন। তাতে সমাধান হচ্ছিলো না। বিষয়টি জটিল হতে থাকে।
এক পর্যায়ে আপোষের জন্য স্ত্রী অন্তরার বাসায় আসা-যাওয়া শুরু করেন। সম্পর্ক আবার ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করেন খোকন। তারপরই ঘটে নির্মম ঘটনাটি।  দিনটি ছিলো ২০১৪ সালের ২রা জানুয়ারি। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টায় অন্তরার বাসায় যান খোকন। অন্তরার মেয়ে অপ্সরি জান্নাত, অন্তরার ভাই সাজ্জাদ হোসেন রনি ও এক গৃহকর্মী তখন বাসায়। তারা জানান, খোকন বাসায় ঢুকেই অন্তরার কক্ষে যান। দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণ পরেই দুজনের ঝগড়ার শব্দ। চিৎকার করে কথা বলছিলেন অন্তরা ও খোকন। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে বাসা থেকে দ্রুত বের হয়ে যান খোকন। ওই সময়ে অন্তরার কক্ষে ঢুকে তাকে অচেতন অবস্থায় পান অপ্সরি ও সাজ্জাদ। বাসা থেকে দ্রুত বের হয়ে দেখেন খোকন নেই। লিফটে নিচে নেমে গেছেন তিনি। খবর পেয়ে অন্তরার মা আমেনা খাতুনসহ স্বজনরা ওই বাসায় ছুটে যান। দ্রুত তাকে বিজয়নগরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে হাসপাতালে ছুটে যান খোকন। তিনি কোনোভাবেই ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা করাবেন না। আমেনা খাতুন বলেন, অনেকটা জোর করেই অন্তরাকে সিদ্ধেশ্বরীর মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে খোকন। সেখানে গোবিন্দ বণিক নামে তার এক ঘনিষ্ঠ ডাক্তার রয়েছেন। আমেনা অভিযোগ করেন, মনোয়ারা হাসপাতালে ৮ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় মারা যান অন্তরা। ২রা জানুয়ারি থেকে ওই দিন পর্যন্ত অন্তরার মা’সহ কাউকেই অন্তরার কাছে যেতে দেয়া হয়নি। এমনকি মৃত্যুর পর ডাক্তারের চিকিৎসাপত্রও দেখতে দেয়া হয়নি তাদের। তাদের জানানো হয়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। অন্তরার কর্মস্থল এফডিসিতেও তার লাশ নিতে দেননি খোকন। তাড়াহুড়ো করেই অন্তরাকে দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। তারপরও খোকনের নানা কথায় তখনও তাকে অবিশ্বাস করেননি অন্তরার স্বজনরা।
অন্তরার মা আমেনা খাতুন জানান, সত্যটা খোকন নিজেই প্রকাশ করেছেন। খোকন-অন্তরার সন্তান অর্থকে গাজীপুরে নিয়ে গেলে সেখানে সৎ মায়ের নানা অত্যাচারের  শিকার হয় শিশুটি। এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলে অর্থকে আদালত আমেনা খাতুনের  হেফাজতে দেন। এ নিয়ে ২০১৫ সালের ৫ই মার্চ বাসায় গিয়ে আমেনাকে হুমকি দেন খোকন। আমেনা বলেন, তখন খোকন বলেছিলো ‘তোর মেয়েকে শেষ করেছি। এবার তোদেরকেও শেষ করে দেব’। তারপরই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যার অভিযোগে পিটিশন মামলা করেন আমেনা খাতুন। মামলার আইনজীবী আবুল কালাম খান জানান, গত ১২ই জানুয়ারি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দশম আদালতের বিচারক অন্তরার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে ১১ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আমিনুল ইসলাম জানান, আজ কালের মধ্যেই আজিমপুর কবরস্থান থেকে অন্তরার লাশ উত্তোলন করা হবে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। নিহত অন্তরা চাঁদপুর জেলা সদরের চরপুয়া গ্রামের আবদুল খালেকের মেয়ে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status