শেষের পাতা

পরিবহন ধর্মঘটে সিলেটে দুর্ভোগ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৩ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৩৯ অপরাহ্ন

পাঁচ দফা দাবিতে ঘোষণা দিয়ে সিলেটে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন চালকরা। এ কারণে সিলেটে গতকাল ভোর থেকে ঘুরেনি গাড়ির চাকা। ধর্মঘটের আগে তারা সিলেটের স্থানীয় দাবিগুলো প্রশাসনকে অবগত করেছিলেন। এর মধ্যে একটি ছিল- নগরীর চৌহাট্টায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের চলমান মামলা। কয়েক মাস আগে সংঘটিত এই ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের আশ্বাস দেয়া হলেও সেটি মানা হয়নি। এখন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ওমরাহ হজে সৌদি আরবে রয়েছেন। তিনি সিলেটে উপস্থিত না থাকায় মামলা প্রত্যাহার নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হওয়ার কারণে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনার অগ্রগতি করা যাচ্ছে না। আর এই দাবি মানা না হলে ধর্মঘট প্রত্যাহারও করা হবে না বলে গতকাল দুপুরে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা। সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘ধর্মঘট নিয়ে রাতে (গতকাল) বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে।  বৈঠকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস নয়, দাবি মেনে নিলেই আমরা ধর্মঘট থেকে সরে যাবো। এর আগেও একাধিকবার বৈঠক করে আমাদের আশ্বাস প্রদান করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে জানান তিনি।’ সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগ শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে এই ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। এ কারণে সিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারেও একই ভাবে ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। ধর্মঘটের কারণে গতকাল সকাল থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি কিংবা প্রবেশও করেনি। শুধু বাস টার্মিনালই নয়, ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশা সহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। কেবলমাত্র নগরীতে রিকশা চলাচল করেছে। গতকাল ছিল এসএসসি পরীক্ষা। সকালের দিকে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে যাতায়াতের সুযোগ দেয়া হয়। এর বাইরে জরুরি প্রয়োজনের অনেক যানবাহনকেও চলতে দেয়া হয়নি। নগরীর চণ্ডিপুল এলাকায় সকালে আসে পার্সেল পরিবহনের বিভিন্ন যানবাহন। এ সময় সেখানে থাকা শ্রমিকরা ওইসব যানবাহনকে সিলেট নগরীতে প্রবেশে বাধা দেয়। পরে পার্সেলের কর্তৃপক্ষ ভ্যানগাড়িতে করে মালপত্র সিলেট গন্তব্যে নিয়ে আসেন। পরিবহন ধর্মঘটে গতকাল রাজপথে সক্রিয় ছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা। সকালে নগরীর তেমুখী এলাকায় শ্রমিকদের একাংশ লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করেন। এ সময় তারা সুনামগঞ্জ থেকে আগত যানবাহনকে ওখানে আটকে দেন। একটি ট্রাক দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। একই নগরীর কদমতলী, হুমায়ুন রশীদ স্কয়ার, চণ্ডিপুল এলাকায় অবস্থান নেয়। ওখানে ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা যানবাহন আটকে দেয়া হয়। এদিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সিলেটে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে ছিল। সকালে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় কয়েক শ’ যাত্রী আটকা পড়েন। এর মধ্যে কেউ কেউ বেড়াতে এসেও আটকা পড়েন। অনেকেই আবার নিজ উদ্যোগে মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে গন্তব্যে গেছেন। সিলেট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭-এর সভাপতি জাকারিয়া আহমদ ও সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিম জানিয়েছেন, এই ৫ ন্যায্য দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছি। একাধিক বার পরিবহন কর্মবিরতির ডাক দিয়ে পরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি, সমাধানের আশ্বাসে কর্মবিরিত প্রত্যাহার করেছি। শুধু তাই নয়, এসব দাবিতে আমরা বিভিন্ন সময়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু কোনো আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় সকল পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও জোটকে নিয়ে  দেশের শীর্ষ পরিবহন সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশন এই কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে। এই কর্মবিরতি খুব কঠোরভাবে পালন করার জন্য পরিবহন শ্রমিকরা সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। শ্রমিকদের ৫ দফা দাবি হচ্ছে:  সিলেট  জেলা অটোটেম্পো, অটোরিকশাচালক শ্রমিক জোটের ত্রিবার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা, প্রহসনের নির্বাচন ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘোষিত কমিটি বাতিল করা ও মনোনয়ন ফি বাবদ আদায়কৃত লাখ লাখ টাকা  ফেরত প্রদান এবং সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালককে প্রত্যাহার, সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস,  কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের  নেতৃবৃন্দের ওপর দায়েরকৃত মামলাসমূহ প্রত্যাহার, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ, মেয়াদ উত্তীর্ণ শেরপুর  সেতু, শেওলা সেতু, লামাকাজী সেতু, শাহপরান সেতু ও ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু  থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং চৌহাট্টা সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশাসহ ছোট গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা করা।

 ট্রাক মালিক সমিতির সমর্থন: সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সিলেট বিভাগে ডাকা অনির্দিষ্টকালের গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনের ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি। গতকাল সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল, সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়জুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদ ফয়েজ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, সিলেটের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন মহল কর্তৃক দাবি আদায়ের আশ্বাসে মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর চলে যায়, কিন্তু সেই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। অবিলম্বে মালিক-শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারা দেশে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status