প্রথম পাতা

বাংলাদেশ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

সংসারে গভীর অসুখ

ইশতিয়াক পারভেজ, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে

২৯ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার, ৯:২৮ অপরাহ্ন

কি হয়েছে বাংলাদেশ দলের? প্রশ্ন এখন সর্বত্র। দলের ভেতরে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচ আর বিসিবি কর্তাদের মান অভিমান এখন প্রকাশ্যে। সুখী এক টাইগার পরিবারে কার নজর লেগেছে জানা নেই। বিশ্বকাপ ময়দানে বাংলাদেশ যেন এক অসুখী পরিবারের প্রতিচ্ছবি। টেনেটুনে বাছাই পর্ব পেরিয়ে সুপার টুয়েলভ পর্বে টানা দুই হার। মাঠে যেন লড়াই করতে ভুলে গেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। সেমিফাইনালের  খেলার স্বপ্ন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে এসেছে। আজ হারলে শেষ দুটি ম্যাচ শুধু আনুষ্ঠানিকতাই হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, শেষ তিনটি ম্যাচ জিতলেও তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের জয়-পরাজয়ের দিকে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে জয়ের আশা করাও যেন অমূলক। বলার অপেক্ষা রাখে না ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আজ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। শারজায় আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর চারটায় মুখোমুখি হবে দুই দল। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ম্যাচ হারের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেননি দলের সিনিয়র কোনো ক্রিকেটার। সংবাদমাধ্যমে তোপের মুখে পাঠিয়ে দেয়া হয় তরুণ স্পিনার নাসুম আহমেদকে। তার অসহায় কণ্ঠে ফুটে ওঠে দলের ভেতরের হতশ্রী চেহারা। তিনি বলেন, ‘পারছি না বলতে, সেটা না, আমাদের দ্বারা হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছি না। মাঠে নামার আগে লক্ষ্য ছিল, এই রান নিয়ে যেন জিততে পারি। বাইরে থেকে অনেক কিছু মনে হয় কিন্তু ভেতরে অন্যরকম।’
বিশ্বকাপ ময়দানে যেমন বিতর্ক বাংলাদেশ দল নিয়ে। তেমনি বাইরেও কম নয়। ক্রিকেটার, বোর্ড, কোচ ছাড়িয়ে কোন্দলের প্রভাব পড়েছে তাদের পরিবারেও। গতকাল সাকিব আল হাসানের স্ত্রী নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে যে ভাষা তাতে কটাক্ষ করা হয়েছে তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে। পরে অবশ্য সেটি তিনি সংশোধনও করেছেন। ততক্ষণে দেশের ক্রিকেট ভক্তদের বুঝতে বাকি নেই কোন্দলটা আর এখন শুধু ক্রিকেটারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এমন অবস্থায় প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে কতটা মনোবল নিয়ে মোকাবিলা করতে পারবে ক্যারিবীয়দের। তবে নাসুম আহমেদ মনে করেন বাইরের কোনো কিছুই তাদের ওপর প্রভাব ফেলছে না। তারা এসব নিয়ে ভাবছেও না। তিনি বলেন, ‘আসলে বাইরে কী হচ্ছে না হচ্ছে এসব নিয়ে ভাবছি না। পারফর্ম কীভাবে করবো এটা নিয়েই ভাবছি। বাইরে কী হচ্ছে এটা নিয়ে এত কথা বলছি না। ক্লান্তি বলতে একদিন পরপর খেলা তাও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট, তেমন একটা ধকল যাচ্ছে না। জিততে পারছি না, এজন্য একটু ইয়ে লাগছে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও টানা দুই হার। এই আসরে দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের অবস্থা টাইগারদের চেয়ে খারাপ। ২০১২ শ্রীলঙ্কায় আর সর্বশেষ ২০১৬ তে ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা দলটি যেকোনো মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তা সবারই জানা। শুধু কী তাই দলটির বেশির ভাগ ক্রিকেটারই বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন হিসেবে বিবেচিত হন। এমন একটি দলের বিপক্ষে লড়াই যে খুব একটা সহজ তা নয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এই মঞ্চে ২০০৭ আসরে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় দেখাতে ২০১৪তে নিজেদের মাটিতে টাইগাররা হেরে যায়। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১২ বারের দেখায় ৫ জয় টাইগারদের। পরিসংখ্যান বলছে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে অনেকটাই সমানে সমানে লড়াই করেছে টাইগাররা। আজ যদি সব ভুলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামে তাহলে জয় অসম্ভব নয়।
বাংলাদেশে বহুবার খেলে গেছে ক্যারিবীয়রা। ক্রিস গেইল থেকে শুরু করে আন্দ্রে রাসেলরা ভালো করেই চেনে টাইগারদের। এই দলের আরেক সদস্য নিকোলাস পুরান তো বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ছাড়াও লম্বা সময় বিপিএলে খেলে টাইগারদের শক্তি দুর্বলতা সবই জানেন। যে কারণে পুরান ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমি অনেক সময় কাটিয়েছি। শুধু আমিই নই, আমাদের দলের আরও অনেকেই। আমাদের খুব ভালো বন্ধুত্ব আছে, ওদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক। ওদের ভালোভাবে জানি। ওদের কাছ থেকে শিখিও অনেক, বিশেষ করে বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলা নিয়ে।’
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইকেট আর কন্ডিশন এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের জন্য অনেকটাই অচেনা। দুই দলই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। সব শেষ শারজাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭১ রান করে বাংলাদেশ দল হেরেছে ৫ উইকেটে। স্পিনারদের যে সাফল্য আসার কথা ছিল সেটি খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। আবুধাবিতেও স্পিনাররা কোনো সুবিধা আদায় করতে পারেনি উইকেট থেকে। এ বিষয়ে নাসুম বলেন, ‘উইকেট ওরকম (বাংলাদেশের মতো) না। স্পিনাররা টার্ন পাচ্ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি ভালো করার। আমরা ঐ চেষ্টায়ই ছিলাম, যেন এই রান নিয়েই লড়াই করতে পারি। হয়নি।’
তবে ঘুরে ফিরেই প্রশ্ন কেন পারলো না বাংলাদেশ! তবে কি আরব আমিরাতের গরমেই কাবু টাইগাররা? নাসুম অবশ্য তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘আসলে গরমের জন্য না। আমরা তো চেষ্টা করছি ভাই। বারবার একই প্রশ্ন করছেন আমিও তো এক উত্তরই দিচ্ছি। আরও তিনটা ম্যাচ আছে, একটা ম্যাচ ক্লিক করলে বাকি দুটি ম্যাচও ক্লিক করতে পারবো। একটা ম্যাচ জিতলে পরের ম্যাচে আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশে যে ম্যাচগুলো জিতেছিলাম, আত্মবিশ্বাস ভালো ছিল। ওমানে প্রথম ম্যাচ হারলেও পরের দুই ম্যাচে ভালো ক্রিকেট খেলে সুপার টুয়েলভে এসেছি। সবার তো চেষ্টা থাকে ভালো কিছু করার, হচ্ছে না এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, প্রত্যেক ম্যাচেই চেষ্টা থাকে একটা জয় যেন পেতে পারি। একটা ব্যাটার বা বোলার পারফর্ম করলে জেতার সুযোগ থাকে। একটা কথা আমি বারবার বলছি, আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের দ্বারা হচ্ছে না।’
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status