দেশ বিদেশ

সঞ্চয়পত্রে ব্যাংকের আয়েও হাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার, ৮:৫০ অপরাহ্ন

এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ব্যাংকের আয়ে হাত বসালো সরকার। ব্যাংকগুলো আগে ১০০ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করলে ৫০ পয়সা কমিশন পেতো। এখন সেটি কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ৫ পয়সা। এছাড়াও একটি নিবন্ধনের বিপরীতে যত টাকার সঞ্চয়পত্রই বিক্রি করা হোক না কেন, ব্যাংকের প্রাপ্য কমিশন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে। এর আগে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপরে নতুন কমিশন হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর কমিশনের হার কমানোর ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হচ্ছে- পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব। ওই প্রজ্ঞাপনে আরও জানানো হয়, ডাকঘর ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এতদিন যে হারে কমিশন পেয়ে আসছিল, তার চেয়ে ৯ গুণ কমিয়েছে সরকার। অর্থাৎ ২০০৪ সাল থেকে কমিশনের হার ছিল দশমিক ৫০ শতাংশ। তা কমিয়ে নতুন হার করা হয়েছে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
ডাকঘরকে কমিশন দেয়া হলেও ডাকঘর যেহেতু সরকারি কোষাগারেই করবহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) হিসাবে তা জমা দেয়। ফলে প্রজ্ঞাপনটি মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্যই প্রযোজ্য এবং এই কমিশন হারের সঙ্গে গ্রাহকদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে। তবে সঞ্চয় অধিদপ্তর নিজস্ব এই আর্থিক পণ্য বিক্রির বিপরীতে কোনো কমিশন পায় না। কারণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করাই তার কাজ। আর বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কমিশন নেয় না। অবশ্য যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তার সামান্য অংশই বিক্রি করে সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘরই বিক্রি করে অন্তত ৭০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র। গত ২১শে সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মধ্যবিত্তের কপালে। কারণ, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভর করে সংসার চালান অনেকে। এ সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমানে তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ হলেও সেটি ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। যাদের বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকার বেশি, তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ৯ শতাংশ হারে। অবসরভোগীদের জন্য নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে এতদিন ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যেত। এখন এই সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকার বেশি তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে এই হার হবে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
সরকার বলছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিতে গিয়ে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এতে অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদদেরও অনেকে সঞ্চয় কর্মসূচিতে অতিমাত্রায় বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি রোধ করার তাগিদ দিয়েছেন। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন সিদ্ধান্তে মধ্যবিত্ত বিশেষ করে অবসরভোগীদের আয় কমে গেলেও দেশের সুষ্ঠু অর্থনীতি বজায় রাখার স্বার্থে মুনাফা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status