শেষের পাতা

এমসি কলেজে ধর্ষণ

এক বছরেও শুরু হয়নি বিচার

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, শনিবার, ৮:২০ অপরাহ্ন

এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনার বিচার এক বছরেও শুরু হয়নি। বাদীপক্ষের দাবি; দুই মামলা একসঙ্গে একই আদালতে চলবে। হাইকোর্টেরও একই নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে সিলেট থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে দুই মামলা একসঙ্গে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, অতিমারি করোনার কারণে গত এক বছর নিয়মিতভাবে চালানো যায়নি কার্যক্রমও। সিলেটের এমসি কলেজের শতবর্ষী ছাত্রাবাসে গত বছরের ২৫শে সেপ্টেম্বর বেড়াতে যাওয়া স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছিল ৮ ছাত্রলীগ কর্মী। এ ঘটনায় সিলেটজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে র‌্যাব ও সিলেট জেলা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ দিনের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর ৮ আসামি সাইফুর রহমান, শাহ মো মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান মাসুম, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিজবাউল ইসলাম রাজন আদালতে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। ঘটনার পর পুলিশ গণধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রআইনে চার্জশিট দাখিল করে। তবে, গণধর্ষণ ও চাঁদাবাজি ঘটনার মামলার বাদী নির্যাতিতা মহিলার স্বামী দক্ষিণ সুরমার মাইদুল ইসলাম। চার্জশিট দাখিলের পর গণধর্ষণ মামলাটি বিচারের জন্য সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও চাঁদাবাজির মামলাটি সিলেট মহানগর জজ আদালতে পাঠানো হয়। এ নিয়ে আপত্তি তোলেন বাদীপক্ষ। তাদের দাবি ছিল; এ দুটি মামলা একই আদালতে চালু করার। সিলেটের আদালতে এই দাবি নাকচ হওয়ার পর তারা উচ্চ আদালতে যান। এরপর উচ্চ আদালতও দুই মামলার বিচার একই আদালতে শুরু করার নির্দেশ দেন। এদিকে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর সিলেটের আদালতে চলমান এ দুটি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের উদ্যোগী হয় এ সংক্রান্ত কমিটি। ওই কমিটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি মামলার বিচার একই আদালতে চালু করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে পত্র পাঠায়। মামলার বাদীপক্ষে আইনজীবী এডভোকেট শহিদুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ এখনো জানি না। আগামী ১৩ই অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তবে- সিলেটের নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল হোক কিংবা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল হোক- যে আদালতে বিচার শুরু হবে দুই মামলার বিচার একসঙ্গে শুরু হতে হবে। আইনও সেটি বলে। তিনি বলেন, করোনার কারণে লকডাউনও ছিল। এ কারণে মামলা বিচার কাজ শুরু হতে সময় লেগেছে। গত বছরের ২৫শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমার মাইদুল ইসলাম তার ১৯ বছর বয়সী নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে যান এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে। সন্ধ্যার পর মুহূর্তে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তারা থামেন। এ সময় কয়েক যুবক ওই স্বামী ও তার স্ত্রীকে ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ তাদেরকে জোরপূর্বক জিম্মি করে কলেজের ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এরপর স্বামীকে আটকে রেখে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ৫ম তলা বিল্ডিং এর সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই গৃহবধূকে একে একে ধর্ষণ করে আট নরপশু। তারা দম্পতির সঙ্গে থাকা টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুলও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চাঁদার দাবিতে আটকে রাখে তাদের প্রাইভেটকারও। ঘটনার রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে শাহ্‌পরাণ থানায় মামলা করেন। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে ৬ জন ছাড়াও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও দুই জনকে গ্রেপ্তার করে। গত বছরের ৩রা ডিসেম্বর সাইফুর, রনি, তারেক, অর্জুন, রবিউল, মাসুম, আইনুল ও রাজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ্‌পরাণ থানার ওসি তদন্ত ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ঘটনার ২ মাস ৮ দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। আসামির মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ্‌ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক ও অর্জুন লস্কর, মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ১৯ বছর বয়সী ওই নববধূকে গণধর্ষণ করে। রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ধর্ষণে সহযোগিতা করে। এদিকে, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ ও হোস্টেল সুপার জীবন কৃষ্ণ আচার্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২রা জুন দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন উচ্চ আদালত। আদেশে বলা হয়, ‘ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ওই কলেজের অধ্যক্ষও কোনোভাবে ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।’ আইন সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। ঘটনার পর এমসি কলেজের ছাত্র সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল ইসলামকে কলেজ কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এই ৪ জনের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিল করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status