বাংলারজমিন

সংস্কারের অভাবে আশ্রয়ণের ঘর ছাড়ছে মানুষ

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৮:৫২ অপরাহ্ন

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে রসুলপুর ইউনিয়নের কাজলা আশ্রয়ণ প্রকল্পটি অন্যতম। ২০০১ সালে ভূমিহীনদের জন্য তৈরি করেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় রসুলপুর ইউনিয়নে ৫টি ব্যারাকে ৫০টি পরিবারেরর মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলে। এভাবে গোটা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার স্থায়ী জমি ও ঘর পায়। এরপর কেটে গেছে প্রায় ২০টি বছর। এই ২০ বছরে ক্ষমতার অনেক পালা বদল হয়েছে। তাদের ঘরগুলোতে এখন আর বসবাসের পরিবেশ নেই। দিনের আলোয় খুপড়ি ঘরের চাল দিয়ে যেমন সূর্যের আলোয় থাকা যায় না, তেমনি রাতে ঘরে শুইলে আকাশ দেখা যায়। বৃষ্টি এলে তো কোনো কথাই নেই। দলে দলে মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
সরজমিন পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে পাওয়া গেছে মাত্র ৯টি পরিবার। বাকি ৪১টি পরিবারই আশ্রয়ণ ছেড়ে চলে গেছে। আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্মাণের পর সংস্কার না করায় ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় আশ্রয়ণ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তারা বলছেন, ঘাটাইলে নতুন করে ২৭৬টি পরিবার পাকা ঘরসহ জায়গা বরাদ্দ পেলেও আমাদের ২০ বছরের পুরনো আধা পাকা টিনের ঘরটি সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
শুধু কাজলা আশ্রয়ণ নয়, উপজেলার সানবান্দা, পাঁচটিকরি, দেওপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশ্রিত পরিবারগুলোর দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। মরিচা ধরে টিনের চাল, বেড়া সবই ভেঙে গেছে, নাই কোনো টিউবওয়েল ও পায়খানা। সামান্য বৃষ্টি হলে ঘরের চালে বৃষ্টি পড়ার আগেই মেঝে ভিজে যায়। বাধ্য হয়ে পলিথিন, কাঁথার ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির পানি ফেরাতে হয়। আশ্রয়ণের বাসিন্দা একাব্বর হোসেন জানান, প্রথমে আশ্রয়ণে ৫০টি পরিবারই ছিল। বর্তমানে আমরা মাত্র ৯টি পরিবার রয়েছি। বাকি ৪১ পরিবারই চলে গেছে। ঘরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এবং ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে যাওয়ায় থাকার পরিবেশ না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা আশ্রয়ণ ছেড়েছে। শতবর্ষী ছফর আলী বলেন, ‘বিপদে আছি, এহানে মানুষ থাহার কোনো জো নাই, যাবার কোনো জায়গা নাই, তাই এহানে পইড়া আছি।’ অপর বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন জানান, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সংস্কারের জন্য বারবার আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। রীনা খাতুন বলেন, এ আশ্রয়ণের চার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নাই। তাই ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আশ্রয়ণের বাসিন্দা শিউলি (৮), সাদিয়া (৭), ছাহাদ (৩), আমির হামজা (৩), নাহিদ (৪) ও সাজ্জাদের (৬) মতো শিশুদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এদিকে উপজেলার লখিন্দর ইউনিয়নের সানবান্দা এলাকায় ছয়টি ব্যারাকের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে।
এটি স্থাপন করা হয়েছে ২০০৫ সালে। এখানে থাকার কথা ৬০ পরিবারের। বর্তমানে আছে ২৬ পরিবার। একই অবস্থা উপজেলার পাঁচটিকরি দেওপাড়া আশ্রয়ণের। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, ২০১৯ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর উপজেলার ৪টি আশ্রয়ণ প্রকল্প সংস্কার ও মেরামতের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৭৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এ বিষয়ে এখনো কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেন বলেন, আমি উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি, তাই এ বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নই। আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে এবং আগের নথিগুলো দেখে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status