এক্সক্লুসিভ

নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি

লিবিয়ায় বন্দি মাদারীপুরের ২৪ যুবক

অলিউল আহসান কাজল, মাদারীপুর থেকে

৯ মে ২০২১, রবিবার, ৮:১২ অপরাহ্ন

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের ৪ যুবকসহ মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকার ২৪ যুবক লিবিয়ার মাফিয়াদের কাছে বন্দি হয়েছে। এইসব যুবককে শারীরিক নির্যাতন করে সেই ভিডিও পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ একজনকে আটক করেছে।

ভুক্তভোগীদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে চিহ্নিত করে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের দালালি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। দালালচক্র বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে দিনের পর দিন। অনেককে জীবন দিতে হচ্ছে অথৈ সমুদ্রে কিংবা মাফিয়াদের হাতে।

গত সোমবার (৩রা মে) থেকে লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটক রয়েছে মাদারীপুরের ২৪ জন যুবক। মাফিয়ারা নির্যাতন করে সে সব ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুলাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামের এরশাদ হোসেন জনি নামে এক যুবককে লিবিয়ার একটি ঘরে বন্দি করে শারীরিক নির্যাতন করে টাকা দাওবী করছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, এই গ্রামেরই ৪ যুবকসহ মাদারীপুরের ২৪জনকে বন্দি করে নির্যাতন করা হচ্ছে টাকার জন্য। স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার চাছার গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ খান ইউছুব এলাকার খুব পরিচিত দালাল। ৪/৫ বছর যাবৎ তিনি মানব পাচারের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। তার মাধ্যমে ৩শত যুবক লিবিয়ার পথে পাড়ি জমিয়েছেন। যার বেশির ভাগ সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালি  পৌঁছেছে। এ সব লোকজন পাঠাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। জাহিদ খানের কাজ হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তাদের সংগ্রহ করা। প্রত্যেকের সাথে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা চুক্তি হয়। রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করেছেন লিবিয়া। সেখান থেকে অবৈধ পথে ইতালী। জাহিদ খান এর মাধ্যমে মাদারীপুরের যে সকল লোকজন লিবিয়া গেছেন তাদের অনেকে এখনো যেতে পারেনি। তারা লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ তার মাধ্যমে যাওয়া ২৪ জন যুবক লিবিয়ার মাফিয়ারা আটক করে টাকার জন্য নির্যাতন করছে। জাহিদ খান এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বুধবার এই জাহিদ খানকে ৫টি পাসপোর্টসহ আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। লিবিয়ায় বন্দি সদর উপজেলার ধুলাইল ইউনিয়নের ৪ যুবক। এরা হচ্ছে- এরশাদ হোসেন জনি মিয়া ও হিফজু হাওলাদার। তাদের ২ জনের বাড়ি চাছার গ্রামে। এছাড়াও রয়েছেন মো.আসাদুল খান এবং মো. জাহিদুল ইসলাম। তাদের বাড়ি ধুরাইল ইউনিয়ন সরদারকান্দি গ্রামে। বাকি ২০ জনের বাড়ি মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। লিবিয়ার মাফিয়ারা বন্দিদের নির্যাতনের সেই ভিডিও তাদের পরিবারের কাছে পাঠায়। টাকা না দিলে বন্দিদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এতে পরিবারের লোকাজন আতঙ্কে রয়েছে।

মাফিয়ার কাছে আটক হিফজু হাওলাদারের বাবা হাবু হাওলাদার বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে জাহিদ খান ইউছুফ-এর মাধ্যমে গত দু’মাস আগে লিবিয়া পাঠাই। তার সঙ্গে আমার ৮ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। ২ লাখ টাকা আমি ইতিমধ্যে তার কাছে দিয়েছি। বাকি টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২দিন ধরে আমার ছেলেসহ মোট ২৪ জন লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটক রয়েছে। তাদের নির্যাতন করে সেই ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি করছে। আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা কোথায় পাবো? আমি আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় দেখতে চাই।’ মাদারীপুর সদর থানার এসআই মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মানবপাচারের অভিযোগ জাহিদ খানকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে ৫টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতে প্রেরণ করা হবে।’ মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। একজনকে আটক করা হয়েছে।’
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status