শেষের পাতা
পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যবিধিতে আগ্রহ কম রোহিঙ্গাদের
রুদ্র মিজান, উখিয়া, কক্সবাজার থেকে ফিরে
২২ মার্চ ২০২১, সোমবার, ৯:২৩ অপরাহ্ন
দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় তাদের। উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা সড়ক। এর মধ্যেই ঘনবসতি। বিশাল এলাকাজুড়ে তাদের বসবাস। সেখানেই দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের দুর্গম পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৩৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (প্রাইমারী হেলথ সেন্টার) ও ৯৭টি হেলথ পোস্ট। প্রসূতি থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সেবাই দেয়া হচ্ছে এসব কেন্দ্রে। সরজমিন ‘ওব্যাট-প্রান্তিক হেলথ পোস্ট’ এ দেখা গেছে দিনভর সেখানে শত-শত রোগী ভিড় করছেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে। এই হেলথ পোস্টে মিলছে ডেন্টাল সেবাও।
উখিয়ার কুতুপালং’র এই শরণার্র্থী শিবিরের হেল্থ পোস্টে গিয়ে দেখা গেছে, করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেখানে। পাহাড়ের উপরে বাঁশ-বেতে তৈরি বিশাল ঘর। অভ্যর্থনা কক্ষ, জরুরি বিভাগ, বহিঃবিভাগ, দন্তঃবিভাগ, প্রসূতিসেবা, ফার্মেসি ও ল্যাবরেটরি সার্ভিস। রোগীরাও মাস্ক পরে সেবা নিচ্ছেন। কেউ কেউ ভুলে মাস্ক নিয়ে আসেননি। হেলথ পোস্ট কর্তৃপক্ষ তাদের মাস্ক উপহার দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। শরণার্থী শিবিরের আনোয়ারা জানান, শিশুকে নিয়ে হেলথ পোস্টে গিয়েছিলেন। জ্বরে আক্রান্ত শিশু। ডাক্তার দেখিয়ে সেখান থেকে বিনামূল্যে ওষুধ নিয়ে ফিরেছেন তিনি।
এখানে মিলছে দন্ত সেবাও। দুইজন বিডিএস ডাক্তার দিচ্ছেন এই সেবা। ডা. সঞ্জীব ভৌমিক জানান, এখানে দাঁতের সব ধরনের চিকিৎসা সেবাই দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত অত্যাধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে। এমনকি দাঁতের সৌন্দর্য বাড়াতে ডেন্টাল ফিলিং করা হয় এখানে। কিছুদিন আগেও এক রোহিঙ্গা নারীর ডেন্টাল ফিলিং করেছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ ওব্যাট হেল্পার’স এর অর্থায়নে পরিচালিত এই হেলথ পোস্টে এ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা দিতে কর্মরত আছেন তিনজন এমবিবিএস ডাক্তার, দুইজন বিডিএস ডাক্তার (ডেন্টাল) সহ ৩১ জন কর্মী।
ক্যাম্পের খুব কম পরিবারই গ্রহণ করছে পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি। এ বিষয়ে কথা বলতেও আগ্রহী না তারা। তাদের একজন ইউসুফ। সন্তানের সংখ্যা জিজ্ঞাসা করতেই জানান, ছয় জন। বিয়ে করছেন আট বছর হয়েছে। তবে সম্প্রতি স্ত্রীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন তিনি।
শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের চিকিৎসাসহ পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগরেই ভ্রান্ত ধারণা। এ বিষয়ে আগ্রহ কম তাদের। ডা. ফাহমিদা শাবনাম (জেনারেল ফিজিশিয়ান) জানান, জটিল রোগী না হলে প্রসূতিসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবাই এখানে দেয়া হচ্ছে। খুব কম ক্ষেত্রেই অন্যত্র রেফার করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গড়ে তিন শ’ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এই হেলথ পোস্টে। ইমারজেন্সি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা দিতে রয়েছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, এসপিরেটর মেশিন, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর, পেশেন্ট মনিটর, অটোক্লেভ মেশিনসহ নানা সরঞ্জাম।
রোগ নির্ণয়ের জন্য রয়েছে ব্লাড সুগার টেস্ট, প্রেগনেন্সি টেস্ট, সিফিলিস টেস্ট, ম্যালেরিয়া টেস্ট, এইচবিএস (এজি) টেস্ট, ইসিজি মেশিন ও আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন। সূত্রমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে ৮০টি এনজিও হেল্থ কাজ করছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই ‘ওব্যাট’র আর্থিক সহযোগিতায় ‘রিফুজি ক্রাইসিস ফাউন্ডেশন’ এবং ‘মেডগ্লোবাল’র কারিগরি সহায়তায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করতে কাজ করছে এসব সংস্থার কর্মীরা। বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৬শে মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউনের পর থেকেই ক্যাম্পগুলো জরুরি খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত প্রয়োজন ছাড়া কাউকে আসা-যাওয়া করতে দেয়া হচ্ছে না ক্যাম্পে।
এই অবস্থাতে জনসমাগম কমিয়ে নির্দিষ্ট প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। ওব্যাট হেল্পার্স ইউএসএ’র পরিচালক মাসুম মাহবুব জানান, নিরাপদ দূরত্ব বজায়, মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এমনকি বাল্যবিবাহের নেতিবাচক দিক উপস্থাপন করে সচেতন করা হচ্ছে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের। করোনাকালে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উখিয়ার কুতুপালং’র এই শরণার্র্থী শিবিরের হেল্থ পোস্টে গিয়ে দেখা গেছে, করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেখানে। পাহাড়ের উপরে বাঁশ-বেতে তৈরি বিশাল ঘর। অভ্যর্থনা কক্ষ, জরুরি বিভাগ, বহিঃবিভাগ, দন্তঃবিভাগ, প্রসূতিসেবা, ফার্মেসি ও ল্যাবরেটরি সার্ভিস। রোগীরাও মাস্ক পরে সেবা নিচ্ছেন। কেউ কেউ ভুলে মাস্ক নিয়ে আসেননি। হেলথ পোস্ট কর্তৃপক্ষ তাদের মাস্ক উপহার দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। শরণার্থী শিবিরের আনোয়ারা জানান, শিশুকে নিয়ে হেলথ পোস্টে গিয়েছিলেন। জ্বরে আক্রান্ত শিশু। ডাক্তার দেখিয়ে সেখান থেকে বিনামূল্যে ওষুধ নিয়ে ফিরেছেন তিনি।
এখানে মিলছে দন্ত সেবাও। দুইজন বিডিএস ডাক্তার দিচ্ছেন এই সেবা। ডা. সঞ্জীব ভৌমিক জানান, এখানে দাঁতের সব ধরনের চিকিৎসা সেবাই দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত অত্যাধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে। এমনকি দাঁতের সৌন্দর্য বাড়াতে ডেন্টাল ফিলিং করা হয় এখানে। কিছুদিন আগেও এক রোহিঙ্গা নারীর ডেন্টাল ফিলিং করেছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ ওব্যাট হেল্পার’স এর অর্থায়নে পরিচালিত এই হেলথ পোস্টে এ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা দিতে কর্মরত আছেন তিনজন এমবিবিএস ডাক্তার, দুইজন বিডিএস ডাক্তার (ডেন্টাল) সহ ৩১ জন কর্মী।
ক্যাম্পের খুব কম পরিবারই গ্রহণ করছে পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি। এ বিষয়ে কথা বলতেও আগ্রহী না তারা। তাদের একজন ইউসুফ। সন্তানের সংখ্যা জিজ্ঞাসা করতেই জানান, ছয় জন। বিয়ে করছেন আট বছর হয়েছে। তবে সম্প্রতি স্ত্রীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন তিনি।
শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের চিকিৎসাসহ পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগরেই ভ্রান্ত ধারণা। এ বিষয়ে আগ্রহ কম তাদের। ডা. ফাহমিদা শাবনাম (জেনারেল ফিজিশিয়ান) জানান, জটিল রোগী না হলে প্রসূতিসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবাই এখানে দেয়া হচ্ছে। খুব কম ক্ষেত্রেই অন্যত্র রেফার করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গড়ে তিন শ’ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এই হেলথ পোস্টে। ইমারজেন্সি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা দিতে রয়েছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, এসপিরেটর মেশিন, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর, পেশেন্ট মনিটর, অটোক্লেভ মেশিনসহ নানা সরঞ্জাম।
রোগ নির্ণয়ের জন্য রয়েছে ব্লাড সুগার টেস্ট, প্রেগনেন্সি টেস্ট, সিফিলিস টেস্ট, ম্যালেরিয়া টেস্ট, এইচবিএস (এজি) টেস্ট, ইসিজি মেশিন ও আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন। সূত্রমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে ৮০টি এনজিও হেল্থ কাজ করছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই ‘ওব্যাট’র আর্থিক সহযোগিতায় ‘রিফুজি ক্রাইসিস ফাউন্ডেশন’ এবং ‘মেডগ্লোবাল’র কারিগরি সহায়তায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করতে কাজ করছে এসব সংস্থার কর্মীরা। বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৬শে মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউনের পর থেকেই ক্যাম্পগুলো জরুরি খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত প্রয়োজন ছাড়া কাউকে আসা-যাওয়া করতে দেয়া হচ্ছে না ক্যাম্পে।
এই অবস্থাতে জনসমাগম কমিয়ে নির্দিষ্ট প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। ওব্যাট হেল্পার্স ইউএসএ’র পরিচালক মাসুম মাহবুব জানান, নিরাপদ দূরত্ব বজায়, মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এমনকি বাল্যবিবাহের নেতিবাচক দিক উপস্থাপন করে সচেতন করা হচ্ছে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের। করোনাকালে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।