শেষের পাতা

রুনা যেভাবে গড়ে তুলে চোর-ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট

শুভ্র দেব

২৮ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:২২ অপরাহ্ন

স্বামী সুমন মাদকাসক্ত। বিয়ে করেছে ৮টি। একাধিক নারীর সঙ্গে তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। মাদক, বিয়ে ও নারীর পেছনে তার অনেক টাকা খরচ হয়। চুরি-ছিনতাই করে একার পক্ষে সেই টাকার ব্যবস্থা করা সুমনের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। স্ত্রী রুনার সঙ্গে সুমন একই বাসায় থাকতো। ঘরে দুটি বাচ্চাও আছে। সুমন প্রতিনিয়ত রুনাকে নির্যাতন করতো। মাদকের টাকার জন্য চাপ দিতো। পরে বাধ্য হয়েই রুনা চুরি বিদ্যার কৌশল আয়ত্ত করে। তারপর বাসাবাড়ি, ব্যাচেলর মেসে চুরি শুরু করে। চুরি করা মোবাইল-ল্যাপটপ বিক্রি করে যা আয় হতো সেটি দিয়েই স্বামীর নেশার খরচ ও সংসার চালাতো। চুরি হওয়া এক মোবাইলের জিডির তদন্ত করতে গিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের অবৈধ মাদক উদ্ধার টিম রুনা ও তার তিন সহযোগী রুবেল, মনোয়ার ও আল আমিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর ডিবি জানতে পেরেছে রুনা তার তিন সহযোগীকে নিয়ে বড় ধরনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল।

ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রুনা ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে ৩০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। দামি-কমদামি সবধরনের মোবাইল চুরি করতো রুনা। আর সেগুলো রুবেল, মনোয়ার ও আল আমিনের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা বের করতো। মূলত রুনা এই তিনজনকে নিয়ে একটি ও তার স্বামী রাসেল নামের একজনকে নিয়ে আরেকটি সিন্ডিকেট করে। সুমনের চুরি-ছিনতাই করা মোবাইল তার সহযোগী রাসেল গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় চুরি ও ছিনতাই করা মোবাইল বিক্রি করতো। পলাতক থাকায় রাসেলকে এবং নিরাময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় সুমনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি ডিবি।

সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিম রামপুরা এলাকায় রুনা স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতো। সেখান থেকেই ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে চুরি করতো। বিশেষকরে যেসব মেসে ভোরবেলা বুয়া রান্না করে ওইসব বাসা টার্গেট করতো। সকাল বেলা ঘুমন্ত মেস মেম্বারদের রান্না করে বুয়া যখন চলে যেত ঠিক তখনই রুনা ওই বাসায় প্রবেশ করে মোবাইল ল্যাপটপ নিয়ে চলে যেত। এ ছাড়া যেসব বাসার নারীরা সকালবেলা সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যান ওই বাসায় প্রবেশ করতো। দরজা খোলা না থাকলে নকল চাবি ব্যবহার করে বাসায় প্রবেশ করতো। রুনা ও তার সহযোগীরা সাতরাস্তা, বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, রামপুরাসহ আরো কিছু এলাকার বাসাবাড়িতে চুরি করতো।

এদিকে ডিবি’র একই টিম আরো দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো- নবী ও সাঈদ। সম্পর্কে তারা চাচা- ভাতিজা। দুজন মিলে কাওরান বাজার এলাকায় একটি চক্র গড়ে তুলেছে। চক্রটি সোনারগাঁও মোড়, কাওরান বাজার, এফডিসিসহ আশেপাশের এলাকায় ছিনতাই করতো। বাস, রিকশার যাত্রীদের কাছ থেকে টান দিয়ে মোবাইল, ব্যাগ নিয়ে যেত। এ ছাড়া নির্জন রাস্তায় কাউকে পেলে ছুরি দেখিয়ে সব ছিনিয়ে নিয়ে যেত।  

ডিবি’র মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সবাই পেশাদার চোর ও ছিনতাইকারী। রুনা ছোটবেলায় তার মা-বাবাকে হারায়।  এরপর নরসিংদীর এক দম্পতি তাকে লালনপালন করে। মা-বাবাহীন রোজিনাকে ওই দম্পতি সুমনের কাছে বিয়ে দেন। সুমন ছিল চোর ও মাদকাসক্ত। এ ছাড়াও একাধিক বিয়ে করেছে। আর বিয়ের পরে মাদক ও নারীর পেছনে খরচ করার টাকার জন্য রুনাকে মারধর করতো। তবে স্বামী ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় সে চুরি করা শুরু করে। গত ২০শে জানুয়ারি একটি চুরি করে রুনা। এ ঘটনায় হওয়া একটি জিডির তদন্ত করতে গিয়েই তার নাম আসে। তিনি বলেন, কাওরান বাজারের চক্রটি যানজটে থেমে থাকা বাসের যাত্রীদের মোবাইল ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যেত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status