প্রথম পাতা

ট্রাম্প বড় একা

মানবজমিন ডেস্ক

১৫ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ৯:৫৩ অপরাহ্ন

বিদায় বেলায় বড় একা ডনাল্ড ট্রাম্প। এই তো সেদিন ছিলেন দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ। অথচ আজ তার পাশে যেন কেউই নেই। প্রেসিডেন্সির পুরোটা সময়ই ছিলেন বিতর্কে। হয়তো ভালোও বাসতেন আলোচনায় থাকতে। ঘটিয়েছেন অদ্ভুত সব ঘটনা। কিন্তু ভোটের ফল মানতে না চেয়ে ভেঙে দেন অতীতের সব রেকর্ড। জনরায় মানতে রীতিমতো অস্বীকৃতি জানান তিনি। একের পর এক জন্ম    দেন খবরের। ক্লান্তিহীন চেষ্টা তার। কিন্তু মার্কিন গণতন্ত্রের ঐতিহ্যবাহী সব প্রতিষ্ঠান রুখে দাঁড়ায় তার বিরুদ্ধে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দেন, অন্যায় নির্দেশ মানা হবে না। মিডিয়াও জানান দেয়, প্রেসিডেন্ট সত্য বলছেন না। উগ্র সমর্থকদের তবুও মন্ত্রণা দিয়ে যান ট্রাম্প। যার পরিণতিতে হামলা হয় মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল ভবনে। যা আসলে ট্রাম্পের জন্য চূড়ান্ত ভাগ্য বিপর্যয় ডেকে আনে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। নজিরবিহীনভাবে মার্কিন জেনারেলরাও এ হামলার নিন্দা জানান। যে সামাজিক মাধ্যমের ওপর ভর করে ট্রাম্প এতোদিন প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন সে টুইটার, ফেসবুকও সরে দাঁড়ায় তার পাশ থেকে। এসব মাধ্যমে তিনি এখন নিষিদ্ধ! আর সর্বশেষ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়ে রেকর্ড গড়লেন ট্রাম্প। এমনকি দলের ১০ সদস্যও ভোট দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে। ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুইবার অভিশংসনের মুখে পড়লেন তিনি। এমনিতে ২০শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ছাড়ছেন ট্রাম্প। অভিশংসন প্রশ্নে এর আগে সিনেটে ভোটাভুটির সম্ভাবনা নেই। কিন্তু প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সিনেটে যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে প্রেসিডেন্ট পদে কখনো আর নির্বাচন করতে পারবেন না তিনি।  সে যাই হোক বিদায়টাও ভালো হচ্ছে না ডনাল্ড ট্রাম্পের। সবহারা, বিষণ্ন এক বাসিন্দাকে বিদায় জানানোর অপেক্ষায় রয়েছে সাদা বাড়ি।
এদিকে, শেষ পর্যন্ত ক্যাপিটল ভবনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। অভিশংসিত হওয়ার পর এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা ও ভাঙচুরের একেবারেই কোনো স্থান নেই। আমাদের আন্দোলনেও এর কোনো স্থান নেই। সমর্থকদের সতর্কও করেছেন তিনি। বলেছেন, সামনের বিক্ষোভ কর্মসূচিগুলো শান্তিপূর্ণ হওয়া উচিত।  
অভিশংসিত ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের প্রতিনিধি হেলাল উদ্দীন রানা জানান, ক্যাপিটল ভবনে হামলায় উস্কানির জন্য অভিশংসিত হলেন ট্রাম্প। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান পার্টির ১০ জন সদস্যও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেন। মোট ২৩২ ভোট পেয়ে প্রতিনিধি পরিষদে এই প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১৯৭টি। এখন এই প্রস্তাবটি পাঠানো হবে সিনেটে। সেখানে ট্রায়াল বা শুনানি হবে। যদি সেখানে তিনি অভিযুক্ত হন, তাহলে জীবনে দ্বিতীয়বার সরকারি পদ বা প্রেসিডেন্টের পদে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে তার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, তিনি আর কোনোদিন প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। তবে যেহেতু তার ক্ষমতার মেয়াদ আর মাত্র এক সপ্তাহ আছে, তাই অভিযুক্ত হওয়ার কারণে হোয়াইট হাউস থেকে বহিষ্কারের কোনো ঝুঁকি নেই। কারণ, সিনেট অধিবেশনের জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। এ অবস্থায় ট্রাম্পকে ২০শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে হচ্ছে স্বাভাবিক নিয়মে। অন্যদিকে ডেমোক্রেট দল থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে উঠবে হোয়াইট হাউসের চাবি। এ খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ইউক্রেন কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় প্রথমবার ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হয়েছিল।
অভিশংসন নিয়ে প্রতিনিধি পরিষদে আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনপ্রণেতারা বলেন, এখন রাজনীতি করার সময় নয়। আজ আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন। আমেরিকার গণতন্ত্রের ওপর নগ্ন হামলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। ট্রাম্প দেশের গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছেন। ক্যাপিটল হিল হামলা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
এদিকে, মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটনে এ উপলক্ষে নেয়া হয় নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওয়াশিংটনকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয় সবদিক থেকে। হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড, সিক্রেট সার্ভিস সদস্য, এফবিআই এজেন্ট, বিভিন্ন পুলিশ বাহিনীর সশস্ত্র লোকজন ঘিরে আছে ক্যাপিটল হিলসহ গোটা ওয়াশিংটন ডিসি। রাস্তায় রাস্তায় দেয়া হয়েছে ব্যারিকেড। সড়ক মহাসড়কে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। জায়গায় জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে মেটাল ডিটেক্টর বসিয়ে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাজধানীর সকল প্রবেশ পথ। ওয়াশিংটন এখন যেন এক ভুতুড়ে নগরী। সংবাদ সংস্থা সিএনএন ও এবিসি নিউজ জানায়, তাদের রিপোর্টার ও ক্রুদের স্থানে স্থানে পরিচয়পত্র দেখিয়ে তবেই নগরীতে ঢুকতে দেয়া হয়। সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পায়ে হেঁটেও লোকজনের চলাচল নেই। সাত ফুট উঁচু লোহার সীমানা প্রাচীর বসিয়ে চারদিক ঘিরে ফেলা হয়েছে ক্যাপিটল ভবন ও হোয়াইট হাউস। কয়েক ফুট দূরে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ন্যাশনাল গার্ড। ২০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে আরো ৮টি রাজ্য থেকে আনা বিভিন্ন চৌকস দল।
গত বুধবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সকল নগর পুলিশের প্রধানদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল কনফারেন্সে যোগ দেন এফবিআই’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ক্রিস্টোফার ওরেই এবং ইউএসসিআইএস পরিচালক ক্যান কুসিনেলি। ক্যাপিটল হিলের সন্ত্রাসী ঘটনায় দেশব্যাপী ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৭০টি। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। এমন অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি নাইন ইলেভেন পরবর্তী সময়েও। ট্রাম্পের উগ্রবাদী সমর্থকদের সশস্ত্র যেকোনো হামলা ঠেকাতে এমন নিরাপত্তা বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের পরও বলবৎ রাখা হতে পারে।
ট্রাম্পের বিপক্ষে তার নিজের রিপাবলিকান পার্টির যেসব কংগ্রেসের সদস্য অভিশংসনে ভোট দেন তারা হচ্ছেন- অ্যাডাম কিসিঙ্গার (ইলিনয়), লিজ চেনি (ওয়োমিং), জন কাটকো (নিউ ইয়র্ক), ফ্রেড আপটন ও পিটার মায়ার (মিশিগান), জেইম বিউটলার এবং ড্যান নিউহাউস (ওয়াশিংটন), অ্যান্টনি গঞ্জালেস (ওহাইয়ো), টম রাইস (সাউথ ক্যারোলাইনা) ও ডেভিড ভালাডো (ক্যালিফোর্নিয়া)।
এরপর কি ঘটবে?
ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে একটি রিপোর্ট করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
অভিশংসন প্রক্রিয়া কি শেষ?
না। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব এনে তাকে অভিশংসিত করেছে। এখন এই প্রস্তাব পাঠিয়ে দেয়া হবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। ট্রাম্প দোষী কি-না তা নির্ধারণ করতে সেখানে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। তারপর প্রস্তাবের ওপর ভোট হবে। যদি সিনেটের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন তাহলে তিনি অভিযুক্ত হবেন। সিনেটে মোট সদস্য সংখ্যা ১০০। যদি ভোটের দিন তারা সবাই উপস্থিত থাকেন, তাহলে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করতে হলে কমপক্ষে ১৭ জন রিপাবলিকানের ভোট প্রয়োজন হবে ডেমোক্রেটদের।
সিনেটে ট্রায়াল কখন শুরু হবে?
কালবিলম্ব না করে অভিশংসন প্রস্তাবের ট্রায়াল শুরুর জন্য ডেমোক্রেটদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাকলেন। তিনি বলেছেন, ছুটি শেষে সিনেট অধিবেশন বসবে ১৯শে জানুয়ারি। তার আগে এই ট্রায়াল শুরু করা যাবে না। এর অর্থ হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০শে জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়ার পর এই ট্রায়াল চলতে থাকবে সিনেটে। তবে সিনেটে এই ট্রায়াল শুরু হওয়ার আগে অবশ্যই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সিনেটের কাছে হস্তান্তর করতে হবে প্রতিনিধি পরিষদকে।
সিনেট ট্রায়ালে ট্রাম্প কি ব্যবস্থা নেবেন?
প্রতিনিধি পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে একটি মাত্র আর্টিকেলের ওপর ট্রাম্পকে অভিশংসন অনুমোদন দিয়েছে। সেটা হলো ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতায় উস্কানি’ দেয়া। ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা সৃষ্টির আগে ট্রাম্প তার হাজারো সমর্থকদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, সেদিকে জোর দেয়া হয়েছে এতে। তবে ট্রায়ালে ট্রাম্প এটা বলতে পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধীনে মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত আছে। তার অধীনে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি সমর্থকদের ‘ফাইট’ করার আহ্বান জানালেও এর আক্ষরিক অর্থ সহিংসতায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান নয়। গত বুধবার ট্রাম্প একটি ভিডিও টেপ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধি পরিষদে ভোটের পর। এতে তিনি গত সপ্তাহের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা এবং ভাঙচুরের কোনো স্থান নেই। আমাদের আন্দোলনেও এর কোনো স্থান নেই।
তাহলে কি একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করা যায়?
হ্যাঁ। এ বিষয়ে বিজ্ঞজনরা মনে করেন যে, ‘লেট ইম্পিচমেন্ট’ সংবিধানসম্মত। অর্থাৎ একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া চালানো যেতে পারে। এসব পণ্ডিতজন উল্লেখ করেন, অভিশংসন শুধু ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয় না। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট পদে বা সরকারি পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এর অর্থ হলো ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ত্যাগ করলেও তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর উপায় আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা হয়েছে, কেউ একজন অভিযুক্ত হয়ে শাস্তি পেলে তিনি সম্মানজনক কোনো পদ ধারণ ও তা উপভোগ করার ক্ষেত্রে অযোগ্য হয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা ও লাভজনক পদ থেকেও তিনি অযোগ্য হয়ে যান। এখন সিনেট প্রক্রিয়ায় ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করতে হাতেগোনা কয়েকজন সিনেটরের প্রয়োজন ডেমোক্রেটদের। এমন ভোট হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অভিযুক্ত হওয়ার পর। তবে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করতে তাকে অভিযুক্ত হতে হয় কি-না তা স্পষ্ট নয়।
এই প্রক্রিয়া কতোদিন স্থায়ী হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কীভাবে অভিশংসিত করতে হবে এ বিষয়ে সিনেটের নিজস্ব আইন আছে। বর্তমান আইনের অধীনে একটি ট্রায়াল দু’চার দিনের মধ্যে হতে হয়।  
অভিশংসন প্রতীকী, তবে অত্যাবশ্যক
সিম্বলিক। বাট নেসেসারি। অর্থাৎ ট্রাম্পকে অভিশংসিত করাটা প্রতীকী। কিন্তু এটা অত্যাবশ্যকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ঐতিহাসিকভাবে দ্বিতীয় দফায় অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে এমনটাই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন মার্কিনিরা। কেউ কেউ ট্রাম্পের পক্ষে বললেও বেশির ভাগই তার বিপক্ষে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, ট্রাম্প যা করেছেন তা অসাংবিধানিক। একদিকে কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদে এ নিয়ে গত বুধবার তীব্র বিতর্ক করেছেন সদস্যরা। অন্যদিকে এর বাইরে সাধারণ মানুষ এবং রাজনীতিকরা মন্তব্য করেছেন। তার মধ্যে আছেন ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমর্থক অ্যাটর্নি বেলিন্ডা নোয়া। তিনি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। তার মতে, দ্বিতীয় অভিশংসনের ওপর ভোটগ্রহণ অন্যায় এবং গত সপ্তাহে যা ঘটেছে তার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এটা হলো সত্যের অপলাপ। বেলিন্ডা বলেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই অভিশংসন অনাকাঙ্ক্ষিত। এর কোনো বৈধতা নেই। না আছে আইনগত ও সাংবিধানিক ভিত্তি। ট্রাম্প আইনগত সুবিধা পাননি। দেশের ওপর একটি কালো দাগ দেয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে রাজনৈতিক উদ্দেশে এই অভিশংসন করা হয়েছে। আমি শঙ্কিত এজন্য যে, আমাদের সংবিধান মৃত্যুশয্যায়। আশা করি মার্কিন জনগণ এর বিরুদ্ধে জেগে উঠবে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, একটি কমিউনিস্ট দেশে কি ঘটে, যেখানে মুক্তমত প্রকাশের কোনো অধিকার থাকে না। যারা আইন ভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হওয়া উচিত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা উচিত। কিন্তু কার মাথায় এমন চিন্তা এলো যে, আমাদের প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটল হিলে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য লোক পাঠাবেন? ট্রাম্পের র‌্যালি সব সময়ই শান্তিপূর্ণ। গত বুধবার তার সমাবেশে যেসব মানুষ যোগ দিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিলেন মধ্যবয়সী, বয়স্ক, শিশু ও নাতিপুতিরা। কিন্তু যেসব ব্যক্তিবিশেষ আইন লঙ্ঘন করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। কীভাবে কথা বলার জন্য একজনকে ক্রিমিনাল কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করা যেতে পারে আমার মাথায় তা আসে না। বেছে বেছে মানুষের ওপর আইন প্রয়োগ করার কোনো অর্থ হয় না।
তবে তার মতের পুরো বিরোধী মিনেসোটার ইন্ডিপেন্ডেন্ট মেলিসা দাঙ্গারান। তিনি একজন ফিলিপিনো বংশোদ্ভূত মার্কিনি। ছোটখাটো ব্যবসা পরিচালনা করেন। আছে দুটি সন্তান। তিনি বলেছেন, ডনাল্ড ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে আরো চারটি বছর যুক্তরাষ্ট্রের অতিক্রম করা সম্ভব ছিল না। মেলিসা বলেন, গত ৬ই জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে আচরণ প্রদর্শন করেছেন, তাতে নিঃসন্দেহে তিনি অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা-ই করেছেন তা অসাংবিধানিক। একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যা করবেন তা হতে হবে সংবিধানকে সমুন্নত রেখে। রিপাবলিকান দলের কংগ্রেসওম্যান লিজ চেনি বলেছেন, যদি এই প্রেসিডেন্ট না থাকতেন তাহলে গত সপ্তাহের ঘটনা ঘটতো না এবং লিজ চেনি ঠিকই বলেছেন। যদি ট্রাম্প নির্বাচনের ফল নিয়ে অব্যাহত লড়াই না করতেন, যদি তিনি নির্বাচনের ফলকে চুরি করা হয়েছে বলে যে মিথ্যা বার্তা বার বার ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন- তা যদি না করতেন, যদি তিনি ওইদিন ক্যাপিটল হিলের কাছে র‌্যালি না করতেন, যদি ‘উত্তেজিত করা’ নিয়ে কথা না বলতেন, তাহলে গত সপ্তাহের ঘটনা কখনোই ঘটতো না। এমনকি তিন মাস আগে, সব রকম মামলার আগে তিনি যা বলেছিলেন, তাতে তার ব্যবহারে আমি হতবাক হইনি। এর সবই আগেভাগে আন্দাজ করা গেছে। কারণ, এসবই আছে তার স্বভাবের মধ্যে। তাই যেসব রাজনীতিক বলছেন, তাকে অভিশংসিত করা হলে আমাদের মধ্যে বিভক্তি বাড়বে, আমি তেমনটা দেখছি না। এতে কোনো সাহায্য পাওয়া যাবে না। তবে আমি মনে করি না যে, এর ফলে সহিংসতা আরো খারাপের দিকে যাবে। এমন একটি বিবৃতি প্রয়োজন যাতে বলা হবে, সরকারের অন্য কোনো শাখাকে আক্রমণ করার অনুমোদন নেই প্রেসিডেন্টের। ট্রাম্পের কব্জা থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এটা হলো রিপাবলিকানদের সামনে একটি সুযোগ।
নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান সমর্থক ও আঞ্চলিক সমন্বয়ক গাব্রিয়েল মন্টালভো। তিনি ‘লাতিনো ফর ট্রাম্প’ ইস্যুতে তুখোড় বক্তা। ৬ই জানুয়ারির সহিংসতার নিন্দা জানান তিনি। বলেন, আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা উচিত। ওই র‌্যালিতে আমিও ছিলাম। কিন্তু ক্যাপিটল হিলের কাছে যাইনি। আমি চলে গিয়েছিলাম হোটেল রুমে। তবে দেখেছি, প্রেসিডেন্ট কথা বলছেন। তিনি ওই ভবনে ঝড়ো গতিতে প্রবেশ করতে বা কোনো ক্ষতি করতে কাউকে বলেছেন, এমনটা আমি শুনিনি। ফলে অভিশংসনের নামে যা করা হচ্ছে, তা হলো তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে না দেয়া। এসবই রাজনৈতিক। এর ফলে ডান ও বাম পক্ষের মধ্যে আরো বড় বিভক্তি সৃষ্টি হবে। আমার ভয় হয়, মানুষজন প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে। এবারই সর্বশেষ নয়। নির্বাচিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে অভিশংসনকে ব্যবহার করা হতে পারে। এটা প্রজাতন্ত্রের জন্য নয়, এটার ব্যবহার করা হতে পারে ক্ষমতাসীনকে সরিয়ে দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে, যার সঙ্গে তারা একমত হতে পারে না। সব সহিংসতারই সুষ্ঠু ও ন্যায্যভিত্তিতে নিন্দা জানাতে হবে। দিনটা ছিল খুবই বেদনার। তবু আমি বিশ্বাস করি না যে, এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। এটা কোনো অভ্যুত্থানও ছিল না। এটা বলা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, সহিংসতা কোনো উত্তর বা সমাধান হতে পারে না। ওই দিনটি হয়তো ভিন্ন কিছু ছিল। ৬ই জানুয়ারি রিপাবলিকান পার্টির জন্য কিছু একটা ব্যাপার। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কর্মকাণ্ড নতুন ভোটারদের অনুৎসাহিত করবে, যেসব ভোটারকে দলের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলেন ট্রাম্প এবং তার ঘাঁটি তৈরি করেছিলেন।
জর্জিয়ার ১৯ বছর বয়সী উইলিয়াম মোরালেস। তিনি আটলান্টায় মেক্সিকান বংশোদ্ভূত প্রথম প্রজন্মের মার্কিন কলেজছাত্র। গত চার বছর ধরে তিনি যা দেখছেন তাতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে ক্যাপিটল হিলে যা ঘটেছে, তার প্রেক্ষাপটেই প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হয়েছে। তার ভাষায়, আমি মনে করি ট্রাম্পকে অভিশংসন করা উচিত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শুধু একটি জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকিই নন, একই সঙ্গে তিনি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ও অন্যদের হুমকির বিষয়ে কোনো নিন্দা প্রকাশ করেন না। এর প্রেক্ষিতে এখন এটা হচ্ছে একটি প্রতীকী অভিশংসন। কারণ, তিনি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিদায় নিচ্ছেন। তার অভিশংসন প্রতীকী হলেও এটা অত্যাবশ্যক। একবার অভিশংসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তিনি এমন প্রেক্ষিত তৈরি করেছেন যে, একজন প্রেসিডেন্ট একাধিকবার অভিশংসনের মুখে পড়ছেন। গত সপ্তাহের ঘটনার বিষয়ে আমি যা করতে পারি তা হলো, বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া এবং পরিস্থিতি নিয়ে কৌতুক করা। কিন্তু বিষয়টি আমাকে গভীরভাবে বেদনাহত করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status