প্রথম পাতা

অর্থনীতিবিদদের মত

স্বাস্থ্যবিধি পালন না হলে বিপর্যয়ের দিকে যাবে অর্থনীতি

এমএম মাসুদ

৬ ডিসেম্বর ২০২০, রবিবার, ৯:২২ অপরাহ্ন

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রথম পর্যায়ের আক্রমণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেড়েছে বেকার ও দরিদ্রের সংখ্যা। এর মধ্যে আবারো শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এমতাবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে স্বাস্থ্যবিধি বা স্বাস্থ্যসুরক্ষা ভালোভাবে পালন করা না হলে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের দিকে যাবে বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। তারা জানিয়েছেন, মে, জুন, জুলাই ও আগস্টের চিত্র দেখে মনে হয়েছিল অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হওয়ার পর সব হিসাব-নিকাশ ওলটপালট করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে, সেটা আরো কঠোরভাবে মেনে চলা না হলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় অর্থনীতির চাকা আবার থেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে কয়েকজন শীর্ষ অর্থনীতিবিদ এসব মন্তব্য করেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব অর্থনীতি লণ্ডভণ্ড হতে পারে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)ও। সমপ্রতি জি-২০ গোষ্ঠীর দেশগুলোর ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে সংস্থাটি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান দেশগুলোতে যদি পণ্যের চাহিদা কমে যায়, সেক্ষেত্রে রপ্তানিতে ধস নামতে পারে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে লকডাউন শুরু হয়ে গেছে। সেসব দেশে রপ্তানি কমে যাবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের মধ্যেও সচেতনতা কমে গেছে। এতে হয়তো বাংলাদেশকেও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। কলকারখানা সাময়িক বন্ধ রাখা লাগতে পারে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে হয়তো লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তও নেয়া লাগতে পারে। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান কমে যাবে। দরিদ্রের হার বাড়বে। অর্থাৎ অর্থনীতিতে অবশ্যই স্থবিরতা দেখা দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই রপ্তানি আয় কমা শুরু হয়েছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমছে। করোনার প্রথম ধাক্কায় যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের অনেকেই কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। ছোট উদ্যোক্তারা ভালোভাবে দাঁড়াতে পারছে না। জনশক্তি রপ্তানি কমছে। ফলে আগামীতে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়তো চাঙ্গা নাও থাকতে পারে। তাই সার্বিকভাবে ভাবলে বলা যায়, সামনের দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতিতে নতুন ধাক্কা আসার সম্ভাবনা খুবই প্রবল।
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অর্থনীতি সচল রাখতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামীণ কৃষিকে কাজে লাগাতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া দেশের অগ্রধিকার খাতকে টার্গেট করে সরকারকে আগাতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংক্রমণ যাতে কম হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আনতে হবে। ঝুঁকির মাত্রা সীমিত রেখে যেভাবে অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখা যায় সেদিকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, রপ্তানিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সবচেয়ে বেশি। দেশের প্রধান রপ্তানির গন্তব্যস্থল হচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো। কিন্তু এসব দেশে করোনার প্রকোপ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। তারা আবার লকডাউনে গেছে। এতে শ্লথ হয়ে গেছে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ কারণে তাদের চাহিদা কমে গেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। ড. নাজনীন আরো বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়া মানে হলো উৎপাদন কমে যাওয়া। কর্মসংস্থান কমে যাওয়া। এতে এক ধরনের অর্থনৈতিক স্থবিরতা দেখা দেবে। ইতিমধ্যে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরাও সে ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই এবার সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে চাকরি হারাতে হয়েছে হাজার হাজার লোককে। অনেকেই এখনো কর্মসংস্থান ফিরে পাননি। এখন আবার সেই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো আরেকটি ধাক্কা আসছে। এটা অবশ্যই কৌশলে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে নানা কারণে অর্থনীতি থমকে যাচ্ছে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ কমে যাচ্ছে। তাদের আয় রোজগার হুমকির মুখে রয়েছে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status