বাংলারজমিন

মাগুরায় হত্যাকাণ্ডের জেরে ২ গ্রামে চলছে বাড়িঘর ভাঙচুর

মাগুরা প্রতিনিধি

২৪ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:০৬ পূর্বাহ্ন

মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নে সামাজিক বিরোধ নিয়ে দু’টি হত্যাকাণ্ডের জের ধরে নন্দলালপুর ও ছাচানী গ্রামে অব্যাহতভাবে চলছে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা। লুটপাটকারিরা প্রতিপক্ষের বাড়িতে থাকা সব মালামাল, গরু, ছাগল, গবাদীপশু লুটপাটের পাশাপাশি শত-শত ফলদ বৃক্ষ পর্যন্ত কেটে ফেলছে। হামলা-মামলার ভয়ে পুরুষেরা গ্রাম ছেড়েছে। বাড়ির নারী সদস্যদের দিন কাটছে নিরাপত্তাহীনতায়। সব মিলিয়ে গ্রাম দু’টিতে বিরাজ করছে চরম  আতঙ্ক। তবে পুলিশ বলছে, গ্রাম দু’টিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।
সদর উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও সামাজিক দলাদলি নিয়ে শরিফুল মোল্লা ও জাকির হোসেন লিটনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। শরিফুল ও লিটন দু’জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ বিরোধের জের ধরে গত ১৬ই নভেম্বর রাতে প্রতিপক্ষ শরিফুল মোল্লার লোকজন কুপিয়ে হত্যা করে জাকির হোসেন লিটনকে। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে হামলা-মামলার ভয়ে শরিফুল মোল্লার সমর্থকেরা গ্রাম ছেড়েছে। এ সুযোগে প্রতিপক্ষের সমর্থকরা এ গ্রামের  ২৫ থেকে ৩০টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। বাড়ির সকল মালামালের পাশাপাশি লুট হয়ে গেছে গরু, ছাগল পর্যন্ত। এখনো ভাঙচুর, লুটপাট অব্যাহত থাকায় বাড়ির নারী ও শিশুদের দিন কাটছে চরম আতঙ্কে।   
নন্দলালপুর গ্রামের সঞ্জু ও রঞ্জু রহমানের মা আমেনা বেগম বলেন, তারা সামাজিক দলের সঙ্গে থাকলেও তার ছেলেরা মারামারি খুনোখুনির সঙ্গে জড়িত নয়। তার পরেও লিটন খুনের পর ভয়, হামলা, মামলার ফলে বাড়ি ছেড়েছে। এ সুযোগে প্রতিপক্ষ দলের লোকেরা দিনে দুপুরে তার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। তার গোয়াল থেকে ৯টি গরু ও ১০টি ছাগল লুট হয়েছে। তবে নিহত লিটনের এক চাচাতো ভাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ করলেও শরিফুল এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। এর আগে শরিফুল তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে লিটনের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়েছে। এলাকার অনেক মানুষ নানাভাবে তার অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার।
এদিকে, গত ১লা নভেম্বর একই ইউনিয়নের ছাচানী গ্রামে মাছুদ মোল্লা নামে অপর এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে প্রতিপক্ষরা কুপিয়ে হত্যা করে। হাজরাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বারিক মোল্লা ও একই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর আবু কালামের মধ্যে সামাজিক বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত মাছুদ মোল্লা বারিক মোল্লার সমর্থক। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ছাচানী গ্রামে চলছে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট। বারিক মোল্লার সমর্থকেরা প্রতিপক্ষ আবু কালামসহ তার সমর্থকের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর লুটপাট চালায়। আবু কালামের পাকা বাড়ি ভাঙচুর করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির গরু, ছাগল লুট হয়েছে। বিশেষ করে তারা আবু কালামসহ তাদের সমর্থকদের কয়েক শত লিচুগাছসহ বিভিন্ন ফলের গাছ কেটে ফেলেছে। বর্তমানে হামলা-মামলার ভয়ে এ গ্রামের আবু কালাম সমর্থক পুরুষ সদস্যরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যে কারণে নারী সদস্যদের দিন কাটলেও; রাত কাটছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। ছাচানী গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী জাকেরা বেগম বলেন, মাছুদ হত্যার জের ধরে প্রতিপক্ষরা তার বাড়ির পাঁচটি ঘর ভাঙচুর করে, সব মালামাল লুট করেছে। বাথরুমে যাওয়া ও ওজু করার বদনা পর্যন্ত নিয়ে গেছে। তার ও আবু কালামের কয়েক শত’ লিচু গাছ করাত দিয়ে কেটে ফেলেছে। পুরুষরা হামলা-মামলার ভয়ে বাড়ি উঠতে পারছে না। যে কারণে নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। কারণ প্রতিপক্ষরা  নারীদের হুমকি দিয়েছেন বাড়ি না ছাড়লে আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। বাড়ি না ছাড়লে ইজ্জত নেয়া হবে। যে কারণে রাতে তারা  প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হতে সাহস করেন না। সব সময় বিপক্ষ দলীয় লোকজন তাদের বাড়িঘর নজরদারিতে রেখেছে। তবে প্রতিপক্ষ নিহত মাছুদের বাবা দাউদ মোল্লা বলছেন, আবু কালাম ও তার ছেলেরা এলাকায় নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। শুধু তার ছেলে মাছুদকে হত্যা করে থেমে থাকেনি। গ্রামে লুটপাট চালিয়ে তাদের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে।

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, হাজরাপুর ইউনিয়নে নন্দলালপুর ও ছাচানী গ্রামে সামাজিক বিরোধ নিয়ে দু’টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দুই গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খুনের ঘটনার পর গ্রাম দুইটিতে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করলেও এখন শান্ত। পুলিশ সকল ঘটনার যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।  
 
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status