অনলাইন

বাবুনগরীকে হেফাজতের আমীর, মামুনুল হককে মহাসচিব হিসেবে চান সমর্থকরা

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ৩:২৯ পূর্বাহ্ন

দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে আনাস মাদানী ও আল্লামা আহমদ শফীর অব্যাহতিসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। আর তারাই এখন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর পদে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মহাসচিব পদে আল্লামা মামুনুল হককে দেখতে চান।

এমন দাবি করে তারা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার গেটে ব্যানার টাঙিয়েছেন। মাদ্রাসার ফেসবুক পেজেও ওই ব্যানার সম্বলিত স্ট্যাটাস সাঁটিয়েছেন। স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন মোহাম্মদ রুবেল নামে মাদ্রাসার এক ছাত্র। স্ট্যাটাসে ব্যানারের ওপরে তিনি লিখেন- চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদ্রাসার তথা হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া সরকার! সরকারের অনুগত আলেম, বুদ্ধিজীবী ও প্রশাসন নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। আলেম ওলামা ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।
 
এদিকে জানা গেছে, হেফাজতের আমীর কে হবেন মৃত্যুর আগে সেটা ঠিক করে গেছেন আল্লামা আহমদ শফী। তার নির্ধারণ করে যাওয়া নতুন কমিটিতে আল্লামা শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরী স্বপদে বহাল থাকলেও সিনিয়র নায়েবে আমীর করেছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আহমেদ দিদার কাসেমীকে। এছাড়া মৃত্যু ও অন্যান্য কারণে কমিটি থেকে বাদ পড়েন অন্তত ৩০ জন। কমিটিতে যুক্ত করা হয় নতুন প্রায় ১৫০ জনকে। কমিটিতে নায়েবে আমীর করা হয়েছে ৪২ জনকে। যুগ্ম মহাসচিব ও সহকারী যুগ্ম-মহাসচিব করা হয়েছে ১৫ জনকে।

এছাড়া সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ৮ জন, অর্থ সম্পাদক ও সহকারী অর্থ-সম্পাদক ৮ জন, প্রচার ও সহকারী প্রচার সম্পাদক ১২ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ১৩ জন, সমাজ কল্যাণ ও সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ১২ জন, শিক্ষা প্রশিক্ষণ সম্পাদক ৬ জন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক ৬জন, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক ৬ জন, তথ্য গবেষণা সম্পাদক ৭ জন, দপ্তর সম্পাদক ও সহ-দপ্তর সম্পাদক ৮ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক ৮ জন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক ৮ জন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক ৭ জন এবং কার্যকরী সদস্য করা হয়েছে ২৯ জনকে।

২১১ সদস্য বিশিষ্ট এই নতুন কমিটি ১৩ই আগস্ট অনুমোদন করেন আল্লামা আহমদ শফী। এর আগে গত ৮ই জুলাই আল্লামা শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরী এক বিবৃতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন। কিন্তু আল্লামা শফীর জানাজা ও দাফনের দিন বাদ আসর জরুরি বৈঠকে দ্রুত হেফাজতের সম্মেলন করার ঘোষণা দেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দু’পক্ষ তৈরি হয়। একটি হচ্ছে জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী। অন্যটি শফীপূত্র আনাস মাদানীর অনুসারী। মাদানীর অনুসারীদের দাবি, আল্লামা শফী নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়ে গেছেন। এই কমিটিই বাস্তবায়ন হবে। অন্যদিকে বাবুনগরীর অনুসারীরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, এক মাসের মধ্যে কাউন্সিল ডেকে হেফাজতের নতুন আমীর নির্বাচন করা হবে। মাদ্রাসার আন্দোলনকারী ছাত্ররাও এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিচ্ছে। এরমধ্যে হেফাজতের আমীর পদে বর্তমান মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মহাসচিব পদে আল্লামা মামুনুল হককে দেখতে চান- এমন স্ট্যাটাস সাঁটিয়েছেন মাদ্রাসার ফেসবুক পেজে। শুধু তাই নয়, অপর একটি স্ট্যাটাসে আনাস মাদানীসহ আল্লামা শফীর অনুসারী ১৮ আলেমকে মাদ্রাসায় প্রবেশে স্থায়ীভাবে নিষেধের বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা।

সূত্রমতে, শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশ থেকে হেফাজতের প্রয়াত আমীর আল্লামা শফী ও মহাসচিব বাবুনগরীর মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর ভিডিও বার্তা রয়েছে। দেশের গণমাধ্যমেও বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এরমধ্যে আল্লামা শফী বার্ধক্যজনিত কারনে অসুস্থ হয়ে পড়লে হেফাজতের আমিরসহ মাদ্রসার মোহতামিম কে হবেন তা নিয়ে বিরোধ চরমে পৌঁছে। এ অস্থিরতার মধ্যে জুলাই মাসের শুরুর দিকে মাদ্রাসার সহকারী মহাপরিচালকের পদ থেকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই শফীপূত্র আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন বাবুনগরীর অনুসারীরা।

তাদের দাবি, আল্লামা শফীকে ভুল বুঝিয়ে বাবুনগরীকে সহকারী মহাপরিচালকের পদ থেকে সরিয়েছেন আনাস মাদানী। এই দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বুধবার জোহরের নামাজের পর মাদ্রাসায় ব্যাপক ছাত্রবিক্ষোভ শুরু হয়। ওইদিন বিক্ষোভের মুখে শুরা মজলিসের জরুরি সভায় আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আহমদ শফী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন। ১৮ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার মারা যান তিনি।

আনাস মাদানীর অনুসারীদের দাবি, হেফাজতের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী কূট কৌশলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তার বহিষ্কার অবৈধ। আল্লামা শফীকেও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এমনকি তার অক্সিজেন মাস্ক খুলে রেখে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তাদের ভাষ্য, তথাকথিত কাউন্সিল ডেকে মরহুম আহমদ শফিকে হেনস্তাকারীদের নেতৃত্বে আনার চেষ্টা চলছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status