শেষের পাতা

গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

রেস্টুরেন্টের নাম হর্স অ্যান্ড হর্স। মালিক মেহরিন সারা মনসুর। তিন বছর ধরে তিনি রেস্তরাঁ পরিচালনা করছেন গুলশানে। কয়েক মাস আগে তার ব্যবসায় সহযোগী হিসেবে যুক্ত হন শফিউল্লাহ আল মুনির তার আগে একই ঠিকানায় বার পরিচালনার জন্য অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে লাইসেন্স পান। বর্তমানে একটি প্রতারণার মামলায় আটক হয়ে কারাগারে মুনির। তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া নিজেকে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। হর্স অ্যান্ড হর্সের সঙ্গে অংশীদারিত্বের পর তার লাইসেন্সের বিপরীতে সেখানে বৈধভাবেই মদ বিক্রি করা হতো। বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লভ্যাংশ হিসেবে নেন মুনির। জেলে যাওয়ার পরও বিপুল টাকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রেস্তরাঁর কর্মীরা। তারা জানান, সমপ্রতি আরো অর্থের জন্য চাপ দিতে থাকেন মুনির। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়।
এরই মধ্যে বুধবার রহস্যজনকভাবে সেখানে হাজির হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম। ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে’ পরিচালিত এক অভিযানে রেস্তরাঁর বার থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করে তারা। সেখানে সক্রিয় অবস্থানে ছিলেন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা। তাৎক্ষণিক রেস্তরাঁর মালিক মেহরিন সারা মনসুর সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আটক করা হয় দুই কর্মীকে। অনুপস্থিত থাকায় মেহরিন সারা মনসুরকে পলাতক দেখানো হয়।
রহস্যজনক এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মেহরিন মনসুর বলেন, একই ঠিকানার লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কেন ওই অভিযান পরিচালনা করা হলো। তাছাড়া বার ও এই সংক্রান্ত ট্রেড লাইসেন্স হলো মুনিরের নামে। সে রেস্তরাঁর ওই অংশ অপারেট করতো। কিন্তু মামলায় তার নাম নাই।’ কোনো ধরনের শোকজ বা নোটিশ জারি বা ব্যাখ্যা জানতে না চেয়ে হুট করে অভিযান পরিচালনা করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। মেহরিন মনসুর জানান, অভিযান পরিচালনার নেপথ্যে ছিল তার ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীরা। এমনকি যারা অভিযান পরিচালনা করেছেন, তারা তার রেস্তরাঁয় এসে প্রায়ই মদ পান করতেন।
এদিকে মুনিরকে কেন ওই মামলায় ছাড় দেয়া হয়েছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বারের লাইসেন্স ও অন্যান্য নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ২১শে আগস্ট দুই দুইটি বারের লাইসেন্স ইস্যু করা হয় শফিউল্লাহ মুনিরের নামে। আর দুইটি লাইসেন্সই স্বাক্ষর করে অনুমোদন দিয়েছেন সেই মুকুল জ্যোতি চাকমা। মুকুল জ্যোতি চাকমার সঙ্গে রয়েছে মুনিরের সুসম্পর্ক। প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে মুনিরই কী এই অভিযান করিয়েছেন?
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘মন্টক্লেয়ার নামে দোকানের বিপরীতে লাইসেন্স নেয়া হয়।’ যখন বলা হয়, লাইসেন্স হর্স অ্যান্ড হর্স-এর ঠিকানায় তো কোনো অসঙ্গতি নেই, তখন তিনি বলেন, ‘আপনি অফিসে আসেন। আমি তখন সব বুঝিয়ে দেবো।’
মুনির সম্পর্কে জানা গেছে, প্রতারণা, কারসাজি ও অপরাধ জগতের সঙ্গে শফিউল্লাহ আল মুনিরের দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততা। মুনির একাধিক ব্যক্তিকে বারের লাইসেন্স ও এলপিজি লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে করা চেক জালিয়াতি ও প্রতারণার একটি মামলায় তিনি এখন জেলে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথবাহিনীর অভিযানে পর্নো সিডি, ইয়াবা ও মডেল সহ আটক হয়েছিলেন মুনির। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় উঠে আসে তার নানা অপকীর্তির কথা। এরপর অকস্মাৎ তিনি হয়ে উঠেন ক্রীড়া সংগঠক। হকি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন সুকৌশলে। জড়িত হন সাইক্লিং সহ আর কয়েকটি ফেডারেশনে। এসব ফেডারেশনের অনুষ্ঠানে সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গকে অতিথি হিসেবে ডেকে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। এত কিছুর পরও সাইক্লিং ফেডারেশন সহ অন্যান্য ক্রীড়া সংগঠন থেকে তার বিরুদ্ধে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা নেয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status