প্রথম পাতা

বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারে কূটনীতিকদের রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কূটনৈতিক মিশনগুলোর দায়িত্ব আজকের বিশ্বে পরিবর্তিত হয়েছে। এখন রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি সামনে উঠে এসেছে। আমাদের এমনভাবে কূটনীতি অবলম্বন করতে হবে যাতে আমরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করতে পারি এবং বিশ্বের সকলের সঙ্গে একত্র হয়ে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারি। একইসঙ্গে তিনি বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলায় ভাষণদানের ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী গতকাল এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভবন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এন্ড দ্য ইউনাইটেড ন্যাশন্স: বাংলাদেশ এট দ্য ওয়ার্ল্ড স্টেজ’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু, দ্য পিপল্‌স হিরো’ এই দু’ট বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বৈঠকে যোগ দেন। অন্যদিকে এখানে সুগন্ধা চত্বরে ফরেন সার্ভিস একাডেমি থেকে কূটনৈতিক কোরের প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ যোগ দেন। বিশ্বে সকলেই একে-অপরের ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবার কাছ থেকে সহায়তা আশা করি। তেমনিভাবে কোনো দেশের যদি আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, আমরা তা দিতে প্রস্তুত। কোভিড-১৯ মহামারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তি পাবে এবং অর্থনীতির চাকা আবার ঘুরতে শুরু করবে এবং এভাবে সবাই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে এবং এজন্যই গোটা বিশ্বকে একত্রে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন মূল বক্তব্য পাঠ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার নবনির্মিত ভবন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলায় ভাষণ এবং সুগন্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রথম কার্যালয়ের দু’টি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন প্রদর্শিত হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের প্রথমদিকের চিত্র তুলে ধরা হয়। বঙ্গবন্ধু হলেন প্রথম বাঙালি যিনি ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ইউএনজিএ’তে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিশ্বকে একটি গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, উন্নয়নের জন্য সকলের সহযোগিতা সমানভাবে দরকার। সরকার প্রধান ভাষণে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার প্রসঙ্গ টেনে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের অসহযোগিতারও ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমাদের বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয় তেমনি মাঝে মধ্যে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও আসে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট যে ঘাতকেরা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, তার দোসর যারা, তারা এদেশে কোনো স্থিতিশীল সরকার থাকুক- তা কখনোই চায়নি। তিনি আরো বলেন, এই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা যখন চালানো হয় তখন আমরা দেখেছি মানুষকে খুন করা বা পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনা। আওয়ামী লীগ সরকার সকল ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে একাধিক বার দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব পাওয়ার এবং দেশকে বর্তমান পর্যায়ে তুলে আনতে পারার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এটা পেরেছি একটাই কারণে যেহেতু জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমরা অর্জন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর এদেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে বলেই বার বার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় আমরা সরকার গঠন করে তাঁদের সেবা করতে পেরেছি। আজকে উন্নয়নগুলোও যেমন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং এর সুফলও ভোগ করছে দেশের জনগণ। জাতির পিতার অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করাই তার একমাত্র লক্ষ্য উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে জাতির পিতা এদেশের মানুষকে যে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলেন, তাঁকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে তা ভূলুণ্ঠিত হয়। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে বিশ্বের মানুষের মুক্তি কামনা করে শেখ হাসিনা ভাষণে এজন্য বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আবারও অর্থনীতির চাকা সচল হোক, সকল মানুষ সুন্দরভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারুক- সেটাই আমরা চাই। সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সারাবিশ্বকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের বিষয়ে তার সরকারের আগাম সতর্কতার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বে হয়তো দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যেন কোনোমতে সেই দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া না লাগে। তাই, আমরা যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন করা, খাদ্য বিতরণ করা, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেয়া এবং খাদ্য নিশ্চয়তা দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গ টেনে দুর্যোগ মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, সকলের সহযোগিতা যেমন আমাদের একান্ত কাম্য তেমনি কাউকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করার প্রয়োজন হলে আমরা সেটা করতেও প্রস্তুত। কারণ, বাংলাদেশ সবসময় চায় সমগ্র বিশ্বে শান্তি বজায় থাকুক। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা প্রত্যেকেই বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে তিনি এ সময় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মাহুতি দানকারী বাংলাদেশি সৈনিকদের রুহের মাগফিরাত ও কামনা করেন। এ সময় প্রতিবছর তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য নিউ ইয়র্কে থাকলেও এ বছর করোনার জন্য যেতে না পারায় এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করতে না পারার আক্ষেপ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি ১৬ বার জাতিসংঘে গিয়ে ভাষণ দিয়েছি কিন্তু ১৭তম ভাষণ দেয়ার সময় যেতে পারছি না, যেটা খুব দুঃখের। কারণ, সেখানে বিশ্বের সবদেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময়ের সুযোগ হয়। একে-অপরের অভিজ্ঞতা জানা এবং বিনিময়ের যে সুযোগ সেটা এবার করোনাভাইরাসের কারণে হলো না।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন আজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ)’র ৭৫তম অধিবেশনে ভার্চ্যুয়াল ভাষণ দেবেন। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় এবং স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (নিউ ইয়র্ক সময়) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদে তার পূর্ব-নির্ধারিত রেকর্ডকৃত ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতিবছরের মতো এ বছরও বাংলায় এই ভাষণ দেবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ২১শে সেপ্টেম্বর এক ভার্চ্যুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে কোভিড-১৯ সংক্রমণ, রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ুসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি, ভ্যাকসিনের সমবণ্টন এবং প্রবাসী শ্রমিক ও রেমিটেন্সের ওপর এর প্রভাব তুলে ধরবেন। এছাড়া, তিনি জলবায়ু ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে জলবায়ু ইস্যুটিও তুলে ধরবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাষণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে পাশে থাকতে এবং এই সমস্যা সমাধানে তাঁর দেয়া চার দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংকট নিরসনে সকলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি তিনি আহ্বান জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে এই চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সফলতা, এসডিজি বাস্তবায়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্যবিমোচন, সন্ত্রাস দমন, মাদক চোরাচালান বন্ধ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, টেকসই গণতন্ত্র, সুশাসন এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা তার ভাষণে তুলে ধরবেন। গত ২১শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘আমরা ভবিষ্যৎ চাই, জাতিসংঘ আমাদের প্রয়োজন: বহুমুখিতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিতের মাধ্যমে।’ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভার্চ্যুয়াল অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status