প্রথম পাতা

নুরের বিরুদ্ধে আরো এক মামলা প্রতিবাদে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করা হয়েছে। নারী নির্যাতন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় এই মামলা করেন। এর আগে সোমবার একই ছাত্রী বাদী হয়ে লালবাগ থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এতে নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে। এই মামলাকে ষড়যন্ত্র দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গতকাল  সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে মামলা প্রত্যাহার, অতি উৎসাহী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, লালবাগ থানায় যে শিক্ষার্থী মামলা করেছিলেন, তিনিই কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেছেন। তবে ঘটনা দুটি ভিন্ন। কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা এবং পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্র হননের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগকে (২৮) এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে করা হয়েছে মামলার দুই নম্বর আসামি, যাকে লালবাগের মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে করা হয়েছে। আর লালবাগের মতো কোতোয়ালির মামলাতেও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নাম এসেছে আসামির তালিকার তিন নম্বরে। বাকি তিন আসামি হচ্ছেন, পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম (২৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) এবং কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ হিল বাকি (২৩)। মামলা সূত্রে জানা গেছে, একই বিভাগে পড়া এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কাজে থাকার কারণে হাসান আল মামুনের সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর সুযোগ নিয়ে মামুন চলতি বছরের ৩রা জানুয়ারি তার লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন। এ অভিযোগেই তিনি লালবাগ থানায় মামলাটি করেন।

কোতোয়ালি থানার মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনার পর ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে আসামি সোহাগ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সুস্থ হওয়ার পর মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন ওই তরুণী। তখন সোহাগ তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মামুনের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে সদরঘাট হয়ে ‘লঞ্চে করে চাঁদপুরে’ নিয়ে যান। কিন্তু চাঁদপুরে মামুনকে না পেয়ে ওই ছাত্রীর সন্দেহ হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে লঞ্চে সোহাগ তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, এ ঘটনার বিচার চেয়ে ওই তরুণী ডাকসু’র ভিপি নূরের সঙ্গে দেখা করেন। নূর তাকে প্রথমে মীমাংসা করে দেয়ার আশ্বাস দিলেও পরে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। সেইসঙ্গে অপপ্রচার চালিয়ে সম্মানহানি করার হুমকি দেন বলে ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়। এরইমধ্যে মামলার বাকি তিন আসামি নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ‘কুৎসা’ রটাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে এই মামলায়।

এদিকে গত সোমবার রাতে মৎস্য ভবন এলাকা থেকে নুরকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরে রাতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দিয়ে মুচলেকা রেখে রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। নুরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। তারা নুরের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন।

সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ‘পুলিশের হামলায়’ আহত নেতাকর্মীরাও যোগ দেন এতে। এ সময় নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। এরপর তারা প্রেস ক্লাব থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে দোয়েল চত্বর, টিএসসি হয়ে হয়ে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে যান। এই মিছিলে তারা ‘ঢাকা না দিল্লি, ঢাকা ঢাকা; মামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না; নুরের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই; ফ্যাসিবাদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। বিক্ষোভ মিছিলটি শাহবাগে এসে পৌঁছালে পুলিশের বেরিকেডের মুখে পড়ে। এরপর পুলিশ থেকে ১৫ মিনিটের সময় দেয়া হয় সমাবেশ শেষ করার জন্য। নেতাকর্মীরা দু’দফায় বক্তব্য রাখেন, প্রেস ক্লাবের সামনে এবং শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে।

প্রেস ক্লাব ও শাহবাগে নেতাকর্মীরা সাবেক ভিপি নুর ও সহযোদ্ধাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানান। এ ছাড়াও নুরের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলার প্রত্যাহারের দাবি জানান। সমাবেশে সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান বলেন, নুরের বিরুদ্ধে যে মামলা দেয়া হয়েছে এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়া হয়েছে আমাদের দমন করার জন্য। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেখেছেন আমাদের দমন করতে পারেনি। দেশে আজ বাক স্বাধীনতা নেই। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। এজন্য পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।
ডাকসুর সাবেক সমাজ সেবা সম্পাদক বলেন, সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমাদের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করেছে। এসব থেকে স্পষ্ট সরকার আমাদেরকে যেকোনোভাবে দমিয়ে রাখার নীল নকশা তৈরি করেছে। এই মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নামে যে মিথ্যা, বানোয়াট মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। পুলিশ যে হামলা করেছে, অবিলম্বে সেই হামলার বিচার করতে হবে।

পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, সরকার ভিপি নুরকে মেরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু তারা এটা জানে না, ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রত্যেক নেতাকর্মীই একেকজন ভিপি নুর।
সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, বলা হচ্ছে, আমরা নাকি পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছি। মিডিয়ার লোকজন ছিল, তারা দেখেছেন, কীভাবে আমাদের ওপর ফিল্মি স্টাইলে হামলা চালিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়। এই মামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এরপর ‘জঙ্গি মিছিলের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় নুরকে। গ্রেপ্তারের চার ঘণ্টা পর নুরুল হক নুরকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তাকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও মুচলেকা নেয়ার পর ছাড়া হয়। এ সময় ভিপি নুরের অন্যান্য সহযোগীদের ছেড়ে দেয়া হয়।

এই মামলার প্রতিক্রিয়ায় নুর বলেন, আমাকে হেয়প্রতিপন্ন ও আমাদের সংগঠনের রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সরকার ও তার সহযোগীরা এ মামলা করেছে। এটা ষড়যন্ত্র ও সরকারের কারসাজি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সরকারি দলের সহযোগিতা নিয়ে এই মেয়েকে প্রলুব্ধ করে মামলা করিয়েছে। এটার সত্যতাও এভাবে প্রমাণিত হয় যে, গতকাল মেয়েটা যে মামলা করেছিল তার অভিযোগ আর আজকের অভিযোগের মধ্যে কিছু তফাত লক্ষ্য করা যায়। প্রথমে বলেছিলো, হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার রিলেশন ছিল। হাসান আল মামুন তাকে ওই বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। আবার এখানে বলছে, সোহাগ তাকে লঞ্চে ধর্ষণ করে। এর মাধ্যমে ওই মেয়ের কথায় ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। এখানে এ মেয়ে যে আমাদেরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসিয়েছে তা তার কথাবার্তায় প্রমাণিত হয়। তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি, এ ধরনের মিথ্যা মামলা করে আমাদের দমানো যাবে না, বা আমাদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। তারা জানে আমাদের যদি অন্যায়ভাবে আটক করা হয় তাহলে সারা দেশে প্রতিবাদের দাবানল জ্বলে উঠবে। সে কারণে তারা আমাদের আটক রাখতে পারেনি।

ওদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হককে গ্রেপ্তার ও হয়রানির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নুরের মামলাকে মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি। 
ড. কামাল হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীন দলের একটি বিশেষ অঙ্গ সংগঠনের মহিলা কর্মীদের দিয়ে বেশ কয়েকবার মিথ্যা ও নোংরা মামলা দিয়ে নুরকে হয়রানি করা হচ্ছে। অতীতেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল কিন্তু শেষ রক্ষা পায়নি।
তিনি বলেন, সরকারকে এই রাজনৈতিক নোংরামি বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি এবং ভিপি নুরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে প্রধান আসামি করে লালবাগ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ আরো পাঁচজনকে সহযোগিতার অভিযোগে আসামি করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় এই মামলার প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ মিছিল শেষে নুরসহ সাতজনকে আটক করে পুলিশ। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status