অনলাইন

করোনাকালেই নয়, স্বাস্থ্য খাতের উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে সবসময়ের জন্য

তারিক চয়ন

২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ৭:৩২ পূর্বাহ্ন

সব ধরনের রোগীরাই পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোম এ ভুগছেন বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, করোনাকালেই নয়, স্বাস্থ্য খাতের উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে সবসময়ের জন্য।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তারা এই মত জানান। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত সাপ্তাহিক এই অনুষ্ঠানে গতকালের আলোচনার মূল বিষয় ছিল- কোভিড-১৯ জনিত মৃত্যুহার কিভাবে কমিয়ে আনা যায় এবং পোস্ট কোভিড সিনড্রোম কিভাবে ম্যানেজ করা যায়।

ওয়েবিনারে আলোচক অতিথি হিসেবে অংশ নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক, কার্ডিওলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ হাসনাত; কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক, ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনের ব্রুকডেল হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার এসোসিয়েট ডিরেক্টর, স্লিপ মেডিসিন ডিরেক্টর ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার।

ডা. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, করোনা নতুন রোগ। এর সম্পর্কে, এর প্রতিরোধ, প্রতিকার সম্পর্কেও আমরা বিশেষ তেমন কিছু জানিনা। জুনে করোনায় মৃত্যুহার ছিল অনেক বেশি। তখন বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অতটা সহায়ক ভূমিকা পালন না করায় সরকারি হাসপাতালের উপর চাপ ছিল বেশি। ফলে সাধারণ মানুষের হাসপাতালের উপর একটা অনাস্থার জায়গায় তৈরি হয়েছিল। এতে অনেকে নিজ বাসাতেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু সবার বাসায় কোন চিকিৎসক না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ফলটা হয়েছে নেতিবাচক।

করোনা হলে তিনি কাউকেই 'আতঙ্কিত' না হওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এতে অক্সিজেন গ্রহণে সমস্যা হয়। এছাড়া তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন না করারও পরামর্শ দেন।

আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ডা. এম এ হাসনাত বলেন, মহামারীর এই সময়ে চিকিৎসা দাতা এবং গ্রহীতা সবার মধ্যেই আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। আস্থার পরিবেশ না থাকলে সেটি দুপক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ। তাতে রোগীরা যেমন সঠিক চিকিৎসা পাবে না, তেমনি চিকিৎসকরাও ভালো থাকবেন না।

ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সারা পৃথিবীর মতো এদেশের চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই মৃত্যুহার অনেকটা কমেছে। কিন্তু তার মতে, এখানে তুলনামূলকভাবে দক্ষ চিকিৎসক এবং নার্সের সংখ্যা কম।

ডা. আসাদুজ্জামান বলেন ক্রিটিকাল কেয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সংকট। খুব বেশি করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ২০ জন দক্ষ চিকিৎসক রয়েছেন। তারপরও এই সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমরা পরস্পর একে-অপরকে সাহায্য করে যাচ্ছি।

ডা. হাসনাতের মতে ঢাকায় যেসব চিকিৎসক করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তারা তাদের অভিজ্ঞতা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূরবর্তী অঞ্চলের চিকিৎসকদের কাছে শেয়ার করতে পারেন। কিন্তু শুধু চিকিৎসকরা দক্ষ হলেই হবে না, অবকাঠামোগত সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই ঢেলে সাজাতে হবে। দুই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে- একটি হলো করোনাকালীন, অন্যটি সব সময়ের জন্য। কারণ চিকিৎসা পাওয়া মানুষের অধিকার। হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনতে হবে।

করোনা আক্রান্ত হয়ে ফিরে আসা ডা. মুজিবুর বলেন, করোনাজয়ী অনেকের অনেক নতুন নতুন সমস্যা বা রোগ দেখা দিচ্ছে। আবার অনেকে পুরনো রোগে ভুগছেন। কিন্তু তাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবটা কেমন হতে পারে তা নিয়ে এখনো কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সুতরাং কোন রোগী পোস্ট কোভিড সিনড্রোম নিয়ে আসলে চিকিৎসককে সব কিছু বিবেচনায় রাখতে হবে। এটা করোনার জন্য হতে পারে, অন্য কারণেও হতে পারে। সঠিক পরীক্ষা, মূল্যায়ন করে সেগুলো খুঁজে বের কর‍তে হবে।

ডা. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান এখনো পর্যন্ত কিছু করা না হলেও, তাদের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী মাস থেকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে সপ্তাহে দুদিন পোস্ট কোভিড ক্লিনিক আউটডোর বেসিস এ চালু করা হবে। সেখানে করোনাক্রান্ত যেসব রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তাদের নির্দিষ্ট তারিখে ফলো আপ করা হবে।

ডা. মুজিবের মতে, করোনা পরবর্তী উপসর্গে ভোগা রোগীদের জন্য ফিজিকাল থেরাপি উত্তম পন্থা হতে পারে। আইসিইউ থেকে বেঁচে ফিরে আসা মানেই সব সমাধান নয়। এর একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব শরীরে থাকতে পারে।

তবে ডা. হাসনাতের মতে শুধু আইসিইউ ফেরত রোগী-ই নয়, মৃদু স্তরের করোনা রোগীদের অনেকের ক্ষেত্রেও সুস্থ হয়ে উঠার পর প্রচন্ড শারীরিক দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status