প্রথম পাতা

বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন শেষ সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি

স্টাফ রিপোর্টার

২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা বলেছেন, দুই দেশের সীমান্তে হত্যা বন্ধে নতুন কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমি বিএসএফ-এ যোগদান করার পর এসব পরিকল্পনা নিয়েছি। ভবিষ্যতে এগুলো  বাস্তবায়ন করা হবে। আপনারা দেখুন, অপেক্ষা করুন। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ  প্রাধান্য দেয়ার কথাও জানান তিনি। গতকাল ঢাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক (ডিজি)   
পর্যায়ের সম্মেলন শেষে এ কথা জানান রাকেশ আস্থানা। তিনি বলেন, সীমান্তে রাত দশটা থেকে সকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত অপরাধীদের বিচরণ থাকে। মূলত ওই সময়টায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। এই ধরনের সীমান্ত হত্যা ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। রাকেশ আস্থানা বলেছেন, ইন্দো-বাংলা সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামানোর  কৌশল নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন- চলতি বছরে বিভিন্ন অপারেশনে দুই দেশের অপরাধী কর্তৃক হামলায় ৫২ জন বিএসএফ সৈন্য আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে রাত ১০টা  থেকে ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে। সাধারণত এই সময়ে অপরাধীরা তাদের কার্য সম্পাদন করে থাকে। দ্বিতীয়ত, অভিযানগুলো ভারতের মাটিতেই হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে আমি কোনো হত্যাকাণ্ডকেই ন্যায্যতা দিচ্ছি না। আমি পুনরায় বলছি, আমরা সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। বিএসএফ’র মহাপরিচালক দাবি করেছেন, বিএসএফ  সৈন্যদের সর্বশেষ উপায় হিসেবে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়া আছে এবং তারা সেটাই করছে।
আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে পানি দূষণ নিয়ে বিজিবি’র মহাপরিচালক  মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের বিষয় না। এটা দুই  দেশের মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে। তারপরও বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে ভারতের ভূখণ্ডে যাওয়া বিজিবি’র ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি জানান, বাংলাদেশের সীমানা চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে অনেক নদী, জলাভূমি, পাহাড় এবং সমভূমি রয়েছে।  প্রতি পাঁচ কিলোমিটার পর পর আমাদের সীমান্ত ফাঁড়ি রয়েছে। আমরা  প্রযুক্তির সহায়তায় সীমান্ত  রক্ষার  চেষ্টা করছি।
এর আগে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিয়মিত সীমান্ত সম্মেলনের ৫০তম আসর বসেছিলো পিলখানায়। সমাপনীতে  দুই বাহিনীর প্রধানের মধ্যে যৌথ দলিল সই হয়। এতে দুই বাহিনী সীমান্তে যেকোনো বিষয়ে মানবাধিকার প্রাধান্য দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন দুই প্রধান। দুই বাহিনীর প্রধানরা একমত হন, অপরাধীদের  কোনো  দেশ নেই, সীমান্তের দু’পাশেই তাদের অবস্থান। এবারের সম্মেলনের আলোচনায় সন্তোষ জানিয়ে বিজিবি  প্রধান বলেন, সীমান্তে অপরাধ কমাতে  যৌথভাবেই কাজ করতে হবে। এবারের সম্মেলনে মানব পাচার ও অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম  প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ  গ্রহণে উভয়পক্ষই সম্মত হয়েছেন। এ ছাড়াও উভয়পক্ষই বিদ্যমান পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণে রাজি হয়েছে।
এ ছাড়াও এবারের সম্মেলনেও সীমান্তের অপর  প্রান্ত  থেকে মাদক ও  নেশাজাতীয়  দ্রব্যের চোরাচালান বন্ধ, অস্ত্র,  গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক  দ্রব্য পাচার, বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া বা আটক, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম, বাংলাদেশে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করানো, মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নয়নমূলক নির্মাণকাজ, উভয় দেশের সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ, বাংলাবান্ধা আইসিপিতে দর্শক গ্যালারি নির্মাণ, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে যৌথ টহল পরিচালনা, রিজিয়ন ও ফ্রন্টিয়ার পর্যায়ের অফিসারদের নিয়মিত বৈঠক আয়োজন, পার্বত্য অঞ্চলে হিল ফ্লাইং  প্রশিক্ষণ, অপারেশন পরিচালনা এবং উভয় বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও বিরাজমান  সৌহার্দ্য বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত ১৭ই সেপ্টেম্বর  থেকে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এ সম্মেলন শুরু হয়। এতে বিজিবি’র মহাপরিচালক  মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বিএসএফ’র তরফ থেকে অংশ  নেয় রাকেশ  আস্থানার  নেতৃত্বে ছয় সদস্যের  প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ  প্রতিনিধিদলে বিজিবি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসার ছাড়াও  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন। ভারতীয়   প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status