অনলাইন

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অবনতির দিকে, শক্তিশালী চীনের সঙ্গে

ইকোনমিস্ট

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেট ভারত সীমান্ত থেকে কমবেশি ৫০ কিলোমিটার দূরে। এপ্রিলে সিলেট বিমানবন্দরের নতুন একটি টার্মিনাল নির্মানের ২৫ কোটি ডলারের চুক্তির দরপত্রে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান হেরে যায় চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। জুনে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিতব্য পণ্যের ৯৭ শতাংশের ওপর শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয় চীন। তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে এক দশক ধরে চলা দরকষাকষিতে ত্যক্ত বিরক্ত বাংলাদেশ এই মাসেই ওই নদীর পানি ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভুদ্যয় ঘটে অংশত ভারতের কারণে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াইরত মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠই ছিল। তবে অনেক বাংলাদেশিই ভারতকে অহঙ্কারী মিত্র হিসেবে দেখে। এক বাংলাদেশি সাংবাদিক বলেন, ‘তারা বিশ্বাসই করে না যে আমরা স্বাধীন। তারা সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করে। তারা মনে করে আমাদের আমলারা তাদের জন্য কাজ করে।’ বর্তমান ভারত সরকারের বিভিন্ন মুসলিম-বিরোধী নীতিও বাংলাদেশে এই মনোভাবকে উস্কে দিয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই মুসলিম।
অন্যদিকে চীন বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ৭টি ‘মৈত্রী সেতু’ স্থাপন করেছে। ২০১৮ সালে ভারতকে টপকে চীন হয়ে উঠে বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস। দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক আংশিদারও। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২৭টি অবকাঠামো প্রকল্পে ২০০০ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি ও টেলিকম খাতে ঝেঁকে বসেছে।’ ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, চীনের পকেট যে শুধু গভীর তা-ই নয়; বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের তুলনায় চীনের দ্বিধাদ্বন্দ্বও কম। ২০১৩ সালে পদ্মা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মানে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলারের ঋণ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। ওই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিশ্বব্যাংক সক্রিয় হয়ে ওঠার পরই এই পদক্ষেপ নেয় দেশটি। এরপর সেখানে ঢুকে পড়ে চীন।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, গত কয়েক বছরে চীনে পড়াশুনা করতে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বহুগুণ বেড়েছে। মিডিয়াও পক্ষে চলে আসছে। একটি আর্থিক পত্রিকার প্রতিবেদক জানান, ‘আমার পত্রিকার ৭০ শতাংশ সাংবাদিক চীনে গেছেন।’ তিনি নিজেও ২০১৮ সালে একটি ফেলোশিপের অংশ হিসেবে চীনে ১০ মাস ছিলেন। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আসার পরপরই চীনা ডাক্তারদের একটি দল বাংলাদেশে আসে মহামারি মোকাবিলায় সহায়তা দেয়ার উদ্দেশ্যে।
আকৃষ্টকরণের এই চেষ্টা কাজে দিচ্ছে। ভারতের চেয়েও অনেক কাঠামোবদ্ধভাবে মুসলিমদের হেনস্থা করে চীন সরকার। বাংলাদেশি পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রেও চীন (ভারতের তুলনায়) পিছিয়েই ছিল। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশি মিডিয়ায় চীন খুব কম সমালোচনারই লক্ষ্যবস্তু।
তবে বাংলাদেশ সরকার কিছুটা সতর্ক। চীনের কাছে অত্যাধিক ঋণী হয়ে পড়া নিয়ে খেয়ালী সরকার। এছাড়া ভারত যেন রুষ্ট না হয়, সেই ব্যাপারেও চোখকান খোলা রেখেছে বাংলাদেশ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। অবশ্য করোনাভাইরাস ওই সফরকে ভেস্তে দেয়। কিন্তু এত বড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশী থাকার যন্ত্রণাও কম নয়। রীয়াজ বলছিলেন, ‘ভারতের নীতিনির্ধারকগণ ও সংবাদমাধ্যম সার্বক্ষণিক বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ অনেক ছোট ও দেশটির গুরুত্বও অত বেশি নয়। কিন্তু চীন সেটা করে না।’

(যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘অ্যাজ বাংলাদেশ’স রিলেশন্স উইথ ইন্ডিয়া উইকেন, টাইজ উইথ চায়না স্ট্রেংথেন’ নিবন্ধের অনুবাদ।)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status