প্রথম পাতা

কওমি অঙ্গনে হতাশা, নানা প্রশ্ন

পিয়াস সরকার

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

হাটহাজারী মাদ্রাসার আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে দেশের গোটা কওমি মাদ্রাসাগুলোতে। মূলত কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাক-এ নানা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নিয়ে ফুঁসে উঠেছে কওমি অঙ্গন। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ সংক্ষেপে বেফাক দেশের সকল কওমি মাদ্রাসা দেখভাল করে।

দেশে কওমি মাদ্রাসা রয়েছে ২২ হাজার। আর শিক্ষার্থী রয়েছে ২৫ লক্ষাধিক। এই বেফাকের অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এখন কওমি ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বেফাকের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশকিছু অডিও ফাঁস হয় গত জুলাইয়ে। এরপর থেকেই উত্তেজনা ছড়াতে থাকে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। মেধা তালিকা নিয়ে জালিয়াতি, বেফাকের খাস কমিটি বাতিল, বেফাকের নেতৃস্থানীয় একাধিক আলেমের নাম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ এবং সহকর্মীদের নামে নানা দুর্নাম রটনাসহ আরো অনেক কিছু আলোচনায় আসে। এরই প্রেক্ষিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফসহ তিনজনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে বেফাক।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা সদস্য মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ও মাওলানা নুরুল আমিন যথাক্রমে বেফাকের মহাসচিব ও সহকারী মহাসচিব। তারা আল্লামা আহমদ শফীর আস্থাভাজন। এই বোর্ডের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। বছরের পর বছর পুরো কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন গুটিকয়েকজন। এতে করে বাড়ছে দুর্নীতি, কমছে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা।

মঙ্গলবার হঠাৎ করে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আনাস মাদানীকে অপসারণসহ নানা অভিযোগে আন্দোলনে নামে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ- কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি একটি অধিকার। কিন্তু এর বাহবা নেয়ার মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। সংগঠনের উদ্দেশ্য থাকলেও তার ধারেকাছে নেই নেতারা। সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে সুবিধা হাসিলে ব্যস্ত অনেকেই। বেফাক, হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলামের আমানতের খেয়ানত করে আসছে তারা। মুরুব্বি নামক একতরফা স্বৈরাচারী ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বেফাকের ওপর জবরদখলের সংস্কৃতির চর্চা করার অভিযোগও আনেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কথা- এতে কওমি মাদ্রাসার সুনাম জাতীয়ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিয়োগে স্বজনপ্রীতি। সাধারণ নিরীহ ওস্তাদ ও ছাত্রদের ওপর আনাস মাদানীর নির্যাতন ও অধিকারহারা করার অভিযোগও আনা হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি- আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা বাস্তবায়ন করতে হবে। আল্লামা আহমেদ শফিকে অক্ষম হওয়ায় পরিচালকের পদ থেকে সম্মানজনক অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানাতে হবে। ওস্তাদের পূর্ণ অধিকার ও বিয়োগ-নিয়োগকে শূরার নিকট পুনঃন্যস্ত করতে হবে। বিগত শূরার হাক্কানী আলেমদেরকে পুনর্বহাল ও বিতর্কিত সদস্যদেরকে পদচ্যুত করতে হবে।

সূত্র মতে, গঠনতন্ত্রে বেফাকের মজলিসে শূরার সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ১২১ জন পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে কমিটির ব্যাপ্তি ১৫৫ জনের। এর মধ্যে দায়িত্বশীল পর্যায়ে এক মাদ্রাসা থেকে রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে নেতৃস্থানীয়রা প্রভাব বজায় রাখতে কমিটিতে চেনা-জানাদের জায়গা করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কমিটিতে এলাকাপ্রীতি, স্বজনতোষণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের জায়গা করে দেয়া হয়েছে। এমনকি বেফাক প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর পর্যন্ত বেফাকের কর্মনীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আসা এবং বেফাকে নিজ নিজ মাদ্রাসা থেকে অন্তর্ভুক্ত করানো প্রিন্সিপালরা বেফাকে যোগ দিয়েই পেয়েছেন সহ-সভাপতি, সহকারী মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ।

সূত্রমতে, ১৫ বছর ধরে বেফাকের সভাপতি হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী। অভিযোগ রয়েছে, তিনি যখন প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০০৫ সালে তখনও তার হাটহাজারী মাদ্রাসা বেফাকের আওতাভুক্ত হয়নি।
দ্বীনি শিক্ষায় স্বজনপ্রীতির বিরোধিতা করা হলেও এ ধরনের চর্চা দেশের সবচেয়ে বড় কওমি প্রতিষ্ঠানটিকে সঠিকভাবে পরিচালিত হতে বাধাগ্রস্ত করছে। এর অবসান দরকার বলে মন্তব্য করেন একাধিক আলেম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status