মত-মতান্তর

বয়াতির আসর আর রাজনীতির মঞ্চ

শামীমুল হক

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

পালা গান এখনো আছে। শীত মৌসুমে এসব পালা গানের আসর বেশ জমে উঠে। বয়াতিরা ব্যস্ত হয়ে উঠেন সে সময়। বয়াতিদের আবার বাউল শিল্পী হিসেবেও চেনেন অনেকে। পালা গানে দুটি পক্ষ থাকে। একজন থাকেন শরিয়ত, অন্যজন মারেফতের পক্ষে। আবার দেখা যায়-একজন নারী অন্যজন পুরুষের পক্ষে। কখনো কখনো গুরু-শিষ্য হয়ে লড়ে যান দু’জনে। কেউবা হাশর আবার কেউ কেয়ামত নিয়ে মুখোমুখি হন। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় শেষ রাতে। গোটা রাতে দু’জনে লড়াই করেন। গানের লড়াই। যুক্তির লড়াই। একে অপরকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। উত্তর দিতে গিয়েও অপরকে খোঁচা মারেন। এসবই বয়াতিদের কৌশল। তবে সবচেয়ে বড় কৌশল যেটি তা হলো-সবশেষে দু’জন এক সুরে গান ধরেন। শরিয়ত ছাড়া মারেফত হয় না, নারী ছাড়া পুরুষ চলে না, আবার ভক্তছাড়া গুরুর দাম নেই। সারা রাতের তর্কবিতর্ক এভাবেই শেষ করেন তারা। তাদের মূল মেসেজ হলো-আমরা রাতব্যাপী যে তর্ক করেছি তা শুধু দর্শক ধরে রাখার জন্য। আসল কথা হলো-পৃথিবীতে চলতে হলে কেউই একা চলতে পারে না। একা চলতে গেলে হোঁচট খেতে হবে। একবার এমনই এক পালা গানের আসরে শরিয়তের এক বয়াতি গান ধরলেন- বাঘের সাথে দিতে পাল্লা/বকরি দিলে ছাড়ি/আরে রান সিনা খাইয়া শেষে/পাঠাই দিমু বাড়ি। উত্তরে মারেফতের বয়াতি উঠে জবাব দিলেন এভাবে- মারেফত হয় বিশ্ববিদ্যালয়/বুঝবে কি তত্ত্ব/ শরিয়ত প্রাইমারির ছাত্র/ওরে শরিয়ত প্রাইমারির ছাত্র...। শীত মৌসুমের এ পালা গান এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সবখানে। বাউল আসরে তা আর সীমাবদ্ধ নেই। বিশেষ করে রাজনীতিতে এ পালা গানের আসর জেঁকে বসেছে। সেখানে শুধু কথার ফুলঝুরি। কে কাকে কীভাবে শায়েস্তা করতে পারবে তার হিসাবনিকাশ। সঙ্গে আছে কৌশল। কথার যুদ্ধ তো আছেই। পালা গানের আসরে শেষ মুহূর্তে দুই বয়াতি এক সুরে কথা বললেও রাজনীতির মঞ্চে এক সুর বলতে নেই। সেটা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। পালা গানের আসরে দুটি পথ দু’দিক থেকে এসে এক হয়। আর রাজনীতির আসরে এক পথ দু’দিকে এঁকে বেঁকে চলে যায়। কারণ রাজনীতিতে একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে গেছে। আস্থা উঠে গেছে। স্বার্থ বাসা বেঁধেছে। ফিরে আসি সেই পালা গানের আসরে। তুমুল লড়াই চলছে দুই বয়াতির মাঝে। কথার যুদ্ধে একে অন্যকে হারানোর। এরই মাঝে এক বয়াতি গান ধরলেন- উপরে তার মধু মাখা/ ভেতরে গরল/ আইল যে কলির আমল/ ঈমান আলী চইলা গেল/সব মতলব আলীর দল। চারদিকে দর্শকের হাততালি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে দুই বয়াতির যুক্তি- পাল্টা যুক্তি। এরই মধ্যে কোন ফাঁকে যে রাত শেষ হয়ে গেছে দর্শক বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ দুই বয়াতি এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে গান ধরেছে- পর মানুষে দুঃখ দিলে/ দুঃখ মনে হয় না/ আপন মানুষ কষ্ট দিলে/ মেনে নেয়া যায় না/ দিব না দিব না বন্ধু/আর দুঃখ দিব না/ কত ভালোবাসি তোমায়/ সে কি বন্ধু বুঝ না...। এক সুরে গান গেয়ে পালা গানের সমাপ্তি হলেও রাজনীতির মঞ্চে এক সুরে গান কখন শুনতে পাবে দর্শক? সেই অপেক্ষায় পার করছে তারা দিনের পর দিন। রাতের পর রাত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status