অনলাইন

ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে আমিরাত ও বাহরাইনের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্থাপন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আরব দেশ দু’টি। এর আগে গত মাসেই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয় আমিরাত। এরপর গত সপ্তাহে একই পথ অনুসরণ করে বাহরাইন। দেশগুলোর মধ্যে চুক্তিগুলোর মধ্যস্ততা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তিগুলোর মাধ্যমে ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলকে বর্জন করে চলা আরব দেশগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানান, যথাসময়ে সৌদি আরবও একই পথে হাঁটতে যাচ্ছে। এদিকে, চুক্তিগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছে ফিলিস্তিনিরা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, হোয়াইট হাউজে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার শত শত মানুষের সামনে নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিগুলো স্বাক্ষর করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান এবং বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ আল জায়ানি। মিসর ও জর্ডানের পর তৃতীয় ও চতুর্থ আরব দেশ হিসেবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলো আমিরাত ও বাহরাইন। এর মধ্যে ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনকারী প্রথম উপসাগরীয় দেশের খাতায় নাম লেখালো আমিরাত। গত মাসেই এই ঐতিহাসিক চুক্তি করার সম্মতি প্রকাশ করে দেশটি। এর বদলে ইসরাইল ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত পশ্চিক তীর অধিগ্রহণের পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত করে।
ফিলিস্তিনিরা উভয় চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছে। আমিরাত গত মাসে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হওয়ার পরপরই এ সিদ্ধান্তকে ‘পেছন থেকে ছুরি মারা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ফিলিস্তিনি নেতারা। মঙ্গলবার চুক্তিগুলোর প্রতিবাদে গাজা থেকে ইসরাইলে রকেট ছুড়েছে ফিলিস্তিনি বাহিনী। এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশন বলেছে, এটা শান্তি নয়। এটা হচ্ছে ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাবে আত্মসমর্পণ।
মঙ্গলবার চুক্তি স্বাক্ষরের আগ দিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেন ট্রাম্প। এসময় তিনি বলেন, খুব শিগগিরই আরো অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যথাসময়ে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে সৌদি আরবও। সৌদি মন্ত্রিপরিষদ এক বিবৃতিতে, ফিলিস্তিনি ইস্যুর ন্যায্য ও সর্বাঙ্গীণ সমাধানের কথা জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব রাষ্ট্রের দাবির প্রতি সবচেয়ে প্রভাবশালী মিত্র হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানায়, সৌদি আরবের পাশাপাশি ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করতে ইচ্ছুক অপর একটি আরব দেশ হচ্ছে ওমান। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশটির নেতারা। এমনকি মঙ্গলবারের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানেও তাদের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্মকর্তারা।
ইতিহাসের বাক পরিবর্তন
মঙ্গলবারের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ট্রাম্পকে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ দিয়ে জনপ্রিয়তা এনে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি গতকাল বলেন, আমরা আজ বিকেলে এখানে সমবেত হয়েছি ইতিহাসের বাক পাল্টে দিতে। তিনি তিন দেশের মধ্যে চুক্তিগুলোকে সকল ধর্ম ও স্তরের মানুষের একসাথে শান্তি ও সমৃদ্ধিতে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই তিন দেশ এখন বন্ধু। তারা একসাথে কাজ করবে।
ট্রাম্পের জন্য চুক্তিগুলো বড় কূটনৈতিক জয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদকালে এখন অবধি বহুবার তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইসরাইল, আমিরাত ও বাহরাইনকে একসাথে এনে বড় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। তিনটি দেশই মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচি দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘে ইরানের ওপর প্রত্যাহার হতে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা ফের আরোপের চেষ্টায় ব্যর্থ হয় ট্রাম্প প্রশাসন। ইরান উভয় চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনিরা চুক্তিগুলোর সমালোচনা করলেও বাহরাইন ও আমিরাত জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে যায়নি। পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা মিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রের দাবির প্রতি তাদের সমর্থন জারি রয়েছে বলে জানায় দুই দেশের কর্মকর্তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status