বাংলারজমিন

নালিতাবাড়ীর পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ, সৌর্ন্দয্য হারাচ্ছে পাহাড়ী অঞ্চল

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ১:৩৪ পূর্বাহ্ন

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী ৩টি ইউনিয়নের গহীন পাহাড়ের ভিতর দিয়ে মানুষের প্রয়োজনে পাহাড়ী টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ ও বাড়ীঘর তৈরি করায় পাহাড়ী অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশের যে নিজস্ব সৌর্ন্দয্য রয়েছে তা হারিয়ে দিন দিন এখন সমতল ভূমিতে পরিনত হচ্ছে।
শেরপুরের অপরুপ সৌন্দ্যর্য মন্ডিত এই নালিতাবাড়ীর পাহাড়ী পর্যটন এড়িয়ার সার্বিক পরিবেশ কে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার চেষ্টা মানুষের দীর্ঘ দিনের হলেও পশু পাখির বনে মানুষের অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য এখন ধ্বসংসের দিকে চলে যাচ্ছে।  
এলাকাবাসী ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে আসা ভোগাই ও চেল্লাখালি নামে যে দুটি নদী রয়েছে সেটির আশপাশ দিয়েও রয়েছে প্রচুর বাড়ীঘর। জায়গাগুলি কারো ব্যাক্তিগত, কেউবা অসহায় ছিন্নমুল মানুষের বাড়ীঘর। ফলে মানুষের জীবিকার প্রয়োজনে নদী হতে বালু, নুড়ি পাথর, পাহাড় কেটে ছোট বড় পাথর উঠানোয় ও পাহাড় হতে বিভিন্ন ভাবে লাকড়ী, গাছ, সামান্য ফসলী জমি করায় সেসব এলাকার অনেক পাহাড় এখন ধসে পড়েছে বা সমতল ভূমিতে পরিনত হচ্ছে। ফলে এসব পাহাড়ী অঞ্চল এখন বানিজ্যিক জমজমাট পাহাড়ী গ্রামে পরিনত হয়েছে। বিশেষ করে রামচন্দ্রকুড়ার পানিহাটা, নাকুগাঁও ব্রীজ এড়িয়া, নয়াবিলের নাকুগাঁও, হাতিপাগাড়, দাওধারা, কাটাবাড়ী এড়িয়ায়, পোড়াগাঁওয়ে বুরুঙ্গা, বারমারী মিশন ও বুরঙ্গা ব্রীজপাড় এড়িয়া, খলচান্দা, কুচপাড়া, লক্ষীকুড়া, সমশ্চুড়া, মধুটিলা এড়িয়াসহ আরো অনেক জায়গায় পাহাড় কেটে বা পাহাড়ের ভিতর মানুষের প্রয়োজনে ছোট বড় দোকানপাট, বাড়ীঘর ও রাস্তা নির্মান হওয়ায় এসব পাহাড়ী জায়গা এখন আবাদী জমি বা সমতল ভূমিতে পরিনত হচ্ছে। ফলে সেসব জায়গা এখন মানুষের পদচারনায় মুখরিত হওয়ায় এই পাহাড়ী পরিবেশ ধীরে ধীরে জীব বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক যে নিজস্বতা ও ভারসাম্যতা থাকে সেটি এখন বিনষ্টের পথে। ফলে নালিতাবাড়ীর প্রকৃতি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। অপর দিকে বনবিভাগের আওতাধীন পাহাড়ের ভিতর তৈরি হয়েছে বিদেশী গাছ গাছালির সামাজিক বনায়ন। সেটিকে দেখভাল করার জন্য পাহাড়ের ভিতর যেতে হয় এবং মানুষের অবস্থান ও গহীন জঙ্গলের পাহাড়ী পরিবেশে মানুষের পদায়নে চলাচলের জন্য যে রাস্তা তৈরি হয়েছে সেটা পায়ে হাটা লিক রাস্তা। সীমান্ত সড়ক হতে এসব ছোট লিক রাস্তা বা গাছগাছালী আনার জন্য যে রাস্তা তৈরি হয়েছে এগুলি দিয়ে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত চলে যাওয়া যায়। ফলে বনের পশুপাখি, দেশজ গাছগাছালী রোপিত না হওয়ায় সেখানে পশুপাখিদের মুখরিত কলেবর দেখা যায় খুবই কম। বেশির ভাগ গহীন বনায়ন ভারতের দিকে হওয়ায় পশুপাখি সাদাবক, চিল, শকুন, ময়না, টিয়া, দাড়কাক, কুড়া, বাবুই, হলুদিয়া, টুনটুনিসহ অন্যন্য পশুপাখি এখন উত্তরে অনেক দুরে গহীন বনের ভিতর ভারতীয় অংশে অবস্থান করে। আর আমাদের এখানে বিদেশী গাছে ভরপুর হওয়ায় ছোট কানি বক, দেশী কাক, চড়ুই, শালিক, টুনটুনি ইত্যাদি দেখা যায়। হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের দেশীয় বন ঐতিহ্য। একই সাথে সীমান্ত সড়ক ও পাহাড়ের ভিতর পল্লী বিদ্যুতায়ন হওয়ায় কাছাকাছি যে বনায়ন সেগুলিতে মানুষের পদচারনা বেশি ফলে বন্যহাতির দল লোকালয়ে প্রবেশ করে না। বাংলাদেশ ও ভারতের যে গহীন বন রয়েছে সেগুলি দিয়ে এই বন্যহাতি বহু বছর ধরেই চলাচল করে। এদিকে করুনার মাঝে মানুষের পদচারনা না থাকায় মধুটিলা এলাকায় বন্য শুকুর ও বানর আসতে শুরু করেছিল। এই বন্য শুকুর মধুটিলা ইকোপার্ক, খলচান্দা গ্রামে মহিলা ও শিশুসহ কয়েকজন কে কামরিয়ে মারাত্বক আহত করে। বনে মানুষ না থাকলেই বন্য প্রানীর আগমন ঘটে প্রায়ঃশই। একই সাথে পাহাড়ী ভোগাই ও চেল্লাখালী নামে যে দুটি নদী রয়েছে সেখান থেকে এলাকার মানুষ সীমাহীন ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর তলদেশ উতরিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে নদীতে অনেক গভীরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং নদী দু পাড়ে অব্যাহত ভাবে ভাংঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। এবস্থায় নদী তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছে। প্রকৃতির উপড় মনুষ্য যে কর্তৃত্ব তাতে পাহাড়, নদী, বন, জীব বৈচিত্র এখন ধব্সংসের মুখে। এলাকার মানুষের মতামত মনুষ্য পদাচারনা কমিয়ে প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। তবেই ফিরবে প্রকৃতিতে স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বস্তির পরিবশে। আবার পাহাড় হয়ে উঠবে সবুজ শ্যামলিমায় বনপাখির পুস্প বনরাজির সৌর্ন্দেয্য মন্ডিত অপরুপ বাগান।        
নালিতাবাড়ী মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ আঃ করিম বলেন, আমাদের জানা মতে সরকারী জায়গায় তো বাড়ী ভিটা নাই। তবে পাহাড়ের ভিতর ব্যাক্তিগত জমি অনেকের রয়েছে। মানুষের প্রয়োজেন রাস্তা পূর্ব হতে মানুষ তৈরি করেছিল বিধায় সামাজিক বনায়ন সহ সেই পাহাড়ী রাস্তা এখন মানুষ ব্যবহার করছে।  
 

 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status