অনলাইন

চট্টগ্রামে দমছে না কিশোর গ্যাং, ধরপাকড়ে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে কিছুতেই দমছে না কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা। কমছে না অপরাধ। ফলে এদের বিরুদ্ধে ধরপাকড়ে নেমেছে পুলিশ প্রশাসন।
এমন তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন। তিনি জানান, অভিযানে গত দুইদিনে কিশোর গ্যাংয়ের ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-পুলিশ। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, পারিবারিক অনুশাসনের অভাবে চট্টগ্রামে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। তুচ্ছ বিষয়ে কথা কাটাকাটি, ফেসবুক-মোবাইল, প্রেম, চুরি-ছিনতাইসহ নানা ইস্যুতে সামান্য মতানৈক্য হলেই এদের মাথায় খুনের নেশা চাপে।
আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজেদের স্বার্থে কিশোরদের অপরাধ জগতে টানছে। ফলে এই কিশোররা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তারা শুধু পাড়া-পড়শি নয়, নিজের পরিবারের জন্যও মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
সূূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে ৬ কিশোর মিলে পেয়ার আহমেদ নামে এক ব্যক্তিকে তুলে রেল স্টেশন এলাকায় একটি পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে যায়। তিনি রিয়াজউদ্দিন বাজারের হার্ডওয়্যার দোকানের কর্মচারী। সেখানে তাকে জিম্মি করে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ফলমন্ডির মুখে ৫-৬ জন মিলে মো. পারভেজ নামে এক যুবককে পূর্বশত্রুতার জের ধরে মারধর করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পারভেজকে উদ্ধারের পাশাপাশি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ছাড়া নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন আরো তিনটি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। যেখানে কিশোর গ্যাংয়ের আরো ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮শে জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশ নগরে অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৪৪ জনকে আটক করে।
সিএমপি’র তথ্য মতে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে দেড় শতাধিক কিশোর গ্যাং শনাক্ত করেছে গোয়ন্দা পুলিশ। এলাকার অন্তত ৫০ জন বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় এসব কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে। বড় ভাইয়েরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত। যাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ কারাগারেও পাঠিয়েছে। তারপরও দমছে না কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা। চলছে নানা অপরাধ কর্মকা-। এদের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন উড়াল সড়কসহ কমপক্ষে তিনশতাধিক স্পটে আড্ডার ছলে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকা- করছে এরা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে উড়ালসড়কে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে যেসব শিশু-কিশোর ধরা পড়েছে তাদের প্রায় সবারই জীবন ভাগ্য বিড়ম্বিত। সুস্থ ও স্বাভাবিক শৈশব বলতে যা বোঝায়, তা তারা পায়নি। এদের বেশিরভাগ বাস করে রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল বা ফুটপাতে। নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা ছিনতাই করে। আটক শিশু-কিশোরদের কিশোর সংশোধন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানান সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, ছিনতাই ও মাদক সেবন দুটোই গুরুতর অপরাধ। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত শিশু-কিশোরদের অপরাধী হিসাবে দেখা যাবে না। কোনোটি অপরাধ আর কোনোটি অপরাধ নয়, তা বোঝার বয়স তাদের হয়নি। সে ক্ষেত্রে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত সঠিক। কিন্তু সমস্যা হলো, দেশে শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্র নামে যেক’টি প্রতিষ্ঠান আছে, কোনোটিই মানসম্মত নয়। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলও সেখানে নেই। যারা এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, তারা অনেক সময় শিশু-কিশোরের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে থাকেন। ফলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এই অবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া জরুরি।
 সনাকের চট্টগ্রাম সভাপতি এডভোকেট আকতার কবীর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিটি কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে উপযুক্ত বৃত্তিমূলক কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে এখান থেকে বেরিয়ে কাউকে অনিশ্চিত পথে পা বাড়াতে না হয়। প্রত্যেক শিশু-কিশোরের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারো উপযুক্ত অভিভাবক না থাকলে রাষ্ট্রকে তার অভিভাবকের দায়িত্ব নিতে হবে। সব গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তা করে থাকে। উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠা বাংলাদেশ কেনো সেই দায়িত্বটুকু পালন করবে না?
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status