ষোলো আনা
‘মেসি’র প্রিয় রোনালদো
মো. জয়নাল উদ্দীন
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ৮:২৬ পূর্বাহ্ন
মাঝ মাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো বল। শুরুতেই একজন, দুইজন, তিনজন, চারজন এবং পাঁচ খেলোয়াড়কে কাটায় সে। ডিবলিং, ক্ষিপ্ততা আর নিয়ন্ত্রণ তিন দক্ষতার নৈপুণ্যতা দেখিয়ে করে গোল। ২০১৯ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ বাংলাদেশের হয়ে নেপালের বিপক্ষে গোলটি করে দেশব্যাপী পরিচিতি পায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের নারী ফুটবলার সাহিদা আক্তার রিফা।
কক্সবাজরের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামে বেড়ে ওঠে রিফা। দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে বেড়ে ওঠা এই ফুটবলারের। পিতা জালাল আহমদ (৫০) পেশায় একজন দিনমজুর। মা শামসুন নাহার (৪০) অসচ্ছল সংসার সামলাতে ব্যস্ত। মেয়ের খেলাধুলাতে সরঞ্জাম যোগাতে নানা প্রতিকূলতা পার করতে হয়। আজ তারা মেয়ের আলোয় উজ্জ্বল।
রিফা বলে, বিকেএসপি থেকে প্রথম আয় রিফার ১৪ হাজার টাকা। এক হাজার টাকা দিয়ে বুট কিনেছিলাম বাকি টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। একজন মেয়ে হয়ে নিজের আয়ের টাকা পরিবারকে দিলে কত আনন্দের সেবারই বুঝতে পেরেছিলাম।
রিফার বড় ভাই ফারুক হোসাইন বলেন, আজ রিফা এতদূর আসার পেছনে এলাকাবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন ছিল। বিশেষ করে সানাউল্লাহ ও শামসুল আলম সোহাগের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান। তারা দায়িত্ব নিয়ে রিফাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন।
করোকালীন সময়ে বাড়ির পাশের মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করে রিফা। রিফা জানায়, কক্সবাজারের মেসি নামে পরিচিতি পেলেও তার প্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মেয়েদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহিলা দলের ও বার্সেলোনার খেলোয়াড় এলেক্স মর্গানই বেশি প্রিয়।
রিফা তার লক্ষ্য নিয়ে বলে, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দলে খেলা আমার স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ মহিলা দল একদিন বিশ্বকাপ খেলবে। আর সেই দলের সদস্য হবো আমি। সেইসঙ্গে লক্ষ্য ইউরোপ লীগ খেলা।
২০১৭ সালে প্রথম বিএকেএসপি’র হয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে রিফা। সেবার ভারতের মাটিতে সুব্রত মুখার্জী ফুটবল টুর্নামেন্টে নৈপুণ্যতা দেখিয়ে বিএকেএসপিকে চ্যাম্পিয়ন করে। প্রথম ম্যাচে ৪০ সেকেন্ডে গোল করে আলোচনায় চলে আসে সে। আর প্রথম তিন ম্যাচে করে তিন গোল।
২০১৯ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ বাংলাদেশ মহিলা দল ভুটানে যায়। সেবারই নেপালের বিপক্ষে পাঁচজনকে কাটিয়ে গোল করে রিফা। প্রথম দুই ম্যাচে নির্বাচিত হয় ম্যান অব দ্য ম্যাচ। সেবার ট্রাইব্রেকারে ভারতের বিরুদ্ধে হেরে দ্বিতীয় অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় রিফাদের। অক্টোবরে অনূর্ধ্ব-১৫’র হয়ে ভুটানে যায় বাংলাদেশ মহিলা দল। জাতীয় দলের প্রথম সুযোগ আসে ৭৩ মিনিটে এবং ৮৩ মিনিটে গোলও করে রিফা।
এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ প্রথম কোয়ালিফায়ারে টুর্নামেন্টও খেলে রিফা। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলতে মিয়ানমারে যায় বাংলাদেশ। দলে রিফার সুযোগ হয়। বর্তমানে সে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে এক মওসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ।
শিশুকালে ছেলেদের সঙ্গে পাড়ার মাঠে হাতেখড়ি। রিফার অসাধারণ নৈপুণ্যে তার স্কুল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলে চট্টগ্রাম বিভাগে সেরা খেলোয়াড়ও হয় রিফা।