বাংলারজমিন

বাগেরহাটে ‘সুন্দরবন লর্ড স্টেট’ নামে প্রতারণা

বাগেরহাট প্রতিনিধি

২৯ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৮:০৬ পূর্বাহ্ন

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পিসি বারুইখালী গ্রামের আঃ সামাদ হাওলাদার ওরফে সামাদ চাপরাশী নামে এক ব্যক্তি নিজেকে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলার সকল জমির বৈধ মালিক দাবি করে বিভিন্ন স্থানে ‘সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেট’ নামে অফিস খুলে চালাচ্ছে জমিদারী। এক শ্রেণির দালাল-টাউটদের কমিশন এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, ও বরগুনা  জেলার সহজ-সরল কৃষকদের টাকার বিনিময়ে ধরিয়ে দিচ্ছেন তথাকথিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের জমির মালিকানা। দেয়া হচ্ছে জমির মাঠ পরচা-দাখিলা। এভাবে স্বঘোষিত জমিদার সামাদ চাপরাশী গত ৪ বছর ধরে মোরেলগঞ্জ উপজেলার পিসি বারুইখালী একটি অফিস খুলে সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। গত ২৪শে আগস্ট বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের পাঁচরাস্তা এলাকায় সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের অফিস খুলে সাইনবোর্ড স্থাপন করে। তার  এজেন্টরা মাইকিং করে মানুষদের জানিয়ে দেয় শরণখোলা উপজেলার সব জমির মালিক সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের জমিদার আঃ সামাদ হাওলাদারের। এখন জমির মালিকানা পেতে হলে জমিদারের কাছ থেকে নিতে হবে বন্দোবস্তের মাঠ পরচা-দাখিলা। এই অবস্থায় শরণখোলা উপজেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে প্রশাসনের। বুধবার বিকালে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার  মোস্তফা শাহীন পুলিশ নিয়ে তথাকথিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের অফিস সীলগালা করে সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলে। শরণখোলায় অফিস সীলগালা করে সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলা হলেও তথাকথিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের স্বঘোষিত জমিদার ও তার নিয়োগকৃত দালাল- টাউটদের কমিশন এজেন্ট এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি মোরেলগঞ্জ পিসি বারুইখালী তার সদর দপ্তর বন্ধ করা হয়নি ।

এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু জানান, তথাকথিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের স্বঘোষিত জমিদার হতদরিদ্র সামাদ চাপরাশী তার ইউনিয়নের পিসি বারুইখালী গ্রামের মৃত আকব্বর চাপড়াশীর ছেলে। ৫ বছর আগেও খালে জাল ধরে সংসার চালতো। সামাদ চাপরাশীর দাদা আফসার আলী চাপরাশী ছিলেন মোরেলগঞ্জের এসি লাহা স্টেটের বৃটিশ জমিদারের ধানসাগর কাচারীবাড়ির পিওন। বছর ৪ আগে সামাদ চাপরাশী তার বাড়ির ট্রাংকে পাওয়া এসি লাহা স্টেটের বৃটিশ জমিদার আমলের একটি বন্দোবস্ত কাগজ পেয়ে এখন সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলার সকল জমির বৈধ মালিক দাবি করছে। এসব জেলার কোথাও-কোথাও অফিস খুলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এক শ্রেণির দালাল-টাউটদের কমিশন এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে সহজ-সরল কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে তার কাছে নিয়ে আসছে। জমি রক্ষা করা বা জমি পেতে জনপ্রতি কৃষকদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ও প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার জমিদারের দরবারের স্বশরীরে হাজির হয়ে নজরানা দিলে মিলছে জমির কথিত মাঠ পরচা-দাখিলা। গ্রামের সহজ-সরল অশিক্ষিত কৃষকদের বলা হচ্ছে আইন-আদালতের মাধ্যমে সরকারকে পরাজিত করে সে পেয়েছে সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের মালিকানা। জমির কাগজপত্রের জন্য এখন এসিল্যান্ড অফিসে যেতে হবে না। ওসব অফিসের সব কাগজপত্র ভুয়া। এসব কথা বলে এখন কারুকার্য খচিত মোগল বাদশাদের মতো চেয়ারের সিংহাসন বানিয়ে তাতে বসে কৃষক প্রজাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে সাপ্তাহিক নজরানা। প্রতি শুক্রবার তার বাড়িতে বসছে জলসা। গত ৪ বছরের এভাবে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু ক্ষোভের সঙ্গে আরও জানান, তিনি গত ৪ বছরে মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সভায় স্বঘোষিত জমিদার সামাদ চাপরাশীর প্রতারণা করে সাধারণ কৃষকদের জমি রক্ষা ও দেয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের মালিক দাবিদার সামাদ চাপরাশী জানান, জমিদারী আমলের কাগজপত্র ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সুন্দরবনসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ জেলার সকল জমির বৈধ মালিক আমি। জমির মালিকদের আমার কাছ থেকে নতুন করে জমি বন্দোবস্ত নিতে হবে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহীন জানান, খবর  পেয়ে তথাকথিত সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের নামে স্থাপিত সাইনবোর্ড অপসারণ ও তাদের অফিস তালাবদ্ধ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও সুন্দরবনসহ ৫ জেলার সব জমির মালিকানা দাবি করে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ করায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে শরণখোলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের নামে শরণখোলায় বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। স্বাধীন দেশে এখন আর কোনো জমিদারী প্রথা নেই। সকল জমির মালিক সরকার।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status