বিশ্বজমিন

স্টেটম্যানের রিপোর্ট

ভারতকে নিজের ভুল খুঁজতে হবে

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ আগস্ট ২০২০, রবিবার, ৮:২১ পূর্বাহ্ন

চীনের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক দৃঢ় হওয়ার পেছনে সহজভাবেই কাজ করছে কাঠমান্ডুতে থাকা কমিউনিস্ট সরকার ও বেইজিংয়ের মধ্যকার আদর্শগত মিল। সামপ্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে ভারতের। ধর্মের দিক থেকে মিল থাকা নেপাল বা ঐতিহাসিক মিত্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্পর্র্কের অবনতি হয়েছে দেশটির।

তবে এই আদর্শগত মিলের কারণে নেপাল দূরে সরে গেছে এই ধারণার প্রচার ভারত সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে সাহায্য করছে। কিন্তু যেসব ভুল পদক্ষেপ ভারত এরই মধ্যে নিয়ে নিয়েছে সেসব সমাধানের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে কাঠমান্ডুতে নিয়োজিত চীনের রাষ্ট্রদূত হু ইয়ানকি তার গণ্ডির বাইরে গিয়ে নেপাল সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। ভারত ও নেপালের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা অনেকটা এই হু ইয়ানকির প্রচেষ্টার ফল। এখন এটি স্পষ্ট যে, ভারতের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ায় যেখানে সুযোগ পাওয়া যাবে তাই লুফে নেবে চীন।
তবে নেপালের ক্ষমতায় কমিউনিস্ট পার্টি থাকার কারণেই দেশটি চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং ভারতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছে এটি পুরোপুরি সত্যি নয়। এর আগের ৪ শাসন ব্যবস্থাতেও ভারতের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক বড় ধরনের উত্থান-পতন দেখেছে। রানা শাসনকাল, শাহের রাজত্ব, নেপালের কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টির অধীনে থাকা নেপালে এই উত্থান-পতন স্বাভাবিক বিষয় ছিল। গত সাত দশকে দুই দেশই বিভিন্ন সময় এর মধ্যে দিয়ে গেছে। তবে বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে নিঃসন্দেহে তা সব থেকে খারাপ। তারপরও নেপালের মানুষ সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারতের যতো কাছে চীনের ততো কাছে নয়। ফলে চীন সেখানে যা চাইছে তা অত্যন্ত সহজ হবে না। এমনকি নেপালের কমিউনিস্ট পার্টিও তাদের কথিত বিপ্লবের অনুপ্রেরণা পেয়েছে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি থেকে।

নেপালের প্রথম কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন অধিকারী। তিনিই দেশের প্রথম কমিউনিস্ট বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিলেন। তাকে বলা হয়ে থাকে, নেপালের কমিউনিজমের জনক। তিনি তার জীবনের একটা বড় অংশ ভারতে কাটিয়েছেন। ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তিনি এবং ভারতেই জেল খেটেছেন। এরপর তিনি যোগ দিয়েছেন চীনপন্থি মাওবাদী বিপ্লবে। ভারত ও নেপালে গড়ে ওঠা নকশাল বিপ্লবীদের নেতা হন তিনি। নেপালের বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা কমিউনিস্টদের সঙ্গেও চীনের যোগাযোগ সামান্যই। দেশটিতে এখন যে বিপ্লবের লাল পতাকা উড়ছে। তবে যারা উড়িয়েছেন সেই প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং পুষ্প কমন দাহাল প্রচণ্ডের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক দারুণ ছিল। নেপালের পূর্ববর্তী কংগ্রেস ভারতপন্থি ছিল। সেখানে কমিউনিস্টরা এসে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কথা বলেছে, কখনো ভারতবিরোধিতার কথা বলেনি। কিন্তু এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মাওবাদী নেতা প্রচণ্ডকে বলা হচ্ছে ভারতপন্থি অপর দিকে মধ্যপন্থি কমিউনিস্ট নেতা ওলিকে বলা হচ্ছে চীনপন্থি।
কখনই নেপালের কমিউনিস্ট বিপ্লবের সঙ্গে চীনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। সেখানে ভারতের সঙ্গে নেপালের রয়েছে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস। তবে এখন ভারতকে নিজের ভুলের দিকে নজর দিতে হবে। চীনের সঙ্গে যেসব যেসব ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে পড়েছে ভারত সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। কীভাবে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক এই পর্যায়ে এসে দাঁড়ালো তা পর্যালোচনা করতে হবে। শুধুমাত্র কমিউনিজমের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দূরে চলে গেছে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে হবে।
[দ্য স্টেটসম্যানে প্রকাশিত ভোপিন্দার সিংয়ের কলাম থেকে সংক্ষেপিত।]
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status