অনলাইন

কোভিড হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে কিছুই জানে না পরামর্শক কমিটি

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন

দেশে করোনার শনাক্তের হার ২২ থেকে ৩২ শতাংশের মধ্যেই আছে। গত ২৪ ঘণ্টায়ও শনাক্তের হার ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। অর্থাৎ নমুনা দেয়াদের মধ্যে প্রতি চার বা পাঁচজনে একজন প্রতিদিনে শনাক্ত হচ্ছেন। পরীক্ষা বাড়ালে শনাক্তও বেড়ে যায়। এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে তিন লাখ শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন সাড়ে তিন হাজার ওপরে। এ পরিস্থিতিতে সারা দেশে যখন করোনার আতঙ্ক বিরাজ করছে ঠিক তখনই কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল কমিয়ে দেয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন। যদিও করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি এ ব্যাপারে পরামর্শ দেননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোপুরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দিয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হচ্ছে। পরামর্শ কমিটির পরামর্শ কমই আমলে নেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ায় এই মাসের শেষদিকে অনেক কোভিড-১৯ হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হবে। বর্তমানে কোভিড হাসপাতালের ৭০ শতাংশ সিট খালি। তিনি বলেন, করোনার প্রকোপ কমে আসছে। করোনার বাইরে যে নন-কোভিড রোগী আছে, করোনার কারণে তারা সেভাবে চিকিৎসা পায়নি। আমরা আগামীতে অনেক হাসপাতাল নন-কোভিড করে দিচ্ছি, এ মাসের শেষে। এখানে সবাই চিকিৎসা নিতে পারবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মনে করেন দেশে আতঙ্ক তেমন নেই। যে কারণে রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে রোগী কমেছে এটা কী করে বলা যাবে। প্রতিদিনই যেখানে সংক্রমণ বাড়ছে। টেস্ট বাড়ানো হলে রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাবে।
হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে পরামর্শক কমিটি থেকে কোনো পরামর্শ নিয়েছে কিনাÑ জানতে চাইলে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। পরামর্শক কমিটি হাসপাতাল বন্ধের ব্যাপারে পরামর্শও দেয়নি।
হাসপাতাল বন্ধ করা ঠিক হবে কিনা বিষয়টি কীভাবে দেখছেনÑ জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি কি বিশ্লেষণ করে ঠিক করতে হবে। সংক্রমণ কেমন হচ্ছে। সংখ্যা কত। সংক্রমণ কোথায় হচ্ছেÑ গ্রামে না শহরে। কোথায় বেশি। রোগীরা চিকিৎসা বাড়িতে নিচ্ছেন, না হাসপাতালে। বাড়িতে নিলে কেন তারা হাসপাতালে আসছেন না? তাহলে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, সংক্রমণের পরিস্থিতি সামনে কি হতে পারে? এভাবে চলবে, না কমবে? ভবিষ্যতের সংক্রমণের কথা ভেবে হাসপাতালের বেড বা শয্যার সংখ্যা চাহিদা অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। তাড়াহুড়া করে বন্ধ না করে এভাবে বিশ্লেষণ করে শয্যা চালু রাখা উচিত বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যাবে নাÑ এমনটা ভেবে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেন অনেকে। শুরুর দিকে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে হয়তো কেউ কেউ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য গোপন করে বাসায় থাকছেন।
করোনার জন্য সারা দেশে ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট ১৫ হাজার ৮২৩ শয্যা রয়েছে। এ পর্যন্ত তার মধ্যে ভর্তি আছেন চার হাজার ৫৭৬ জন রোগী। আর শয্যা ফাঁকা আছে ১১ হাজার ২৪৭টি। এরমধ্যে রাজধানীতে ২২টি হাসপাতালে শয্যা ৭ হাজার ৩৬৭টি। ফাঁকা রয়েছে ৫ হাজার ৩টি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status