বাংলারজমিন

ঢেউয়ে ভাঙছে ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধই পাল্টে দিতে পারে এলাকার চিত্র

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ৬:৩২ পূর্বাহ্ন

 দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি পাড়ের শত বছরের জনবসতিপূর্ণ ইসলামপুর গ্রামের একাংশ সিলেটের গোলাপগঞ্জের এবং বৃহদাংশ মৌলভীবাজারের বড়লেখার অন্তর্গত। এ গ্রামের ৫-৬ হাজার মানুষ বছরে ৬ থেকে ৮ মাস পানিবন্দি থাকেন। হাকালুকির প্রবল ঢেউয়ে তারা থাকেন চরম হুমকিতে। গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি হাওরের ঢেউয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দরিদ্র গ্রামবাসী কয়েক যুগ ধরে এ ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের পাশ দিয়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন। এতে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও ফসল রক্ষার সঙ্গে হাকালুকির সৌন্দর্য পিপাসুদেরও যাতায়াত সুগম হবে। পাল্টে যেতে পারে ইসলামপুর ও কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের চিত্র। পর্যটন খাতের নতুন দ্বার উন্মোচনও হতে পারে।
জানা গেছে, এশিয়ার অন্যতম ও দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত। বর্ষায় হাওরটি মিনি সমুদ্রে পরিণত হয়। এ হাওরের উত্তর-পশ্চিমাংশে বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের অবস্থান। ইসলামপুর গ্রামের একাংশ আবার গোলাপগঞ্জ উপজেলারও অন্তর্গত। প্রায় ১০০ বছর পূর্বে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। বছরের ৬ মাস থেকে ৮ পর্যন্ত এ দুই গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দি থাকেন। এ সময় হাওরের প্রচ- ঢেউ তাদের ঘরবাড়ি ও বসতবাড়ি রক্ষার গার্ডওয়াল ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেকেই সারা জীবনের আয় রোজগার একত্রিত করে বসতঘর রক্ষায় গার্ডওয়াল নির্মাণ করেন। কিন্তু প্রচ- ঢেউয়ের তোড়ে ২/৩ বছরের মধ্যেই এগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
সরজমিনে গেলে, ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, ছিদ্দিক মিয়া, ছাদিকুর রহমান, সামছু মিয়া, ইব্রাহিম আলী, সামছুল ইসলাম, মো. গোলাম হোসেন, এরশাদ আলী, নুরুল ইসলাম, আলম চাঁদ, মতিন মিয়া প্রমুখ জানান, হাওরের ঢেউয়ের কবল থেকে বসতঘর বাঁচাতে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে গার্ডওয়াল নির্মাণ করেন। কিন্তু ২/৩ বছরের মধ্যে ঢেউয়ের তোড়ে গার্ডওয়াল ভেঙে যায়। অনেকেই সারা জীবনের রোজগারের টাকা খরচ করে গার্ডওয়াল দিয়ে এখন নিঃস্ব। হাকালুকির ঢেউয়ে শুধু বাড়িঘরই ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তা নয়, এর সঙ্গে বোরো ধানেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। ৪০-৫০ বছর পূর্ব থেকে এখানে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানানো হলেও আজও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ভুক্তভোগীরা বলেন, গোলাপগঞ্জের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের বাড়ি হতে পূর্বদিকে ইসলামপুর গ্রামের উমর আলীর বাড়ি হয়ে উত্তর দিকে হাজী ফজলু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে দুই উপজেলার দুইটি গ্রামের ৫ হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে।
এ গ্রামের প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রবাসের কয়েক বছরের সমুদয় রোজগার ও বাবা জমিজমা বিক্রি করে বসতঘর রক্ষায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে গার্ডওয়াল নির্মাণ করেছেন। কিন্তু ঢেউয়ের গতি তীব্র, আগামী ৩-৪ বছর গার্ডওয়ালটি টিকবে কি না এ নিয়ে ভীষণ চিন্তায় রয়েছেন। তিনি আরো জানান, সরকার যদি এখানে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তবে গ্রামবাসী স্বেচ্ছায় তাদের ভূমি দান করতে প্রস্তুত রয়েছেন।  
বড়লেখার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান জানান, মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাবউদ্দিন এমপির নির্দেশে ইতিমধ্যে ইসলামপুর গ্রাম রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প তৈরি করে তিনি তা প্রেরণ করেছেন। আশা করছেন শিগগীরই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status