প্রথম পাতা

ঢামেকের সেই বিল অনুমোদন হয়নি

রোগীর খাবারই পাঠানো হতো হোটেলে

শুভ্র দেব

১২ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০ কোটি টাকার বিল নিয়ে আলোচনা থামছেই না। সেই বিলের অনুমোদনও হয়নি এখনো। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তদন্তে নামেন। গোয়েন্দাদের তদন্তে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দা সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢামেকের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের যে খাবার দেয়া হতো সেটি পাঠানো হতো রোগীর খাবার থেকে। ঢামেকের কিচেনেই রোগীর খাবারের সঙ্গে সেটি রান্না করা হতো। এ ছাড়া চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের খাবারের জন্য সরকারিভাবে ৫০০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও আলাদাভাবে কোনো বাজার করা হতো না। রোগীর খাবারের জন্য যে বাজার করা হতো সেটি দিয়েই চালিয়ে দেয়া হতো। এরপর ঢামেক কিচেনে প্যাকেট করে ঢামেকের গাড়ি দিয়ে হোটেলে পৌঁছানো হতো। অথচ হাসপাতাল কর্র্র্তৃপক্ষ বরাবরই বলে আসছে খাবারের চুক্তি হোটেলের সঙ্গে করা হয়েছে। স্টাফরা যে হোটেলে থাকবেন সেই হোটেল কর্তৃপক্ষই খাবারের ব্যবস্থা করবে। গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে হোটেল কর্তৃপক্ষ খাবার সরবরাহ করেছে এমন কোনো সত্যতা মেলেনি। হোটেল কর্তৃপক্ষ বাজার করেছে এমন কোনো দোকানের স্লিপ বা ভাউচার দেখাতে পারেনি গোয়েন্দাদের। বেশিরভাগ হোটেলের ব্যবস্থাপকরা গোয়েন্দাদের জানিয়েছে তারা সেখানে চাকরি করে। দায়িত্বপালনের বাইরে তারা তেমন কিছু জানে না। তবে সবকিছু হোটেল মালিক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানে।
অন্যদিকে, ঢামেক কর্তৃপক্ষ ৩০টি হোটেলে করোনা চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মীরা থেকেছে এমন তথ্য দিয়ে আসছে। হোটেলে থাকা বাবদ তারা প্রায় ১৫ কোটি টাকার বিলও করেছে। কাগজে কলমে ৩০টি হোটেলের কথা বলা হলেও বাস্তবে অনেক হোটেলে কেউ থাকেনি। এ ছাড়া নিম্নমানের হোটেল বুক করে ভালো হোটেলের বিল করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২রা মে থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। তবে প্রথম কয়েকদিনে কোনো রোগী ভর্তি হননি। এজন্য প্রথমদিকে করোনা ওয়ার্ড চালানোর জন্য তেমন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফের প্রয়োজন হয়নি। থাকার জন্য যে হোটেল বরাদ্দ করা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে একবারে চুক্তি করা হয়নি। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফের প্রয়োজন হয় তখন হোটেলের চাহিদা বাড়ে। অথচ ঢামেক কর্তৃপক্ষ ২০ কোটি টাকার যে বিল করেছে সেখানে সবক’টি হোটেলে মাসজুড়ে স্টাফরা থাকার হিসাব দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেলে করোনা চিকিৎসাকে ঘিরে একটি চক্র সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তারা হোটেলের সঙ্গে থাকার চুক্তি থেকে শুরু করে খাবার, যানবাহন ও হাসপাতালের জন্য সুরক্ষাসামগ্রী কেনাকাটায় দুর্র্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। গোয়েন্দাদের তদন্তে এই সিন্ডিকেটের কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেলে করোনা চিকিৎসাকে ঘিরে সিন্ডিকেট চক্রের প্রধান হচ্ছেন একজন উপ-পরিচালক। তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালের অর্থ ও ক্রয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুন এক কর্মকর্তাকে সেখানে বসানো হয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে আছেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। যিনি হাসপাতালের কিচেনের সেক্রেটারি। করোনা ওয়ার্ডের একজন ওয়ার্ড মাস্টার। উপ-পরিচালক ও এই ওয়ার্ড মাস্টার মিলে কেনাকাটাতে ব্যাপক নয়ছয় করেছেন। এ ছাড়া আছেন হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও কিচেন সুপারভাইজার। এ ছাড়া একই সংগঠনের সেক্রেটারি ও আরো দুজন কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা রয়েছেন। এই সাতজন মিলেই হোটেল বুকিং, খাবার সরবারহ, কেনাকাটা ও যানবাহন সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করেছেন। চক্রটি তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে গিয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিলটি তৈরি করেছে। যদিও সেই বিলের অনুমোদন এখনো দেয়া হয়নি। গোয়েন্দারা তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জমা দিয়েছেন। এই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করবে বিল প্রদানের বিষয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status