বিশ্বজমিন

সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের বিরুদ্ধে কানাডার ‘হিট স্কোয়াড’ পাঠানোর অভিযোগ

মানবজমিন ডেস্ক

৭ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে দেশটির সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যা করতে কানাডায় ‘হিট স্কোয়াড’ পাঠানোর অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। আদালতে দায়ের করা অভিযোগ অনুসারে, তুরস্কে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পরপরই কানাডায় অবস্থিত সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল-জাবরিকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তবে তাকে হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। সেখানে  এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, জাবরি তিন বছর আগে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে কানাডায় যান। সেখানে টরোন্টোতে বেসরকারি নিরাপত্তা সুরক্ষায় রয়েছেন তিনি। আদালতের নথিপত্র অনুসারে, তাকে হত্যা করতে যাওয়া হিট স্কোয়াডকে দেখে সন্দেহ হয় কানাডার সীমান্ত রক্ষা বিষয়ক এজেন্টদের। উল্লেখ্য, ৬১ বছর বয়সী জাবরি বৃটেনের এমআই৬ ও অন্যান্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সৌদি আরবের যোগাযোগ রক্ষার অন্যতম মাধ্যম ছিলেন।
ওয়াশিংটন ডিসির ১০৬ পৃষ্ঠার অভিযোগে বলা হয়, জাবরির কণ্ঠরোধ করতেই তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন ক্রাউন প্রিন্স। জাবরি বলেন, তার কাছে থাকা ‘মারাত্মক তথ্যের’ জন্যই এমন হত্যা পরিকল্পনার শিকার হয়েছেন তিনি। আদালতে জমা দেওয়া নথিপত্র অনুসারে, এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। এছাড়া, জাবরি নিজে টাইগার স্কোয়াড নামে একটি ব্যক্তিগত মার্সেনারি টিমের তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন। ওই স্কোয়াডের সদস্যরা ২০১৮ সালে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্সের রোষানল থেকে বাঁচতে সৌদি ছেড়ে পালান জাবরি। তার অভিযোগ, মোহাম্মদ বিন সালমান তাকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নিতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও মেসেজ পাঠিয়েছেন। এমন এক মেসেজে হুমকি দিয়েছিলেন, আমরা নিশ্চিতভাবেই আপনাকে ধরতে পারবো। অবশেষে, খাশোগি হত্যার দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন জাবরি। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে সাড়া দেয়নি সৌদি সরকার।
প্রসঙ্গত, বহু বছর ধরে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফের ডানহাত হিসেবে কাজ করেছেন জাবরি। চলতি শতকের শুরুর দিকে, আল-কায়েদাকে পরাজিত করায় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন নায়েফ। প্রিন্স নায়েফের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করা ছাড়াও, ‘দ্য ফাইভ আইস’ বা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াও নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। স্বভাবে স্বল্পভাষী এই মানুষটি বৃটেনের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে সৌদি আরবের মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীর পদ পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেজর জেনারেলের পদমর্যাদা ছিল তার।
তবে ২০১৫ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহ মারা গেলে তার সৎ ভাই সালমান সিংহাসন গ্রহণ করেন। নিজের তরুণ ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিয়োগ দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে। ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান তার বাবার সহায়তায় রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থান করেন। সিংহাসনের পরবর্তী দাবিদার, প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে উৎখাত করে তার জায়গায় নিজেই ক্রাউন প্রিন্স হয়ে উঠেন। নায়েফকে পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয় ও তার জন্য কাজ করা ব্যক্তিদের বরখাস্ত করা হয়। সেসময়ই কানাডায় পালিয়ে যান জাবরি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status