মত-মতান্তর
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাডুডু কিক
শামীমুল হক
৬ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
ফাইল ছবি
অবাক বিস্ময় চারদিকে। হৃদয় নেড়েচড়ে উঠে। এ কেমন খেলায় নেমেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যার একপক্ষে সাধারণ মানুষ। জনতার দল। অপরপক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেশের ১৮ কোটি মানুষ এ খেলার দর্শক। একের পর এক জনতার দলের খেলোয়াড়কে জাপটে ধরছে। ডিসকোয়ালিফাই হয়েও একই কাজ করছে। দর্শক বেচারারা কিছুই বলতে পারছে না। কারণ তারা নিরীহ। শরীরে শক্তি নেই। মুখের রা বন্ধ। বোবা, বধির হয়ে শুধু দর্শক হয়ে আছে। শক্তিশালী দল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনতার দলের একজন খেলোয়াড় ছাড়া সবাইকে আউট করে দিয়েছে। এ জন্য তাদের মধ্যে চলছে উল্লাস। পার্টি করার আয়োজন। শেষ জনকে কীভাবে আউট করতে হবে সে দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে দল নেতার পক্ষ থেকে। একেবারে কিক। যাকে নাম দেয়া হয়েছে হাডুডু কিক। জনতার দলের এক বেচারা এমনিতেই নার্ভাস হয়ে আছে। তারপরও দম নিয়ে হা...ডু...ডু... করে দাগ পেরিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এরিয়ায় প্রবেশ করা মাত্রই দেয়া হয় সেই কিক। হাডুডু কিকে বেচারা একেবারে কাত। তারপর সকল খেলোয়াড় জাপটে ধরে। মাটিতে ফেলে জনতার দলের সেই খেলোয়াড়কে নিচে ফেলে আনন্দ করছে। জিতে গেছে তারা। এমন হাডুডু কিক দেবে মন্ত্রণালয় কল্পনাও করেনি সাধারণ মানুষ। অথচ তাই হয়েছে। আসল কথা ক্ষমতা। এ ক্ষমতাই কিক দেয়ার কৌশল শিখিয়ে দেয়। আর এ কৌশল প্রয়োগ করে নিজেরা তৃপ্তির হাসি হাসে। উল্লাস করে। একে অপরকে বলে দেখলেন- কেমন দিলাম? এমন না দিলে জনতাকে সোজা রাখা যায় না। হঠাৎ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করলো অনুমতি ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে কথা বলা বারণ। কারণ কি? কথা বললেই ভেতরের কথা বেরিয়ে যাবে। অনেক অজানা কথা জেনে যাবে আম পাবলিক। এটা তো হতে দেয়া যায় না? যেই ভাবা সেই কাজ। ৪ঠা আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখার যুগ্ম সচিব প্রথম হাডুডু কিকটি দেন। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কথা বলা বারণ ছাড়াও বলা হয়, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা মুখপাত্র হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অধিদপ্তরের প্রতিনিধিত্ব করেন। নিয়মিত ব্রিফিং ছাড়াও এই সব বক্তব্য ও মন্তব্যের কারণে অনেক সময় সরকারকে বিব্রত হতে হয়। প্রচার মাধ্যমে সরকারের প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে যথাযথ বিধি-বিধান অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। নির্দেশনায় বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ব্রিফিং ও সাক্ষাৎকার প্রদান বা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিষয়ে মহাপরিচালকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। আর দ্বিতীয় হাডুডু কিকটি আরো ভয়ঙ্কর। এক আদেশে বলা হয়েছে এখন থেকে সরকারি, বেসরকারি যেকোনো হাসপাতালে অভিযান চালাতে পূর্বানুমতি নিতে হবে। চমৎকার নির্দেশনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুমতির জন্য আবেদন করবে। এ আবেদন দিনের পর দিন মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকবে। ওদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হবে। বলা হবে- অভিযানের অনুমতি চেয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট। তাড়াতাড়ি অনিয়মগুলো নিয়মে পরিণত করো। আগাছা যা আছে সব সরিয়ে ফেলো। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সময় পেয়ে তারা প্রস্তুত হয়ে থাকবে। ওদিকে মাস খানেক ঘুরার পর অভিযানের অনুমতি দেয়া হবে। তখন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে দেখা যাবে সব ফকফকা। বাহ! চমৎকার। কত সুন্দর দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ওদিকে শাহেদ, সাবরিনারা কারাগারে বসে আফসোস করছে এমন হাডুডু কিক কেন আগে দেয়া হলো না? আগে দিলে তো আজ আমাদের এমন অবস্থায় পড়তে হতো না। আফসোসে কারাগারের দেয়ালে মাথা ঠুকাতে থাকবে। আর বলবে, ‘যদি নাকই খসালি, তবে কেন লোক হাসালি।’