প্রথম পাতা

মা’কে প্রধানমন্ত্রীর ফোন, বিচারের আশ্বাস

সিনহার মৃত্যু নানা প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

৫ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। কমিটির সদস্যরা গতকাল কক্সবাজারের হিল টাউন সার্কিট হাউজে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। পরে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে যা করা দরকার তাই করা হবে। এ ছাড়া মেজর সিনহার মাকে ফোন করে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও বলেছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার হবে। এদিকে, কীভাবে অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা নিহত হলেন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম বৈঠকে তদন্তের কর্মপন্থা ঠিক করা হয়েছে। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন অনুযায়ী কার্যক্রম শেষ করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে যেটুকু করা দরকার তদন্ত কমিটি তাই করবে। সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে। এর আগে কমিটি প্রধান মিজানুর রহমান গতকাল সকালে কক্সবাজারে এসে পৌঁছান। বেলা ১১টার দিকে অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজার হিল টাউন সার্কিট হাউজে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাহান আলী। বৈঠক শেষে বিকাল ৪টার দিকে সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন কমিটি প্রধান। এ কমিটি সরজমিন ঘটনার তদন্ত করে কারণ ও উৎস অনুসন্ধান করবে। এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেবে।

এদিকে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা গোপন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে রাশেদকে হত্যার জন্য পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতকে দায়ী করা হয়েছে। এতে ঘটনার একটি বিবরণ পাওয়া যায়। ওই বিবরণ অনুযায়ী, পাহাড় থেকে নেমে মেজর (অব.) সিনহা সিফাতকে নিয়ে নিজস্ব প্রাইভেটকারযোগে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওণা করেন। শামলাপুর এর পূর্বে বিজিবি চেকপোস্টে তাদের তল্লাশির জন্য থামানো হয়। পরিচয় জানার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রাত ৯টার দিকে তাঁরা পৌঁছান শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে। পুলিশের সংকেত পেয়ে মেজর (অব.) সিনহা গাড়ি থামান এবং নিজের পরিচয় দিলে প্রথমে তাঁদের চলে যাওয়ার সংকেত দেয়া হয়। পরে পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাঁদের পুনরায় থামান এবং তাঁদের দিকে পিস্তল তাক করে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। সিফাত হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পেছনের দিকে গমন করেন। মেজর (অব.) সিনহা গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার পরপরই পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত তাঁকে তিনটি গুলি করেন।

গুলি করার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় জনগণ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক মাঠকর্মী। তখন গুলিবিদ্ধ সেনা কর্মকর্তাকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মী ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করতে চাইলে পুলিশ তার পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেয়ার পর পুলিশ তার হাত থেকে মোবাইল ফোন ও পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়। সিনহাকে হাসপাতালে নেয়ার ক্ষেত্রে ৪৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত করা হয় বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এদিকে, নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের বোন শারমিন শাহরিয়া মানবজমিনকে বলেন, এটি একটি নিশ্চিত হত্যাকাণ্ড। এতে কোনো সন্দেহ নাই। তাই এ ঘটনায় আমরা একটি মামলা করবো। আমাদের আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শ নিয়ে খুব শিগগিরই আমরা মামলা করবো। আর যেহেতু এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আমরা আশাবাদী তারা খুব সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আমার মায়ের কাছে আজ (গতকাল) ফোন করেছিলেন। তিনি তাকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানিয়েছেন। আমার মা ওনার কাছে বিচার চেয়ে বলেছেন, ছেলেকে আর ফিরে পাবো না। তাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। জবাবে প্রধানমন্ত্রী আমার মাকে বলেছেন, আমিও একই পথের পথিক। আমিও পুরো পরিবারকে হারিয়েছি। তাই আপনাকে কিছু বলার ভাষা নাই। এ ঘটনায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার হবে।

শারমিন বলেন, আমাদের চাওয়াটা খুবই পরিষ্কার। প্রথমত এটি খুবই নিষ্ঠুর একটি হত্যাকাণ্ড। এরকম একজন সৎ সেনাকর্মকর্তা, মানবিক, পরোপকারী, দেশপ্রেমিক ও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বাংলাদেশের মাটিতে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কেন এর বিচার চাইবো? তবুও সবার সহযোগিতায় আমরা যেন একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ বিচার পাই।  কেন এই হত্যাকাণ্ড জানতে চাইলে শারমিন বলেন, পুলিশ বলছে আমার ভাই নাকি গুলি করার চেষ্টা করেছে তাই তারাও গুলি চালিয়েছে। এ বিষয়টি টোটালি রং। কারণ আমার ভাইয়ের গুলি চালানোর ইচ্ছা থাকলে অনলি চার সেকেন্ডে কয়েক রাউন্ড গুলি চালাতে পারতো। আসলে তদন্ত না হলে বলা যাচ্ছে না এখানে আর কোনো কারণ আছে কিনা। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ভাইয়ের বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন ছিল। বলেছিল সে এখন অনেক ইয়াং এনার্জেটিক। তাই সে এখনই শুরু করবে। পরিকল্পনা ছিল চায়না থেকে নেপাল তারপর বিশ্বভ্রমণ শুরু করবে। কিন্তু করোনার কারণে সেটি শুরু করা হয়নি। তাই বসে না থেকে দেশেই টুকটাক কাজ করছিল। কক্সবাজার টেকনাফও গিয়েছিল ওই কাজে। ট্রাভেলিংয়ের জন্যই সে একটা ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করেছিল। নতুন চ্যানেলের জন্য একটা পর্ব তৈরি করার জন্য সেখানে শুটিং করছিল।

শারমিন আরো বলেন, ঈদের আগের দিন থেকেই মনের ভেতরে কেমন জানি একটা খটকা লাগছিল। কারণ তার ফোনটা বন্ধ। ওই দিন রাতে টেকনাফের ওসি আমার মাকে ফোন দিয়ে সিনহা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। আমার মা তখন বলেছিলেন তাকে একটু ফোনটা দেন। কিন্তু ওসি বলেছিলেন সে একটু দূরে আছে ফোন দেয়া যাবে না। ওইদিন আমার মা অনেকবার ভাইকে ট্রাই করেছে কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন উত্তরা থানা থেকে তিনজন পুলিশ এসে আম্মুকে খুব জেরা করেছে। আপনার ছেলে কি মেজর। দেখি সে মেজর কিনা, ছবি দেখান। তখন তারা কিছু ছবি তুলে নিয়ে যায়। আম্মু বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। কারণ সেনাবাহিনীতে চাকরি করলে থানা থেকে এরকম ভেরিফিকেশনের জন্য প্রায়ই আসে। এরপর আর বাসায় কোনো পুলিশ আসেনি। তিনি বলেন, দেশের অনেক মানুষ এমনকি আমাদের আত্মীয়-স্বজন অনেকে জেনেছে কিন্তু আমি আর আম্মু কিছুই জানতে পারিনি। পরে আমার ভাইয়ের একজন সিনিয়র সহকর্মী তার বোনকে সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় পাঠান। তখন অনেক কথার মাঝে আম্মু তাকে জিজ্ঞেস করেছেন সিনহা কি বেঁচে আছে। তখন ওনি মাথা নেড়ে না বলেন।  
পুলিশের মামলা: সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক নন্দদুলাল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাতকে। তার অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে, সে সিনহার সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র তাক করা ও মৃত্যু ঘটানো। এর বাইরে নিহত সিনহা ও সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও মামলা করেছে। সেখানে ৫০ পিস ইয়াবা ও ২৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার দেখিয়েছে পুলিশ।

‘মায়ের বক্তব্য’ ভাইরাল: ওদিকে রাশেদ সিনহার মা নাসিমা আখতারের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তার ওই বক্তব্যটি সিনহার দাফনের আগে দেয়া বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা নাসিমা আখতারের বক্তব্যটি নিচে তুলে ধরা হলো।

‘আমার ছেলে বাস্তবের একজন নায়ক ছিল, সে সাহসের সঙ্গে মৃত্যুকে বরণ করেছে, সে কোনো কাপুরুষ ছিল না, সে একজন জাতীয় বীর ছিল। সে ছিল একজন সত্যিকারের প্রেরণাদাতা, আমাদের সকল আত্মীয়, সব বন্ধু তার কাছ থেকে জীবনের উৎসাহ পেতো। সে সব সময়ই হাস্যোজ্জ্বল এক চমৎকার মানুষ ছিল। সে সব সময়ই মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে এবং অন্যদের সুখী করতে চেষ্টা চালাতো। অপরের সুখের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই ছিল তার অন্যতম ব্রত।

আমাকে বিন্দুমাত্র জিজ্ঞাসা না করেও আমার সকল আরামের দিকে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর ছিল। চাকরির কারণে তার পোস্টিং যেখানেই হোক না কেন আমি যাতে ভালো থাকি, আরামে থাকি তা নিয়ে তার চেষ্টার অন্ত ছিল না। বাড়ির প্রতিটা কাজে আমাকে সাহায্য করতো। সব কাজ সব সময় নিজে নিজে করে আমাকে চমকে দেয়ার কাজটা সে খুব ভালো পারতো। আমাদের বাড়ির প্রতিটি কোনা, প্রতিটি দেয়াল সে নিজের হাতে সাজিয়েছিল।  

তার বাবার মৃত্যুর সময় আমাদের বাড়িটা দুই তলা ছিল। কিন্তু যখন সে এসএসএফে পোস্টিং পেলো (তার ১৬ বছরের সামরিক জীবনে যে একটি মাত্র সময়ই সে ঢাকায় পোস্টিং পেয়েছিল), তখনই সে হাউজ বিল্ডিং থেকে ঋণ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের বাড়িটা চারতলা করে। এই নির্মাণ  কাজের তদারকি করার অধিকাংশ সময়ই সে রাতে আসতো যেহেতু এসএসএফের দায়িত্বে ব্যস্ততা অত্যন্ত বেশি থাকায় এছাড়া সময় পেত না।

আমার ছেলেকে তার কোনো ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি আটকে রাখিনি, কোনো সময়েই না। যা যা সে করতে চেয়েছে আমি স্বাধীনতা দিয়েছি। অবশ্য সে আমাকে সব সময়ই বুঝিয়ে ফেলতে সক্ষম হতো কোনো না কোনো ভাবে। আমাকে না বুঝিয়ে সে একটা কাজও করেনি। সে সব সময়ই আমার অনুমতি নিয়ে নিত সেই কাজগুলোর জন্য যেগুলো তাকে সুখী করতে পারে। যাতে তার ভালো লাগে, সেই কাজগুলোতে আমার সব সময়ই সায় ছিল।
সে ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশকে যে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো। আমার ছেলে ছিল দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সে সমুদ্র ভালোবাসতো, সে সৈকতে বই পড়তে পড়তে সময় কাটাতে চাইতো। শৈশব থেকেই সে অ্যাডভেঞ্চারের ভক্ত ছিল।

সারা বিশ্ব ভ্রমণের এক প্রগাঢ় সাধ ছিল তার, যে জন্য বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী থেকে সে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছিল। আমি তাকে নিষেধ করিনি। তার হিমালয়ে যাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলেটা হাইকিং পছন্দ করতো, জাপানে একটা সাইকেল ট্যুরে যেতে চেয়েছিল। চাকরি থেকে অবসরের পরপরই সে তার এই স্বপ্নগুলো ছোঁয়ার জন্য  প্রস্তুত হচ্ছিল।  

এর মাঝে করোনা মহামারি চলে এলো। দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হওয়ার ক’দিন পরে সে জানালো যে তাকে নিয়মিতই বাইরে যাতায়াত করতে হয়, এবং আমি একজন বয়স্ক মানুষ, তাই তার এই চলাফেরা আমার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এরপর সে বললো যে,  রাজশাহী যাবে কিছুদিনের জন্য, সেখানে তার এক বন্ধুর মা
(যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন) এক বিশাল লাইব্রেরি করেছেন। ছোট থেকেই সে প্রচুর বই পড়তো। তাই তাকে আমি সেখানে যেতে দিলাম, বললাম প্রচুর পড়াশোনা করতে। সে রাজশাহীতে  প্রায় চার মাস ছিল এবং আস্তে আস্তে নিজেকে বিশ্ব ভ্রমণের জন্য  প্রস্তুত করছিল।

ছেলেটার তীব্র ভ্রমণের নেশা ছিল। যখন সে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে ছিল, ছুটিতে বাংলাদেশে আসতো না। তার বদলে দুই মাসের ছুটিতে ইউরোপ গিয়ে গাড়ি করে হাজার হাজার মাইল ড্রাইভ করে নিজে নিজে ঘুরেছিল। এটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। কারণ ছেলেটা অন্তত নিজের একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল। আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল এই সিদ্ধান্তের  প্রতি।  

চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর প্রতি রাতে সে আমার মশারি টাঙিয়ে দিত, আমার সকল ওষুধপত্র নিজে নিজেই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতো, যাতে আমার বুঝতে বিন্দুমাত্র সমস্যা না হয়।  যখনই বাড়ির বাইরে যেত, সব সময়ই নিজের চাবি নিয়ে যেত, যাতে আমাকে বিরক্ত না করতে হয় দরজা খোলার জন্য।

রাজশাহী থেকে ফিরে মাত্র ক’দিন আমার সঙ্গে ছিল। এবং তারপর কক্সবাজারে এক মাসের জন্য থেকে একটা তথ্যচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা জানালো। আমি সম্মতি দিয়েছিলাম। সে বিয়ে করেনি, আর আমিও তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইনি। ২৬শে জুলাই ছিল ওর জন্মদিন। অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে সে যে রিসোর্টে ছিল সেখানে একবাক্স চকলেট পাঠিয়ে ছিলাম। কোরবানি ঈদের সময় ছেলেটা আমাকে কক্সবাজারে গিয়ে ওর সঙ্গে ঈদ করতে বলেছিল, কারণ তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে নাকি আরো কয়েকদিন সময় দরকার ছিল। অসুস্থতার কারণে আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি।

৩১শে জুলাই রাত ১১টায় আমি ছেলেকে ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু ফোন কেউ ধরেনি। অবশেষে পুলিশ আমাকে ফোন করে আদনানের (মেজর সিনহার ডাকনাম) মৃত্যু সংবাদ দেয়।
আমার ছেলে একজন শহীদ। একজন বীরের রক্ত এবং মায়ের অশ্রু বৃথা যেতে পারে না। আশা করি পরম করুণাময় তাকে জান্নাতে আশ্রয় দিবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status