বিশ্বজমিন

গার্মেন্ট শ্রমিকরা যখন নেতৃত্বে

মানবজমিন ডেস্ক

১ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৮:১৫ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে গার্মেন্টে কর্মরত নারীদের শিক্ষা দিয়ে নেতৃস্থানে তুলে আনতে সহায়তা করছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। নারীকর্মীদের উৎসাহিত করতে সেখানে নেয়া হয়েছে বিশেষ কর্মসূচি। এর ফলে কারখানা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নারীদের অধিকারকে সমুন্নত করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে অবস্থিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে একজন সাদেকা বেগমের কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ৫ বছর আগে একটি গার্মেন্ট কারখানায় ১২ ঘন্টার শিফটে কাজ করতেন তিনি। তিনিই ছিলেন পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস। কিন্তু এখন ২৩ বছর বয়সী সাদেকা ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করা নারীদের মধ্যে প্রথম। সাদেকা এখন জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের একজন ইন্টার্ন। তিনি আশা করছেন, অর্থনীতিতে অর্জন করা তার ডিগ্রি ব্যবহার করে তিনি বাংলাদেশি গার্মেন্ট শ্রমিকদের সন্তানদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য একটি প্রজেক্ট চালু করবেন । এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন (এইউডব্লিউ) থেকে পাথওয়েস ফর প্রমিজ কোর্স থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন তিনি। তিনি বলেন, কিভাবে শিক্ষা একজন মানুষকে বদলে দিতে পারে আমি তার উদাহরণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল করার কারণ হলেন গার্মেন্টকর্মীরা। তাই তাদের সন্তানরা উন্নততর সুবিধার দাবিদার।
এইউডব্লিউ তার যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে। তারপর থেকে এখানে বিনামূল্যে ডিগ্রি কর্মসূচিতে সুবিধা নিয়েছেন প্রায় ৪৭০ জন চা শ্রমিক, শরণার্থী নারী। তারা পড়াশোনাকালে পেয়েছেন মাসিক বৃত্তি। এইউডব্লিউয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নির্মলা রাও বলেছেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টার্নশিপ সৃষ্টিতে জড়িত এ জন্য যে, তারা বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে মধ্যম ও সিনিয়র নারী ব্যবস্থাপকের সঙ্কট মোকাবিলা দিতে চান। জাতিসংঘের ডাটা অনুযায়ী, বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে জুনিয়র লেভেলে কর্মরত নারীরা হলেন শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ। বিজিএমইএ’র প্রধান রুবানা হক বলেছেন, গার্মেন্ট খাতে ম্যানেজার পদে গ্রাজুয়েট নারী এলে তাতে আমাদের নারীরা তাদের বড় স্বপ্ন পূরণে উৎসাহিত হবেন। আমরা নারীর ক্ষমতায়ণকে যেভাবে দেখি, তাতে তারা অংশ হতে পারবেন।
চীনের পর বিশ্বে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ দেশ বাংলাদেশ। এ দেশটিতে গার্মেন্টে কাজ করেন ৪০ লাখ মানুষ। রপ্তানি আয়ের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি আসে গার্মেন্ট কারখানা থেকে। কিন্তু এই খাতটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঝাঁকুনি খেয়েছে। প্রথমে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে কমপক্ষে ১১৩৬ জন শ্রমিক মারা যান। তারপর এ খাতে হানা দেয় করোনা ভাইরাস মহামারি। ২০১৩ সালের ওই বিপর্যয়ের ফলে শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের অবস্থা উন্নততর করার দাবি ওঠে। কিন্তু কারোনা ভাইরাস মহামারির কারণে কয়েক মাস ধরে কর্মহীন হয়ে পড়েন লাখ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক। এর কারণ, পশ্চিমা ব্রান্ডগুলো তাদের কার্যাদেশ বাতিল করে। একদিকে যেমন শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবি তোলেন, তেমনি বেকার হয়ে পড়া মানুষগুলো কাজ খুঁজে বেড়ান। তাই তাদেরকে এই খাতে সাহায্য করতে চান এইউডব্লিউয়ের গ্রাজুয়েটরা।
আগে কারখানায় প্যাকার হিসেবে কাজ করতেন ইয়াসমিন আখতার। তিনি বলেন, আমি সবাইকে এক দৃষ্টিতে দেখতে চাই। কোন শ্রমিক কোন ক্যাটেগরিতে কাজ করছেন তাতে কিছু এসে যায় না। আমি চাই মানুষ শ্রমিকদের সঙ্গে ভাল আচরণ করুক।
আল জাজিরা লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটি সম্প্রতি দেখতে পেয়েছে যে, শ্রমিকদের অধিকার থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের হুমকি ও নির্যাতন করা হয়। কিন্তু এ অভিযোগ তদন্তে শ্রমিক ইউনিয়নের সক্ষমতা বিঘিœত করা হচ্ছে। তবে ওই রিপোর্টের তথ্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন কারখানা মালিকরা। স্থানীয় গবেষকরা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মৌখিক নির্যাতন সহ বিভিন্ন অভিযোগ পেলেও তারা তা অস্বীকার করেন।
দাতা সংস্থা আইকেইএ ফাউন্ডেশন, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে এইউডব্লিউ। এখানে পড়াশোনা করেন এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নারী শিক্ষার্থীরা। পড়ানো হয় জনস্বাস্থ্য, দর্শন ও রাজনীতি। গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকরা এখানকার শিক্ষার্থী হলে তাদের নিয়োগকারীর পক্ষ থেকে তাকে পূর্ণ বেতন দেয়া হয়, যা মাসিক প্রায় ১০০ ডলার। এইউডব্লিউয়ের মতে, যেহেতু তাদের পরিবারগুলো তাদের আয়ের ওপর নির্ভর করে, তাই বেতন দেয়ার এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখান থেকে ডিসেম্বরে গ্রাজুয়েশন করেছেন দিপালী খাতুন। বলেছেন, তার লক্ষ্য হলো দাতব্য সংস্থার জন্য কাজ করা নাহয় গার্মেন্ট সেক্টরে ফিরে আসা, যেখানে তিনি ভিন্ন কিছু করতে পারবেন। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা কল্পনা আকতার বলেন, তিনি আশা করেন যেসব গার্মেন্ট শ্রমিক গ্রাজুয়েট হয়েছেন, তাদের উচিত অন্য সুবিধা না খুঁজে গার্মেন্টে ফিরে আসা। তার ভাষায়, যদি সেখানে পড়াশোনাকারী ১০০ মেয়ে ১০০ কারখানায় ফিরে আসেন, তারা পরিবর্তন আনতে পারবেন। কারণ, তারা দেখেছেন গার্মেন্ট শ্রমিকদের জীবন কত কঠিন। যদি তারা অন্য কারখানায় যোগ দেন, তাহলে তারা নিজেরা ক্ষমতায়িত হবেন। কিন্তু তাতে আমাদের পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status