প্রথম পাতা

মন খারাপের দিনে এলো ত্যাগের ঈদ

সাজেদুল হক

৩১ জুলাই ২০২০, শুক্রবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। তবুও সংশয় জাগে। ঠিক দেখছি তো। এটা থেমে যাওয়া এক সময়। প্রতিদিন আড়াইটায় টিভি পর্দায় একটা হিসাব পাওয়া যায়। ঘড়ির কাঁটার মতোই আমরা সেদিকে তাকিয়ে থাকি। এমনিতে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমাদের জীবন বিপর্যস্ত। প্রায় প্রতিটি মানুষেরই ক্লোজ সার্কেলের কেউ না কেউ আক্রান্ত। করোনা অবশ্য সবার জীবনে সমান অভিশাপ নিয়ে আসে না। কারও জীবন কেড়ে নেয়, কাউকে একেবারে বিধ্বস্ত করে দেয়। বেশির ভাগের ক্ষেত্রে সংক্রমণের মাত্রা থাকে মৃদু। জীবিকার প্রয়োজনে ইতিমধ্যে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি। ঢাকার রাস্তায় যদিও মানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু ভয়-ঢর খুব একটা দেখা যায় না। গ্রামগঞ্জে লোকজন আরো কম সচেতন। করোনাকে যেন অনেকটাই মেনে নিতে শিখেছে মানুষ। কালান্তক এই ব্যাধি যে শুধু মানুষের জীবনই কেড়ে নিচ্ছে তা নয়। বহু মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকেও এরই মধ্যে ধসিয়ে দিয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন কেউ, কেউবা আবার হারিয়েছেন বেতনের অংশ। ছোট-মাঝারি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই চলছে ধুঁকে ধুঁকে। শুরুতে কাজ হারানো নিম্নবিত্ত ফের কাজে যোগ দিয়েছেন। মধ্যবিত্ত এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন তারা। সামনের দিনগুলোতে কী হবে অজানা। জীবনযুদ্ধে পরাজিত অনেকে শহর ছেড়েছেন। দেয়ালে দেয়ালে টুলেটের ছড়াছড়ি। এ যেন করোনাকালের দেয়াল চিত্রের ডায়েরি।
এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় সরকারি কৌশল নিয়ে প্রশ্ন অনেক। উত্তর দেয়ার জন্য অবশ্য কোথাও কেউ নেই। আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেই দায় সেরেছেন। রিজেন্ট আর জেকেজি কেলেঙ্কারির মতো ঘটনার দায় এখনো তাকে নিতে হয়নি। শত বিস্ময়ের দেশে এটাও একটা বিস্ময়। কারণ ভুয়া টেস্টের কারণে সারা দুনিয়াতেই দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, হচ্ছে। শাহেদ আর সাবরিনাকে ধরেই পুরো কেলেঙ্কারি শেষ করা হচ্ছে। অথচ মদতদাতারা থেকে যাচ্ছেন আড়াইলেই। ওদিকে, করোনা টেস্টের সংখ্যা বাড়ছেই না। এক সময় টেস্টের সংখ্যা ১৮ হাজারের ঘরে গেলেও এখন তা বন্দি হয়ে আছে ১০-১২ হাজারের মধ্যে। নানা ভোগান্তির কারণে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা। করোনা উপসর্গ নিয়ে অনেকে ধুঁকলেও তারা আর টেস্ট করতে আগ্রহী হচ্ছে না। হাসপাতালমুখীও হচ্ছেন না রোগীরা। গত কয়েক মাসের হাসপাতালের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভালো নয়। এরই মধ্যে কিসের ভিত্তিতে যেন আশার কথা শোনালো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বলা হলো, করোনার সংক্রমণ কমতির দিকে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য তার বক্তব্য নাকচ করে দিলেন।
একদিকে করোনা আর করোনা ঝুঁকিতে সৃষ্ট অনটনে জীবন যখন বাঁচানো দায় ঠিক তখনই হানা দিয়েছে বন্যা। জাতিসংঘের তরফ থেকে এরই মধ্যে সতর্ক করা হয়েছে ১৯৮৮ সালের পর এবারকার বন্যা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ৩১ জেলার ১৫০ উপজেলার ৫০ লাখের বেশি মানুষ বন্যায় ইতিমধ্যে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। দেশের প্রায় ৩৭ ভাগ এলাকায় এরই মধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। কোনো কোনো এলাকার মানুষ মাসখানেক ধরে পানিবন্দি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বেসরকারি কিছু উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। বহু এলাকা থেকেই আমরা ত্রাণের জন্য হাহাকারের খবর পাচ্ছি।
আগে বলেছি, সময় থমকে আছে। কিন্তু জীবনতো আসলে থেমে থাকে না। করোনা, অনটন আর বন্যার পরও এসেছে ঈদ। যদিও ঘরমুখো মানুষের সেই স্রোত দেখা যাচ্ছে না। কমলাপুর বা সায়েদাবাদে নেই কোনো ভিড়। এখন পর্যন্ত কোরবানির পশুও বিক্রি হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। বোঝা যাচ্ছে, কোরবানি দিতেন এমন বহু মানুষ এবার কোরবানি দিতে পারছেন না। ঈদুল ফিতরের সময় আশা করা হয়েছিল, নিউ নর্মাল পরিস্থিতি হয়তো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু কোরবানির ঈদ বয়ে আনলো আরো কঠিন পরিস্থিতি। কোরবানির ইতিহাসে অবশ্য রয়েছে- ত্যাগ ও পরীক্ষাই প্রধান। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার প্রিয় বান্দা হযরত ইবরাহীম (আ.) এর পরীক্ষা নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে সূরা আস-সাফফাতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। আল্লাহর আদেশের প্রতি আত্মসমর্পণ করেছিলেন হযরতর ইবরাহীম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.)। সূরা সাফফাতের ১০২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছালো, তখন ইবরাহীম (আ.) বললেন, ও বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, এখন বল, তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। আমাকে ইন্‌শাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ পরবর্তী ঘটনাও সবার জানা। সেই সুস্পষ্ট পরীক্ষায় হযরত ইবরাহীম (আ.) উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
করোনাকালে সারা পৃথিবীই এক বৃহৎ পরীক্ষার মুখোমুখি। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে কেউ আসলে হলফ করে বলতে পারেন না। এই অবস্থায় আমরা কেবল প্রার্থনাই করতে পারি পরম করুণাময়ের কাছে। হে আল্লাহ! সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status