এক্সক্লুসিভ

চট্টগ্রামে ক্রেতা নেই পশুর হাটে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

২৭ জুলাই ২০২০, সোমবার, ৮:১৪ পূর্বাহ্ন

পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা নেই বললেই চলে। বেকার সময় কাটাচ্ছেন কামাররাও। অথচ কোরবানির বাকি আর মাত্র ৫ দিন। গত শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর পশুর হাটের ইজারাদার, পশু বিক্রেতা ও কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় ধারালো উপকরণ তৈরির কারিগর কামাররা শোনালেন নানা কথা। কোরবানির আগের ১০ দিনের নানা ব্যস্ততার কথা জানিয়ে তারা বলেন, করোনায় পাল্টে গেছে মানুষের জীবন। চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটের কামার অজয় কর্মকার (৩৪) এ বিষয়ে কথা বলার সময় গান গেয়ে উঠেন-গ্রামের নওজওয়ান, হিন্দু-মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম। কিন্তু সেইদিন আর কোথায়? গত বছর এমন দিনেও তো এই গান মনে করার ফুরসত ছিল না। আর এখন গান গাইতে গাইতে ঝিমিয়ে পড়ছি-বললেন অজয় কর্মকার। সত্যিই তো! জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর চট্টগ্রাম মহানগর কামারের দোকানের ঠুং-ঠাং শব্দে মুখর হয়ে উঠতো। আশেপাশের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারতো না। চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তসকির আহমেদ বলেন, কোরবানির আর মাত্র ৬ দিন বাকি থাকলেও কোরবানিদাতাদের সাড়া মিলছে না। ফলে পশুর হাটেও ক্রেতা নেই। কারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। চট্টগ্রামে গত বছরের অর্ধেক মানুষ এবার কোরবানি দিতে পারবে না।  বিবিরহাটের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম জানান, হাটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু আসছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। ফলে ব্যাপারীরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। দুয়েকজন ক্রেতা আসলেও বিক্রি নেই। ব্যাপারীরা বলছেন, দুয়েকজন ক্রেতা পশুর হাটে আসলেও গরুর দাম বলছে কেনা মূল্যের চেয়েও ৫-১০ হাজার টাকা কম। তাই গরু বিক্রি হচ্ছে না। অথচ গত বছর একেকজন বিক্রেতা ৮-১০টা করে গরু বিক্রি করেছেন। চট্টগ্রামের সাগরিকা বাজারের গরু ব্যাপারী আশরাফ আলী বলেন, কুষ্টিয়া থেকে ২৫টি গরু এনেছি। ১ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে একেকটা গরুর দাম। কিন্তু একটা গরুও বিক্রি হয়নি এখনো। দুয়েকজন ক্রেতা গরু দেখলেও দাম বলে কেনা মূল্যের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা কম। অথচ গত বছর এই বাজারে ৫৮টি গরু বিক্রি করেছি। আয় করেছি ৬ লাখ টাকা। সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে গরু আসছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। দু-একটা গরু বেচাকেনা হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ইজারা মূল্যের অর্ধেকও উঠবে না। অথচ প্রতিবছর এই সময়ে ইজারার টাকা হাতে চলে আসে। তবে আশায় আছি। আরো ৫ দিন আছে। হয়তো এরমধ্যে হাট জমতে পারে। তবু এটাই সত্য যে, আগের সেই দিনগুলো আর পাচ্ছি না। তিনি বলেন, পশুর হাটে ক্রেতা টানতে করোনা সংক্রমণ রোধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানো হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দেয়া হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা ও কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, স্যানিটাইজার ও সেপ্র মেশিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। তবে সমস্যা করোনার ভয়ে নয়। করোনাকালে মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিশেষ করে প্রবাসী পরিবারগুলোর আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কোরবানি দেয়ার ক্ষমতা অনেকেই হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে পশুর হাটে ক্রেতা কম। প্রসঙ্গত, কোরবানি উপলক্ষে এবার চট্টগ্রাম নগরীতে তিনটি স্থায়ী ও চারটি অস্থায়ীসহ মোট সাতটি হাট বসেছে। তিনটি স্থায়ী হাট হলো-সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাট। অস্থায়ী হাটগুলো হলো-নূরনগর হাউজিং সোসাইটি মাঠ, কমল মহাজন হাট, বাটারফ্লাই টিকে গ্রুপ মাঠ ও সল্টগোলা মাঠ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status