এক্সক্লুসিভ

১৩ দিন ধরে দূতাবাসের সামনে ২৭ বাংলাদেশির অবস্থান

ভিয়েতনামের সেই সাপ্লাই এজেন্টের কাছে ফিরে যেতে চাপ!

রোকনুজ্জামান পিয়াস

১৫ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৭:৫৬ পূর্বাহ্ন

মোটা পারিশ্রমিকের কথা বলে ভিয়েতনামে পাঠানো হয়েছে তাদের। কিন্তু  দেশটিতে পৌঁছানোর পর কোনো কাজ দেয়া হয়নি। মাঝে ১৫ দিন কাজ করালেও বেতন দেয়নি। উল্টো দেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে দালালচক্র। আধাপেট খেয়ে, না খেয়ে দিন পার করেছে প্রতারিত এসব কর্মী। এ অভিযোগ করেছেন প্রতারণার শিকার হয়ে দেশটিতে যাওয়া মাহবুব নামে এক কর্মী। তিনি বলেন, দেশটির হো চি মিন সিটির ডিংডং এলাকায় এভাবেই রাখা হয়েছিল ১৫০ বাংলাদেশি শ্রমিককে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়া হয়। পরে অবস্থা বুঝে দালালচক্র কাজ দেয়ার নাম করে বেশ কয়েকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলে। দালালের হাত থেকে রেহাই পেতে তাই গত ৩রা জুন ২৭ বাংলাদেশি রাতের আঁধারে পালিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে দেশটির গুনতাও শহরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে এসে অবস্থান নেয়। মাহবুবও ওই ২৭ জনের একজন। তারা দূতাবাসের কাছে দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান। প্রথমদিকে দূতাবাস আশ্বাস দিলেও পরে দেশে ফেরত পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। এই অবস্থায় গত ১৩ দিন ধরে দূতাবাসের সামনেই অবস্থান করছেন তারা। তাদের অভিযোগ- দূতাবাস দালালদের পক্ষ নিয়ে সেই সাপ্লাই এজেন্টের কাছে পাঠাতেই হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। বর্তমানে দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেয়া বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি এ অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগ, যাদের হাতে নিপীড়িত হয়ে তারা দূতাবাসে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলেন সেই সাপ্লাই এজেন্টের কাছেই আবার তাদের ফিরে যেতে চাপ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ভিয়েতনামের গুনতাও এলাকাসহ ভিয়েতনামের বিভিন্ন স্থানে দালালদের ক্যাম্পে মানবেতর আরো ৮০ বাংলাদেশি নানা সংকটে আছে বলে জানিয়েছেন তারা। দূতাবাসের কাছে অবস্থান নেয়া নোয়াখালীর বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান জানান, তারা বর্তমানে দূতাবাস থেকে ৩০ হাত দূরে একটি ভবনের ছোট কক্ষে থাকছেন। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে আসা ৬ জন গতকাল থেকে একটানা দূতাবাসের সামনে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। রাতেও তারা সেখানেই ছিলেন।  এ অবস্থায় বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সুমন তাদেরকে ওই এজেন্টের কাছে ফিরে যেতে চাপ দিচ্ছেন। না গেলে তাদেরকে জোরপূর্বক সেখান থেকে তুলে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। আটকে পড়া ওই বাংলাদেশিরা জানান, এর আগে সমস্যা সমাধানে সেদেশের পুলিশ প্রশাসন, চাইনিজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সুমনসহ তিন প্রতিনিধি আর শ্রমিক প্রতিনিধি আলমগীর আলম ও সিথিল চন্দ্র সরকার একটি বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে আলমগীর আলম জানান, দূতাবাস থেকে তাদের জানানো হয়েছে দেশে ফেরার খরচ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। বরং এখন সেই চাইনিজ সাপ্লাই এজেন্টের কাছেই ফিরে যেতে চাপ দিচ্ছে। সেখানে ফিরে গেলে আবারো তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হবেন বলে আশঙ্কা করছেন। ২৭ বাংলাদেশির আরেকজন এস কে মিলন। তিনি জানান, তারা অবৈধভাবে ভিয়েতনামে যাননি। বরং ভালো চাকরির মিথ্যা প্রলোভন ও ৫০০ ইউএস ডলার বেতনের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বৈধভাবে গেছেন। এজন্য তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে  নেয়া হয়েছে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। রিক্রুটিং এজেন্সি জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র ও স্মার্টকার্ড দিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাদের ভিয়েতনাম পাঠায়।
ভিয়েতনাম যাবার সময় কর্মীদের স্ব স্ব রিক্রুটিং এজেন্সি অফিস থেকে ৫০০ ইউএস ডলার হাতে দিয়ে বলেন, ভিয়েতনাম বিমানবন্দর থেকে তাদেরকে রিসিভ করতে আসা বাংলাদেশি দালালদের হাতে ডলারগুলো প্রদান করতে হবে। এজেন্সির প্রস্তাবে কেউ ডলার বহনে রাজি না হলে এজেন্সি অফিস থেকে হুমকি দিয়ে বলেন তাহলে তোমাদের ফ্লাইট বাতিল করা হবে। কর্মীরা উপায়ান্তুর না পেয়ে ভয়ে ডলার বহন করেন। এদিকে ভিয়েতনামে আরো অন্তত ৮০ বাংলাদেশি একই পরিণতি ভোগ করছেন বলে জানা গেছে। দেশটির গুনতাও এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দালালদের ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছে। গুনতাও ক্যাম্পে আটকে পড়াদের মধ্যে আছে ময়মনসিংহের ফরিদুল ইসলাম, আব্দুল হক, শহিদুল ইসলাম, আকরাম হোসেন, এরশাদ আলী, মুরসালিন মিয়া ও মুকসেদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার মিলন মিয়া, নরসিংদীর মো. জাহাঙ্গীর আলম, ফেনীর আবু সায়েম, মো. ইয়াসিন ও নোয়াখালীর নূর হোসেন। এর আগে একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ৩রা জুলাই ভিয়েতনাম থেকে ১১ বাংলাদেশি শূন্যহাতে দেশে ফেরত আসেন।
এ ব্যাপারে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্র্যাক। সংস্থাটির মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ভিয়েতনাম থেকে ১১ বাংলাদেশি ফেরত আসার পরই জানতে পারি আরো অনেকেই দেশটিতে একই পরিণতির শিকার। তারা দেশে ফিরতে চান। তিনি বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন ২০১৩ ধারায় বলা আছে জনশক্তি ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশগমন প্রতিটি বিপদগ্রস্ত কর্মীকে রিক্রুটিং এজেন্সি তার নিজ খরচে দেশে ফেরত আনতে বাধ্য। এই কর্মীরা সরকারের সব নিয়ম মেনে বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে সেখানে গেছেন এবং সবার কাছেই স্মার্টকার্ড রয়েছে। এ ছাড়া কাজ না থাকা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম পাঠানোর কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status