প্রথম পাতা

১৫ হাজার সিটের ১০ হাজারই ফাঁকা, ১০ দিনে বাড়িতে ৯৮ জনের মৃত্যু

কেন হাসপাতালবিমুখ করোনা আক্রান্তরা?

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

১১ জুলাই ২০২০, শনিবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। দিনে প্রতি ১০০ জনে ২২ জনের উপরে শনাক্ত হচ্ছেন। শনাক্তের ১২৫ দিনে এ পর্যন্ত পৌনে দুই লাখ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন প্রায় ২৩শ’। প্রতি দিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী বাসায় মারা যাচ্ছেন। গত ১০ দিনে দেশে করোনায় মারা গেছেন ৪২৮ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩২৬ জন, বাসায় ৯৮ জন। অথচ হাসপাতালের সিট ফাঁকা থাকছে। অভিযোগ আছে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, গলাকাটা বিল, ঠিকমতো চিকিৎসা না পাওয়া, আর্থিক সামর্থ্য না থাকাসহ নানা কারণে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না আক্রান্তরা। এ অবস্থায় করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে রোগীর অভাবে প্রায় তিনভাগের দুইভাগ শয্যাই ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। করোনার জন্য সারা দেশে ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট ১৫ হাজার ৩৩৯ শয্যা রয়েছে। এ পর্যন্ত তার মধ্যে ভর্তি আছেন চার হাজার ৫৮৭ জন রোগী। আর শয্যা ফাঁকা আছে ১০ হাজার ৭৫২টি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাসায় যারা মারা যাচ্ছেন তারা হয় হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। আর না হয় হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যাবে না এমনটা ভেবে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেন। এছাড়া সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে হয়তো কেউ কেউ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য গোপন করে বাসায় থাকছেন।
করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৪৫টি। তাতে রোগী ভর্তি আছে চার হাজার ৩৬১ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৫৮৪টি। সারা দেশে আইসিইউ শয্যা ৩৯৪টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ২২৬টিতে এবং খালি আছে ১৬৮টি। অর্থাৎ সাধারণ ও আইসিইউ মিলে রয়েছে মোট ১৫ হাজার ৩৩৯ শয্যা। তার মধ্যে ভর্তি আছেন চার হাজার ৫৮৭ জন রোগী। ফাঁকা আছে ১০ হাজার ৭৫২টি। তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ছয় হাজার ৩০৫টি। তাতে ভর্তি আছেন দুই হাজার ১৯৯ জন এবং শয্যা খালি আছে চার হাজার ১০৬টি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীতে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১৪২টি। তাতে ভর্তি আছেন ১০৮ জন এবং খালি আছে ৩৪টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৬৫৭টি। এই শয্যায় ভর্তি আছেন ৩১৩ জন এবং খালি আছে ৩৪৪টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯টি। তাতে ভর্তি আছেন ১৫ জন এবং খালি আছে ২৪টি। বিভাগওয়ারী করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউর শয্যার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় সাধারণ শয্যা এক হাজার ৮৩০টি এবং আইসিইউ ৮২টি। ময়মনসিংহ বিভাগে সাধারণ শয্যা ৪৮০ এবং আইসিইউ ১৭টি,  রাজশাহীতে এক হাজার ৬২০টি সাধারণ শয্যা এবং আইসিইউ ২৩টি,  রংপুরে ৭৫৭টি সাধারণ এবং ২০টি আইসিইউ, খুলনায় ৭৫৫টি সাধারণ এবং ১৮টি আইসিইউ, বরিশালে ৪৪৩টি সাধারণ এবং আইসিইউ ১০টি, সিলেট বিভাগে সাধারণ শয্যা ৩৯৫টি এবং আইসিইউ ১৬টি। হাসপাতালে তথ্যের জন্য ফোন নম্বরগুলো হলো-০১৩১৩৭৯১১৩০, ০১৩১৩৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯, ০১৩১৩৭৯১১৪০ পর্যন্ত।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১০ দিনে দেশে করোনায় মারা গেছেন ৪২৮ জন। এরমধ্যে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩২৬ জন, বাসায় ৯৮ জন এবং মৃত্যুূ অবস্থায় হাসপাতালে আসেন ৪ জন। তারিখ অনুয়ায়ী গতকাল ১০ই জুলাই করোনায় হাসপাতালে মারা গেছেন ২৩ জন এবং বাসায় ১৪ জন। ৯ই জুলাই হাসপাতালে ৩৮ জন এবং বাসায় ৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ৮ই জুলাই হাসপাতালে ৩৮ জন এবং বাসায় ৮ জন, ৭ই জুলাই হাসপাতালে ৩৯ জন এবং বাসায় ১৫ জন ও মৃত্যু অবস্থায় আনা হয় একজনকে, ৬ই জুলাই হাসপাতালে ৩৫ জন এবং বাসায়  ৯ জন, ৫ই জুলাই হাসপাতালে ৪১ জন এবং বাসায় ১৪ জন, ৪ঠা জুলাই হাসপাতালে ২৫ জন এবং বাসায় একজন ও মৃত্যু অবস্থায় আনা হয়েছে ৩ জনকে, ৩রা জুলাই হাসপাতালে ৩১ জন এবং বাসায় ১১ জন, ২রাা জুলাই হাসপাতালে ৩৩ জন এবং বাসায় ৫ জন, ১লা জুলাই হাসপাতালে মারা গেছেন ২৩ জন এবং বাসয় ১৮ জন। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত জুন মাসের ১০ থেকে ১৯শে জুন পর্যন্ত করোনার মৃত্যুর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট মারা গেছেন ৪১৫ জন। যার মধ্যে ২৭৩ জন মারা যান হাসপাতালে আর ১৩২ জনের মৃত্যু হয় বাড়িতে। বাকি ৮ জনকে মৃত্যু অবস্থায় আনা হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজস্টি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এখন হাসপাতাল প্রস্তুত। কিন্তু রোগী না আসার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভালো বলতে পারবে। অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তো আছে। যাদের শরীরে শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য লক্ষণ থাকবে তাদেরকে অবশ্যই হাসপাতালে পাঠাতে হবে। যদি শারীরিক সমস্যা সামান্যতম থাকে তবেই সে বাসায় থাকবে। যারা বাসায় মারা যাচ্ছে তারা সঠিক চিকিৎসা না পেয়েই মারা যাচ্ছে। হয়তো তারা বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে বাধ্য হয়ে বাসায় অবস্থান করছে। হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের দুর্বলতা।
হাসপাতালের প্রচুর সিট ফাঁকা অথচ মানুষ বাড়িতে মারা যাচ্ছেন-কেন জানতে চাইলে দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, করোনাকালে কারো জটিল রোগ থাকলে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে। যদিও ৮০ শতাংশ করোনা রোগী বাসায় থেকে ভালো হয়ে যান। মানুুষ হাসপাতালে না যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা অন্যতম। ডাক্তার, নার্সরা ঠিকমত রোগীকে দেখতে আসেন না এমন অভিযোগ তো আগ থেকে রয়েছে। আইসিইউকে অনেকে ভয় পান। ভুল রিপোর্টও একটি কারণ দেখছেন এই বিশেষজ্ঞ। ফলে শয্যা ফাঁকা থাকছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status