অনলাইন

খুলনায় অক্সিজেন সংকটে রোগীদের চরম ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

৮ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

অক্সিজেন সংকটে খুলনায় করোনা রোগীর চিকিৎসায় ভোগান্তি বাড়ছে। খুলনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ বেডের সব কয়টিতে মুমূর্ষু রোগী ভর্তি রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন কাউকে সেখানে ভর্তির সুযোগ নেই। এদিকে লিক্যুইড অক্সিজেন প্লান্ট না থাকায় রোগীকে ওয়ার্ডে রেখে অক্সিজেন সরবরাহে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সেই সাথে মুমূর্ষু রোগীর সেবায় আইসিইউ’র পরিপূরক হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলাও চালু করা যায়নি।
খুলনা করোনা চিকিৎসায় সমন্বয়ক ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, করোনা চিকিৎসায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারিভাবে লিক্যুইড অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির কথা রয়েছে। তবে ভুলক্রমে তা’ শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নামে বরাদ্দ হয়। মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করে তা’ অবশেষে সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু হবে জানা যায়নি। তিনি বলেন, মুমূর্ষু রোগীর জন্য হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা প্রয়োজন হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকলে তা’ চালু করা যাবে না।
এদিকে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৪২ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হচ্ছে। সেখানে করোনা চিকিৎসায় অক্সিজেন প্লান্ট চালুর কথা জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ। তিনি বলেন, জেনারেল হাসপাতালে অবকাঠামো নির্মাণ ও অক্সিজেন প্লান্ট চালু করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে তা’ চালু করা যাবে। তবে জরুরি মুহূর্তে খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আদ-দ্বীন হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসায় শয্যা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এসব স্থানে রোগীকে প্রয়োজনে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া যাবে।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় লিক্যুইড অক্সিজেন সরবরাহ থাকলেও সেখানে করোনা রোগী ভর্তি করা যাবে না। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি মো. রেজা সেকেন্দার বলেন, হাসপাতালের অভ্যন্তরে করোনা রোগী ভর্তি করা হলে পুরো হাসপাতালই সংক্রমের ঝুকিতে পড়বে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
এদিকে রেডজোনের আওতাভূক্ত ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) অফিসসহ আশপাশ এলাকা অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় কেডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক।
জানা গেছে, ৩১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অধিক্ষেত্র। ভৌগলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় ২০ নং ওয়ার্ডটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ২৭ হাজার জন্যসংখ্যার এ ওয়ার্ডে রয়েছে শেখ পাড়ার বৃহৎ কাঁচা বাজার, লোহা পট্টি, শো-রুম, ব্যাংক-বীমাসহ সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া শিববাড়ি মোড়ে অবস্থিত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিস। ফলে অন্য ওয়ার্ডের চেয়ে এ ওয়ার্ডে বেশি সংখ্যক মানুষের চলাচল ও সমাগম ঘটে। জনসংখ্যার চাপে ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত অন্তত শতাধিক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে করোনা পজেটিভ রয়েছেন ৫৭জন। এছাড়া কেডিএ’র পূর্ত-শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রবিন কুমার দাস, বৈষয়িক শাখার সার্ভেয়ার বোরহান উদ্দিন, কার্য-সহকারী জাহাঙ্গীর আহসান, অঙ্কনবীদ নাসির উদ্দিন, চেইনম্যান হামীদ মীর, পিয়ন মোস্তফা হাওলাদার, মালি আব্দুর রব ও আনোয়ার হোসেনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের বৈষয়িক শাখার পরিদর্শক মিরাজ হোসেন স্বস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় ভাইরাসের উর্ধ্বমুখী প্রবণতায় উক্ত ওয়ার্ডকে রেডজোন ঘোষণা ও কেডিএ অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হওয়ায় বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক।
কেডিএ কয়েকজন কর্মচারী জানান, অসুস্থ অবস্থায় অনেকে দীর্ঘদিন অফিস করছেন। যার কারণে ঝুঁকি নিয়ে অফিস করতে হচ্ছে। পরিবারের স্ত্রী-সন্তানরা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
শেখ পাড়ার বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, শেখপাড়া লোহাপট্টিসহ বাজার ও মোড়ে জনসমাগম হচ্ছে। মালামাল লোড-আনলোড হচ্ছে, লোকজন বিনাপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা করছে। ফলে করোনা ভাইরাস বিস্তারের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে এ ওয়ার্ডকে লকডাউন ঘোষণা করা উচিত। কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন বলেন ওয়ার্ডটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সিভিল সার্জন অফিস জানান, ওয়ার্ডটি রেডজোনের আওভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মো. গাউসুল আযমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
নিয়মিত অভিযানের পরও থামছে না লুকোচুরি, বাড়ছে শঙ্কা : খুলনা মহানগরীতে রেডজোনভূক্ত এলাকায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সচেতনতার পাশাপাশি নিয়মিতই চলছে অভিযান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধি নিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকরণের অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মামলা ও জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। এরপরও জনগণ লুকোচুরির মাধ্যমে যাতায়াত করছেন। ফলে বাড়ছে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর ১৭ ও ২৪ নং ওয়ার্ড এবং রূপসা উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নের করোনা আক্রান্ত রোগীর তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় রেড জোন ঘোষণা করা হয়। এই সব এলাকার জনগণের জন্য ২৩ জুন খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেড জোন ঘোষিত খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়ন এবং খুলনা মহানগরীর ১৭ নং ও ২৪ নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকা এবং গণবিজ্ঞপ্তির আদেশসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা, ১৭ নং ও ২৪ নং ওয়ার্ড ব্যতীত অন্যান্য ওয়ার্ডে নতুন নির্দেশনা অনুযারি রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে এবং সপ্তাহের অন্য চার দিন বন্ধ থাকবে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা, পথচারী ও দোকান-পাটে ক্রেতা-বিক্রেতাগণ মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কিনা, সরকার ঘোষিত সময়ের পরও দোকান-পাট খোলা রয়েছে কিনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ব্যতীত অন্যান্য পণ্যের দোকান, বিপণি-বিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হচ্ছে কিনা এবং করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে এই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাস্ক পরিধান না করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করাসহ গণবিজ্ঞপ্তির আদেশ লঙ্ঘন করে মোটসাইকেলে একাধিক ব্যক্তি আরোহণ, সরকার নির্দেশিত সময়ের পরেও দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা এবং রেড জোন ঘোষিত এলাকায় গণ বিজ্ঞপ্তির আদেশ অমান্য করার দায়ে ৯টি মামলায় ১০ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে সোমবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৬টি মামলায় ৪০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ৫ জুলাই ১৬টি মামলায় ৩১ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরও থামছে না জনগণের লুকোচুরি।
২৪নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, রেডজোনেও জনগণ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলাচল করছে। এর ফলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। ১৭নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা তানিয়া বেগম বলেন, লকডাউন করা বাঁশ উচু করে কিংবা নিচু হয়ে যে যার মতো যাতায়াত করছে। প্রশাসনের লোকজন হাজির হলেও তখন সবাই ঠিক হয়ে যায়।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধসহ অন্যান্য অপরাধ নিবারণে জেলা প্রশাসনের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status