বাংলারজমিন

করোনা উপসর্গে উপজেলা চেয়ারম্যান সাংবাদিকসহ ৬ জনের মৃত্যু

বাংলারজমিন ডেস্ক

৭ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:০৫ পূর্বাহ্ন

দেশের বিভিন্ন জেলায় মহামারী করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। গতকাল উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রবীণ সাংবাদিক, প্রকৌশলী ও গ্রামীণফোন কর্মকর্তাসহ অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
মান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান
নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা স.ম জসিম উদ্দিন করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল সকাল ৮টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত বৃহস্পতিবার  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে নিয়ে আসা হয়। আমরা করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম। সেদিন তিনি করোনার নমুনা দেননি। তিনি যখন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন পরদিন শনিবার সকাল ৭টার দিকে আবারো তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। এ সময় আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এবং করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় অক্সিজেন দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩০ নম্বর করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি গতকাল সকালে মারা যান। তবে করোনা রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রামে গ্রামীণফোন কর্মকর্তা
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে:  করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ। তবুও জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মারা গেলেন গ্রামীণফোন কর্মকর্তা মির্জা আশেক মাহমুদ (৩৮)। রোববার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বড় ভাই চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ সোমবার এ তথ্য জানান।  তিনি জানান, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকলেও রোববার করোনার নমুনা পরীক্ষায় তার নেগেটিভ ফল আসে। এরপরও জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হঠাৎ তীব্র হয়ে উঠলে তাকে দ্রুত আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মির্জা আশেক মাহমুদ। মির্জা আশেক মাহমুদ চট্টগ্রামে গ্রামীণফোনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীতে। তবে তার বেড়ে উঠা চট্টগ্রামে। তিনি দুই কন্যার জনক বলে জানান সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ।
ফেনীতে সাংবাদিক
ফেনী প্রতিনিধি: ফেনীর গুণী সাংবাদিক নুরুল করিম মজুমদার (৬৮) করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। রোববার রাতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া। সোমবার সকালে ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে তার নামাজে জানাযা শেষে মরদেহ শহরের পশ্চিম উকিল পাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তার ছেলে তারেক মজুমদার জানান, ফেনীর বহুল প্রচারিত প্রাচীনতম পত্রিকা সাপ্তাহিক হকার্স- এর প্রকাশক ও সম্পাদক নুরুল করিম মজুমদারের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৭শে জুন তাকে চিকিৎসকের পরামর্শে ফেনীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষায় তার ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিলে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার ঢাকার গ্রিন লাইফ হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। গ্রিন লাইফ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা সাংবাদিক নুরুল করিম মজুমদারের ফুসফুসে প্রকট সংক্রমণের ফলে শারীরিক অবস্থা চিকিৎসার বাইরে চলে গেলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে সন্ধ্যায় তাকে ফেনী আনা হয়। এরপর রাতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে নুরুল করিম মজুমদার বাংলাদেশ টেলিভিশন, ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি), দি ডেইলি স্টার, ডেইলি নিউ এইজ, দৈনিক দেশ বাংলার ফেনী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তৎকালীন ইস্টার্ণ নিউজ এজেন্সির (এনা) নোয়াখালী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে তিনি তার সম্পাদিত ফেনীর প্রাচীনতম পত্রিকা সাপ্তাহিক হকার্সের সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন।
চাঁদপুরে ২
চাঁদপুর প্রতিনিধি: চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহরের রহমতপুর কলোনীর বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৭০) ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ফরাজি বাড়ির শাহ আলম ফরাজী (৫৫) করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। অপরদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁদপুরে আরো ৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদরের ৩, মতলব দক্ষিণের ৩, হাজীগঞ্জের ১ ও শাহরাস্তির ১ জন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪৩। মৃত  মোট ৬২ জন। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। জেলায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ১০৪৩ জনের উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান হলো: সদরে ৪১৭, মতলব দক্ষিণে ১১৬, ফরিদগঞ্জে ১১০, শাহরাস্তিতে ১০৫, হাজীগঞ্জে ১০২, হাইমচরে ৭৭, মতলব উত্তরে ৭০ ও কচুয়ায় ৪৬ জন। জেলায় মোট ৬২ জন মৃতের উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান হলো: সদরে ১৮, হাজীগঞ্জে ১৬, মতলব উত্তরে ৮, ফরিদগঞ্জে ৭, কচুয়ায় ৫, শাহরাস্তিতে ৪, মতলব দক্ষিণে ৩ ও হাইমচরে ১ জন।
ভাঙ্গায় প্রকৌশলী
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন (৫৭) রোববার গভীর রাতে করোনা উপর্সগ নিয়ে মারা গেছেন। তার স্ত্রীসহ  ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। ভাঙ্গা পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কাওছার মিয়া জানান, গত কয়েকদিন ধরেই তার শরীরে জ্বরসহ করোনার নানা উপসর্গ দেখা দেয়। পরে তিনি ভাঙ্গা উপজেলা হাসপাতালে গেলে ডাক্তার তাকে করোনা উপসর্গ ধারণা করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন। রোববার সকালে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসা নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপনের জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উঠেন। চিকিৎসা শেষে পরদিন নিজ বাড়ি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপায় যাবার কথা ছিল তার। রাত সাড়ে বারোটার দিকে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে হোটেলেই মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে ভাঙ্গা পৌর মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজাসহ উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শোক প্রকাশ করেছেন। এদিকে  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মহসিন উদ্দিন ফকির জানান, ভাঙ্গা উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩৮৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জন মারা গেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status