বিশ্বজমিন

ইরানে পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ প্লান্টে কারা হামলা করেছে?

মানবজমিন ডেস্ক

৬ জুলাই ২০২০, সোমবার, ৮:৪২ পূর্বাহ্ন

ইরানের ভূর্গভস্থ নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে সেন্ট্রিফিউজ প্লান্ট এক রহস্যময় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই অগ্নিকান্ডের দায় স্বীকার করে অনলাইন ভিডিও ও বার্তা ছেড়েছে একটি নতুন সংগঠন। বার্তাসংস্থা এপি’র খবরে বলা হয়, নতুন এই সংগঠনের নাম ‘চিতাস অব হোমল্যান্ড’ বা মাতৃভূমির চিতা। সংগঠনটি যেসব বার্তা দিয়েছে সেখানে এমন সব ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে যা সচরাচর বিদেশে নির্বাসিত ইরানি ভিন্নমতালম্বী গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করে। এই বার্তায় ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়েই কেবল কথা হয়েছে, যাকে ইসরাইল নিজের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।

খবরে বলা হয়, দায় স্বীকার করে প্রকাশ করা বার্তাগুলোয় এক ধরণের মরিয়া ভাব দেখা গেছে। আর ইরান বিশেষজ্ঞরা এই সংগঠনের নাম আগে কখনই শোনেননি। ফলে প্রশ্ন উঠছে যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় কি ফের কোনো বিদেশে শক্তি নাশকতা চালিয়েছে? এর আগে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা স্ট্রাক্সনেট নামে ভাইরাস আক্রমণ চালিয়ে অচল করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সাইবার আক্রমণের নেপথ্যে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র ছিল বলে ধারণা করা হয়।

ইরানের সামরিক বাহিনীর নাশকতাবিরোধী ইউনিটের প্রধান জেনারেল গোলা, রেজা জালালি সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি প্রমাণিত হয় যে আমাদের দেশ সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে, তাহলে আমরা জবাব দেব।’ তবে বৃহস্পতিবার ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে অতটা গুরুত্ব দেয়নি ইরানি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন যে, এটি ছিল নিছকই একটি দুর্ঘটনা। ছাদের অংশবিশেষ ছাড়া কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে প্রচারিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় দুই তলা ইটের বিল্ডিং-এ পোড়ার চিহ্ন। আর ছাদ সম্পূর্ণই ধ্বংস হয়ে গেছে।

মার্কিন স্যাটেলাইটের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ইরানের কেন্দ্রীয় ইসফাহান প্রদেশে অবস্থিত নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় অংশে স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। ইরান যেসব ছবি প্রকাশ করেছে, আর স্যাটেলাইট থেকে যেসব ছবি এসেছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে দুই যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বিশ্লেষক বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি হলো নাতানজের নতুন ‘ইরান সেন্ট্রিফিউজ অ্যাসেম্বলি সেন্টার’।

 

অগ্নিকান্ডের ঘটনা জনসম্মুখে আসার আগেই বিবিসি’র পারস্য বিভাগ জানায়, তাদের সাংবাদিকদের কাছে ‘চিতাস অব দ্য হোমল্যান্ড’ নামে একটি সংগঠনের ইমেইল আসে। সেসব ইমেইল বার্তায় নাতানজে হামলার দায় স্বীকার করা হয়। একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, সংগঠনটিতে ‘ইরানি শাসনব্যবস্থার নিরাপত্তা সংগঠনগুলোর কেন্দ্রস্থলে থাকা সৈন্যরা’ও আছেন। এই সৈন্যরা চান ইরান যেন পারমাণবিক সমরাস্ত্রের অধিকারী হতে না পারে। তবে ইরান দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক প্রকল্প শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। তবে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাজেন্সি বলেছে, ২০০৩ সালের শেষ নাগাদ একটি কাঠামোবদ্ধ প্রকল্পে পারমাণবিক বিস্ফোরক ডিভাইস তৈরির সাথে সম্পর্কিত কর্মকান্ড চালিয়েছে ইরান।

ওই সংগঠনটির ভিডিও ও বার্তায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ‘জাহাক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পারস্য রূপকথায় জাহাক মানে দানব বোঝানো হয়। এতে এমন সব তথ্য বা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো ভিন্নমতালম্বী ইরানি গোষ্ঠী মুজাহিদিন-ই-খালক (এমইকে) ব্যবহার করে থাকে। ভিডিওতে ইরানের জাতীয়তাবাদী সঙ্গীত ‘এয় ইরান’-এর অংশবিশেষ চালানো হয়। এই গান সংস্কারপন্থী ও বিরোধী গোষ্ঠিগুলো ব্যবহার করে থাকে।

নয়া সংগঠনটির নামও বেশ রহস্যাবৃত্ত। ‘চিতা’ হলো ইরানের জাতীয় ফুটবল দলের নাম। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ও ইসরাইলি গুপ্তচর সংগঠন মোসাদ নিয়ে আলোচিত বই ‘রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট’-এর লেখক রোনেন বার্গম্যান প্রশ্ন তুলে বলছেন, কেন ইরানের একটি বিরোধী গোষ্ঠী এই ধরণের নাম গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ‘বিরোধী কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ধরণের নাম ব্যবহার করা হবে, তার সম্ভাবনা খুবই কম। আবার এই গোষ্ঠী হয়তো এটাই চায় যে মানুষ তাদের নিয়ে এভাবেই ভাবুক।’

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status