প্রথম পাতা

মানসিক চাপে জর্জরিত মানুষ

মরিয়ম চম্পা

৬ জুলাই ২০২০, সোমবার, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ন

সুইটের গ্রামের বাড়ি পাবনা। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সে মাস্টার্স শেষ করে একটি হাইস্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সস্ত্রীক চাকরি  নেন। করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় দেশে। সবকিছু হয়ে যায় বন্ধ। এ সময় হঠাৎ চাকরি চলে যায় তাদের। দিশাহারা সুইট ফিরে যান গ্রামে। চাকরি না থাকায় প্রতিদিনই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কম বেশি কথা কাটাকাটি হতে থাকে। চাকরি এবং অর্থ না থাকায় স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। কর্মহীন ও হতাশাগ্রস্ত যুবক সুইট গত মাসের শেষের দিকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। অর্থ সংকট সুইটকে ভাবিয়ে তুলে। চাকরিহারা হয়ে ট্রমায় ভুগতে থাকেন তিনি। এর জেরেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মে মাসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৯১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক ট্রমায় আছেন। ফলে অবনতি হচ্ছে পারিবারিক সম্পর্কের। তৈরি হয়েছে অনির্দিষ্টকালের অর্থনৈতিক স্থবিরতা, করোনা সংক্রমণের ভয়, আক্রান্ত পরবর্তী চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা, শিক্ষা জট, চাকরি পাওয়ার হতাশা ইত্যাদি।

করোনার ক্রমবর্ধমান প্রসারে বাড়ছে আতঙ্ক ও মানসিক চাপ। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে হতাশা, বিষণ্নতা ও অবসাদে ভুগছেন সব শ্রেণি ও বয়সী মানুষ। এ অবস্থায় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ট্রমা বিশাল জনগোষ্ঠীর মনোজগতের ব্যাপক বিপর্যয় এবং ব্যক্তি জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ওদিকে ট্রমায় ভুগতে থাকা সৌদি প্রবাসী সাদেকুর বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। সাদেকুর গত মাসে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেন। চাষের জমি বন্ধক দিয়ে ও সুদের ওপর টাকা এনে সাদেকুরকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন তার পরিবার। স্বপ্ন ছিল বাবা-মা ও ভাইবোন নিয়ে একটু ভালো থাকার। স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার। দেশে আসার পর পরিবারের সদস্যরা সাদেকুরের জন্য কনে দেখাও শুরু করেছিলেন। অবশেষে এক আত্মীয়ের কলেজপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে মৌখিকভাবে বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়। এদিকে চাকরি হারিয়ে সাদেকুর দেশে আসার পর প্রতিবেশীরা প্রথমদিকে তাকে করোনা পজেটিভ ভেবে এড়িয়ে চলে। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। করোনার কারণে নতুন কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সাদেকুর। পরিবারের সদস্যরা দেখে ফেলায় এ যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।

এ ব্যাপারে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলেছেন, মানুষ এক ধরনের স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সময়ে। বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের ভালো থাকাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। প্রথমত, আমরা করোনা আক্রান্ত হতে পারি। আরেকটি হলো আক্রান্ত হওয়ার পর আমরা সঠিক চিকিৎসা পাবো কিনা? পেলেও  সেটা কতটা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে করোনার কারণে হঠাৎ করে আমরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে গেছি। অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই। কোনো কিছু যখন মানুষের নিয়ন্ত্রণে না থাকে এবং এক ধরনের অনিশ্চয়তা থাকে এই দুটো জিনিস মিলে আমাদের মধ্যে একটা উদ্বিগ্নতা কাজ করে। এক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের চাপ মোকাবিলা করার জন্য প্রথম যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো জীবনে চলার পথে চাপ কিন্তু আমাদের থাকবেই। যে পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি আমাদের হতে হচ্ছে তার কোনো কিছুই কিন্তু আমাদের হাতে নেই। কিন্তু চাপ মোকাবিলা করার বিষয়টি আমাদের হাতে আছে। এ সময়টায় আমরা কি পরিকল্পনা গ্রহণ করবো সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবকিছু আমাদের মেনে নিতে হবে। এটা না পারলে উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায়। হাহাকার বেড়ে যায়। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, চাকরি হারিয়েছে, টিউশন নেই। অস্থায়ী চাকরির  ক্ষেত্রে প্রথমেই হায় হায় আমার চাকরি যদি চলে যায়? এটা চিন্তা করে লাভ নেই। বরং আমি যদি মনে করি চাকরি আমার যেতে পারে তাহলে বিকল্প কি করার সুযোগ আছে সেটা করার চেষ্টা করতে হবে। এতে উদ্বিগ্নতা কমাতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া আমাদের যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করতে হবে জীবনের স্বাভাবিকতা রাখা। রুটিন কাজের বাইরে নতুন কিছু শিখে নিজেকে ডেভেলপ করে রাখা। এটা আমাদের স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status