অনলাইন

করোনাভাইরাস বিষয়ে আপনি কতটুকু জানেন, পরীক্ষা করে নিন

তারিক চয়ন

৫ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৪:৪২ পূর্বাহ্ন

করোনাভাইরাস বিষয়ে আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানি৷ আবার অনেকে অনেক কিছুই জানি না। চলুন জেনে নেয়া যাক, আমরা যা জানি তার কতোটা সত্য আর কতোটা মিথ্যাঃ

করোনাভাইরাস উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ুতে ছড়ায় না?

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সকল জলবায়ুতে, সব ধরণের তাপমাত্রায়, সর্বত্র ছড়াতে পারে। জলবায়ু এবং আবহাওয়া নির্বিশেষে যে যেখানেই থাকি, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কিংবা সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে - এমন কোথাও বসবাস করলে বা যেতে হলে আমাদের সকলের উচিত নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে পারে না?

নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে যেসকল ভ্যাক্সিন দেয়া হয়ে থাকে - যেমন নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন এবং হেমোফিলিয়াস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ ‘বি’ ভ্যাক্সিন - সেগুলো করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে অকার্যকর। ভাইরাসটি এতটাই নতুন এবং ভিন্ন ধরণের যে এর জন্য নতুন ভ্যাক্সিন তৈরী করা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী অসংখ্য গবেষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনাভাইরাস এর ভ্যাক্সিন আবিষ্কার এর কাজ চলছে।

করোনাভাইরাস বয়সে কম ব্যক্তিদের কিংবা তরুণদের আক্রমণ করে না?

সকল বয়সের মানুষই করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হতে পারে। যাদের বয়স কম, তাদের রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম, কিন্তু তারা ঠিকই অন্যদের মাঝে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার বাহন হিসাবে কাজ করতে পারে।

এ্যান্টিবায়োটিক করোনা ভাইরাস এর উপর কাজ করে না?

এ্যান্টিবায়োটিক কোনও ভাইরাসের উপরই কাজ করে না। এ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে অন্য এক ধরণের জীবাণুর উপর, যাকে আমরা চিনি ব্যাকটেরিয়া হিসাবে।

থানকুনি পাতা খাওয়ার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায়?

থানকুনি পাতা খাওয়ার সাথে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের কোনো সম্পর্ক নেই।

সুস্থ হলেও সকল পরিস্থিতিতে মাস্ক পরে থাকা অপরিহার্য?

যদি কেউ রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকে কিংবা নিজে অসুস্থ থাকে এবং হাঁচি কাশি দিতে থাকে, তাহলে তার মাস্ক পরে থাকা অপরিহার্য। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে মাস্ক পরে থাকায় কোনও ক্ষতি নেই। যদি কেউ মাস্ক পরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা সঠিক উপায়ে পরা উচিত।

১০ সেকেন্ড শ্বাস আটকে রেখে অস্বস্তি হয় কিনা পরীক্ষা করার মাধ্যমে নিজেই নিজের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে কিনা বুঝতে পারবো?

বিশ্বের কোনো স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এধরণের কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। এটা করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষার কোনো স্বীকৃত পদ্ধতি নয়।

মশার কামড়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে না?

করোনা ভাইরাস আমাদের ফুসফুসজাত তরল যেমন হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে এবং সংক্রমণ করে থাকে, রক্তের মাধ্যমে নয়। ফলে, মশার কামড়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু মশার কামড়ের মাধ্যমে অন্যান্য গুরুতর রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে, যেমন - ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মধ্যে অন্তত ৬০% এলকোহল থাকা প্রয়োজনীয়?

গবেষণাগারে চালানো নানা পরীক্ষা থেকে সন্দেহাতীতভাবে জানা গিয়েছে যে ৬০% ইথানল এবং ৭০% আইসোপ্রোপানল এর মিশ্রণ 2019-nCOV বা নভেল করোনা ভাইরাস এবং সমগোত্রীয় ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। এই মিশ্রণটি CDC (যুক্তরাষ্ট্রের প্রধাণ রোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা) কর্তৃক সুপারিশ করা। যদি এই ধরণের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। সাধারণ সাবান এই ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে ঠিক একই পরিমাণ কার্যকর।

চীন কিংবা করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে এরকম যেকোন দেশে উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে?

যদিও করোনা ভাইরাস কোন পৃষ্ঠতলে পড়ার পর কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারে (বিষয়টি অনেকটা পৃষ্ঠতলের উপর নির্ভরশীল), এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে আসায় সেই পৃষ্ঠতল যে পরিমাণ নড়াচড়ার মধ্যে দিয়ে যায়, যে পরিমাণ যাত্রাপথ অতিক্রম করে আর যত ধরণের তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে যায় - তার পরও করোনাভাইরাসটি সেই পৃষ্ঠতলে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।

থার্মাল স্ক্যানার বা তাপ-ভিত্তিক স্ক্যানার এর মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নির্ণয় করা সম্ভব?

থার্মাল স্ক্যানার শুধু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি, অর্থাৎ যাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী, তাদের শনাক্ত করতে পারে। জ্বর ছাড়া অন্য কোন উপসর্গ শনাক্তকরণের ক্ষমতা থার্মাল স্ক্যানার এর নেই।

রসুন খাওয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায়?

রসুন খাওয়ার সাথে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনার কোনও সম্পর্ক নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিরাময়ের কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় নি।

লবণ বা ভিনেগার মিশ্রিত গরম পানি পান করা কিংবা কুলি করার মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়?

লবণ বা ভিনেগার মিশ্রিত গরম পানি পান করা কিংবা কুলি করার সাথে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কোনো সম্পর্ক নেই।

সূত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status