শেষের পাতা

অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়ে নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার

৪ জুলাই ২০২০, শনিবার, ৮:৩১ পূর্বাহ্ন

রাস্তা থেকে তুলে এনে এক পেশাদার যৌনকর্মীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর পর লেনদেন নিয়ে ঝগড়া হয়। যৌনকর্মীর দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় ও পরিস্থিতি সামাল দিতে হত্যার পরিকল্পনা। পরে শ্বাসরোধ করে ওই যৌনকর্মীকে হত্যা করে ঘাতক। রাতভর খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে ভোরবেলা একটি ভবনের পরিত্যক্ত আন্ডারগ্রাউন্ডে মরদেহ ফেলে রাখে। ঘটনার চারদিন পর ভবনের অন্যান্য বাসিন্দারা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে অজ্ঞাতনামা ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। থানায় এ নিয়ে একটি মামলা হয়। পুলিশ ক্লু’লেস ওই মামলার তদন্ত শুরু করে।
ঢাকার সবুজবাগের দক্ষিণগাঁওয়ের কুসুমবাগ এলাকার ক্ল’ুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের শিকার নারীর পরিচয় ও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামির নাম সাদা মিয়া (৩৭)। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। ডিএমপি’র সবুজবাগ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাশেদ হাসানের  নেতৃত্বে সবুজবাগ থানা পুলিশের একটি টিম বুধবার তাকে গাইবান্ধার সাঘাটার পুটিমারি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘাতক সাদা মিয়া পুলিশের কাছে এই হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আর হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীর নাম পলি বেগম (৩৫)। তিনি পেশাদার যৌনকর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১৬ই জুন সবুজবাগ থানায় খবর আসে দক্ষিণগাঁয়ের কুসুমবাগ এলাকার একটি বাসার নিচ তলার আন্ডারগ্রাউন্ডে এক নারীর মরদেহ পড়ে আছে। পরে সবুজবাগ থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে এলাকার সেলিম মিয়ার চারতলা বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডের পানির মধ্যে এক নারীর মরদেহ ভাসছে। পুলিশ কালো কাপড় দিয়ে হাত মুখ বাধা মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এদিকে সম্পূর্ণ ক্লু’লেস মামলা নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। মৃত ওই নারীর পরিচয় ছিল অজ্ঞাত। তাই তার পরিচয় বের করার জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নেয়া হয়। সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিটের মাধ্যমে ডিজিটাল ও এনালগ পদ্ধতিতে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে বায়োমেট্রিক নেগেটিভ আসে। পরে দেশের সকল থানা ও সিআইডি’র ক্রিমিনাল গেজেটে ওই নারীর ছবি প্রকাশ করা হয়। এতেও কোনো লাভ হয়নি। ওদিকে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হলেও বসে থাকেনি পুলিশ। এসি রাশেদ হাসানের দক্ষতাপূর্ণ তদন্তের জন্য এই ঘটনার মূল ঘাতক সাদা মিয়াকে শনাক্ত করে  গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপি’র সবুজবাগ জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার রাশেদ হাসান মানবজমিনকে বলেন, মামলাটি একেবারেই ক্লু’লেস ছিল। অজ্ঞাতনামা আর ক্লু’লেস হওয়াতে করোনা পরিস্থিতিতেও মামলাটিকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম। গ্রেপ্তার সাদা মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, দক্ষিণগাঁওয়ের ওই চারতলা বাসার একটি কক্ষে একা থেকে সে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতো। ১৩ই জুন রামপুরা এলাকায় পলি বেগম তাকে এসে বলে, সে একজন যৌনকর্মী। করোনাকালে আয় ইনকাম নাই। তাই ২০০ টাকা দিলে সে বাসায় যাবে। তখন সাদা মিয়া রাজি হয়ে তাকে তার সিএনজি দিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় দক্ষিণগাঁওয়ের বাসায় নিয়ে আসে। পরে দু’জনেই শারীরিক মেলামেশার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পলি বেগম সাদা মিয়ার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু সাদা মিয়া এত টাকা দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু পলি এই টাকা না দিলে ঝামেলা করবে বলে হুমকি দেয়। সাদা মিয়া তখন পলিকে বাসায় রেখে টাকা ম্যানেজ করার জন্য বাইরে এসে ঘোরাঘুরি করে আবার বাসায় যায়। বাসায় যাওয়ার পর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সাদা মিয়া উত্তেজিত হয়ে পলির গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মরদেহ লুকিয়ে রাখে খাটের নিচে। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে খাটের নিচ থেকে মরদেহ বের করে ওই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমরা ওই ভবনের সকল বাসিন্দাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝতে পারি এই হত্যাকাণ্ডে সাদা মিয়ার সম্পৃক্তা আছে। ঘটনার পরেই সে ওই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। তার বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটার পুটিমারি। সে ওই এলাকার আব্দুল বেপারির ছেলে। সাদা দু’টি বিয়ে করেছে। এক স্ত্রী থাকে সৌদি আরব আরেক স্ত্রী দেশেই থাকে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status