অনলাইন

গিফটবক্স প্রতারণা, তিন বিদেশি সিআইডির জালে

স্টাফ রিপোর্টার

৩ জুলাই ২০২০, শুক্রবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

ফেসবুকে বিদেশি নারীদের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে প্রতারণা চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি হলেন নেগুগাং টেগোমো বার্টিন (৪৭), নেগুগেং টোসার্জ ক্রিশ্চিয়ান (৩৮) ও একোঙ্গো আর্নেস্ট ইব্রাহিম (৪২)। বার্টিনকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন। আর ক্রিশ্চিয়ান ও ইব্রাহিমকে বসুন্ধরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এই তিনজনের কারোরই পাসপোর্ট পায়নি সিআইডি। বার্টিন ও ক্রিশ্চিয়ানের পাসপোর্টের ফটোকপি থেকে তাঁরা ক্যামেরুনের নাগরিক বলে জানা গেছে। আর আর্নেস্টো নিজেকে কেনিয়ার নাগরিক বলে পরিচয় দিয়েছেন। এই তিন জন দীর্ঘদিন ধরে নানা কৌশলে ফেসবুকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে গিফটবক্স প্রতারণা করে আসছিল। ২০১৮ সাল থেকে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। গতকাল দুপুরে সিআইডি হেডকোয়াটার্সের কনফারেন্স রুমে সংস্থাটির উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শেখ মোহাম্মদ রেজাউল হায়দার এসব তথ্য জানান।
রেজাউল হায়দার বলেন, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের এক ব্যবসায়ী যুবকের
আলোজেনিটরি নামক একটি ফেসবুক আইডির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল। ওই নারী নিজেকে আফ্রিকান হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে আফ্রিকান ওই নারী যুবকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন। কিছুদিন পর তিনি ব্যবসায়ী বন্ধুর কাছে একটি গিফট বক্স পাঠানোর কথা জানান। দুদিন পর একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে তার মোবাইলে ফোন আসে। ফোনে উইলিয়াম নামের এক ব্যক্তি যুবককে বলেন
গিফট বক্সটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আছে। তার পরপরই কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আরেক ব্যক্তি বলেন গিফটবক্স নিতে হলে ভ্যাটের টাকা দিতে হবে। তখন ওই যুবক ১৮ই ফেব্রুয়ারি একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাটারা শাখায় ভ্যাট হিসেবে ৫১ হাজার ২৬০ টাকা পাঠান।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, তথাকথিত ভ্যাটের ৫১ হাজার ২৬০ টাকা পাঠানোর পরদিন উইলিয়াম নামধারী ব্যক্তিটি তাঁকে ফোন করে জানান গিফট বক্সটি স্ক্যান করা হবে। মূল্যবান সামগ্রী থাকলে তিনি সমস্যায় পড়বেন। তবে নন-স্ক্যানিং ফি ১ লাখ ২০ হাজার ৪৫০ টাকা দিলে বক্সটি স্ক্যান করা হবে না। পুরো টাকা পাঠানোর পর আবার ফোন দিয়ে জানান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে গিফট বক্সসহ আটক করেছে। তখন ওই যুবক উপহারের প্রয়োজন নেই বলে জানান । কিন্তু উইলিয়াম নামধারী ব্যক্তিটি জানান, বক্সে যুবকের নাম-ঠিকানা লেখা আছে। পুলিশ ঠিকানা ধরে তাঁর খোঁজ করতে পারে।
সিআইডি আরও জানায়, উইলিয়াম নামধারী ওই ব্যক্তি তখন যুবককে জানায়, আমেরিকার নাগরিক হিসেবে অ্যাম্বাসি থেকে যদি তিনি একটি সার্টিফিকেট নিয়ে দেখান, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিফট বক্সটি ছেড়ে দেবে। তবে এ জন্য সার্টিফিকেট ফি হিসেবে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই টাকা পাঠানোর পর সার্টিফিকেটের সঙ্গে হাইকোর্টের স্ট্যাম্প লাগবে বলে জানায়। সে জন্য দাবি অনুযায়ী আরও দেড় লাখ টাকা পাঠান যুবকটি। এরপর বিমানবন্দরে আরও কিছু টাকা লাগবে বলে জানালে তিনি আরও ৭০ হাজার টাকা পাঠান। তারপরও গিফট বক্সটির কোনো সন্ধান পাননি। বরং সোলায়মান নামধারী প্রতারক চক্রের আরেক ব্যক্তি তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয় দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন। এরপর তিন দফায় চক্রটিকে তিনি আরও ৩ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা পাঠান। এভাবে চক্রটিকে মোট ৯ ধাপে ২১ লাখ ৬২ হাজার ৭১০ টাকা দেন এই যুবক। ২৬ জুন একটি অনলাইন পোর্টালে সিরাজগঞ্জের এক নারীর কাছ থেকে প্রতারক চক্রের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সংবাদ পড়েন তিনি। তাঁর কাছ থেকে যেভাবে টাকা নেওয়া হচ্ছে, অনেকটা সেভাবেই ওই নারীর কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি নিজেও যে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন, সেটা বুঝতে পারেন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি জেনিটরি নামের ওই আইডির সঙ্গে যখন যুবকের পরিচয় হয় তখন তার রড, সিমেন্টের ব্যবসা ছিল। প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে চার মাসে তিনি নিঃস্ব হয়েছেন। পরে তিনি উপায়ন্তর না পেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এপিবিএনের শরণাপন্ন হন তিনি। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা করেছেন মেহেন্দিগঞ্জের প্রতারিত যুবক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status