প্রথম পাতা

রাজনৈতিক দলের কাছে নতজানু ইসি

স্টাফ রিপোর্টার

৩ জুলাই ২০২০, শুক্রবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে নারীর ৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়ায় প্রমাণ হয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি দলগুলোর কাছে নতজানু। এটা একদিকে যেমন রাজনৈতিক দলের কাছে নির্বাচন কমিশনের নতজানু মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। তেমনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ তথা নারীর ক্ষমতায়নের পরিপন্থী। গতকাল ‘রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ: নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ও সুজন এর বক্তব্য’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায় সুজন।
লিখিত বক্তব্যে সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক মনে করে, এই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আত্মঘাতী। কেননা মানুষের প্রত্যাশা যখন একটি স্বাধীন, সাহসী ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের, তখন নির্বাচন কমিশন এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে দুর্বল করছে। এটা একদিকে যেমন রাজনৈতিক দলের কাছে নির্বাচন কমিশনের নতজানু মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ; তেমনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নের পরিপন্থী। তিনি বলেন, গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার বর্ণনায় পার্থক্য হলো, ‘এই লক্ষ্যমাত্রা পর্যায়ক্রমে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে অর্জন করিতে হইবে’-এর স্থলে ‘কমিশনে প্রদেয় বার্ষিক প্রতিবেদনে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে।’ এই পার্থক্যের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, যে লক্ষ্যমাত্রা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহকে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে অর্জন করার বাধ্যবাধকতা ছিল, তা না করলেও চলবে। তার পরিবর্তে বার্ষিক প্রতিবেদনে এই লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জিত হয়েছে তার বিবরণ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘কমিশনে রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’-এর খসড়ায় উল্লেখিত আর একটি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তা হচ্ছে নিবন্ধনপ্রাপ্তির শর্তাবলি। আইনের খসড়ায় এমনভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী যে কোনো দু’টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে, কোনো নতুন দলের জন্য নিবন্ধন পাওয়া সম্ভব হবে না। সুজন মনে করে নতুন দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নতুন আইনের খসড়ায় উল্লেখিত প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। নিবন্ধনের পূর্বশর্তগুলো খুব বেশি কড়াকড়ি না করে বরং কিছুটা শিথিল রাখা উচিত- যাতে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উন্মেষের পথ খোলা থাকে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান করবো এই আপসকামিতার মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসার। সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, কোনো দলের কাছে নয়। এই আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য কি জনস্বার্থ না রাজনৈতিক দলের স্বার্থ এটাই আমার কাছে বড় প্রশ্ন। রাজনৈতিক দল যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে লক্ষ্য হওয়া উচিত দলগুলোকে গণতান্ত্রিক করা। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিন ধরেই জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করে আসছে, নানা অপকর্ম করে আসছে। আমি মনে করি এই আইনটা এই অপকর্মেরই ধারাবিহকতার অংশ।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এমন উদ্ভট, বিবেচনাহীন সব বিষয় সামনে আসে, এসব নিয়ে সুস্থভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো কঠিন। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যদি মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবো। নির্বাচন কমিশন এখন আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমিশন জাতির অগ্রগতির পথে অনেক বড় অন্তরায় হয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই উদ্যোগ চরম আপত্তিকর, অগণতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য এবং সংবিধান বিরোধী। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কিভাবে জনগণের অধিকার চর্চা সংকুচিত করার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে আমার কাছে পরিষ্কার না। আমি বলব এটা একটি অগ্রহণযোগ্য সংস্থার চরম অগ্রহণযোগ্য একটি কাজ। এর ফলে আমাদের ন্যূনতম গণতন্ত্র চর্চার সুযোগও থাকবে না।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, জাতীয় জীবনে করোনার মতো একটা দুর্যোগ চলাকালীন এরকম একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরকম একটি আইন প্রণয়ন করতে হলে সব দলে সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কমিশনের স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিতকরণে ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান, সুজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মুজবাহ আলীম এবং ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী  মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status