শেষের পাতা

শোক-শ্রদ্ধায় হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার

২ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম হামলাগুলোর মধ্যে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা অন্যতম। ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই ঘটে যাওয়া এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ স্মৃতি আজও নাড়া দেয়। সেদিন জঙ্গিদের নির্মমতার কাছে হার মানতে হয় ১৭ বিদেশি সহ ২০ জনকে । জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাও। ফলে ওই দিনটি সবার কাছে কালো অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে। তাই প্রতিবছর দিনটি আসলেই নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে হলি আর্টিজানে ছুটে যান নানা শ্রেণি- পেশার মানুষ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নিহতের স্মরণ করা হয়েছে। তবে, করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে সীমিত পরিসরে তাদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। ফলে অন্যান্য বছরের মতো সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। প্রতি বছর সকাল থেকে নিহতদের স্বজনরা গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর হলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়ে ভিড় করলেও এ বছর তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে, সকাল থেকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ঢাকাস্থ জাপান, ইতালি ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পর্যায়ক্রমে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সরজমিন দেখা যায়, গতকাল সকাল থেকেই নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল গুলশান-২ এর ওই এলাকাজুড়ে। ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রবেশের আগে রাস্তার মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে দায়িত্বপালন করা একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, এবার নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গের বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়ার নির্দেশনা নেই। সাধারণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। তবে বেলা ১২টা পর্যন্ত নিহতদের স্বজন বা সাধারণ মানুষ কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে দেখা যায়নি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান ভবনের সামনে তৈরি করা মঞ্চে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি, আমরা জঙ্গিদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে আছি। কারণ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা যখনই কোনো পরিকল্পনা করছে তখনই আমরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে কাজ করছি এবং তাদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছি। যার ফলে বর্তমানে জঙ্গিবাদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে, আমরা কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। জঙ্গিবাদ দমনের যে সফলতা অর্জন করেছি, সেই সফলতাকে ধরে রাখতে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট কাজ করছে।
সকাল ১০টার দিকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর আমরা একের পর এক জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। জঙ্গিদের সক্ষমতা যে পর্যায়ে ছিল সেটি এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। ইমপ্রোভাইজড বোমা বানানোর মতো এক্সপার্ট এখন আর নাই। তারা কেউ জেলে আছে অথবা বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে। তাদের ছোটখাটো সক্ষমতা থাকতে পারে। কিন্তু বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা নেই। তিনি আরো বলেন, করোনাকালে স্বাভাবিকভাবে মানুষ বাসায় বেশি থাকে। তারা অনেকেই ধর্মীয় সাইটগুলোতে বেশি ভিজিট করছেন। এই সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা কিন্তু কন্টিনিয়াসলি করোনার মধ্যেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। লোন উলফ বা একাকী হামলার জন্য তারা উদ্বুদ্ধ করছে, বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করার জন্য। কী কী কায়দায় হামলা করতে হবে, একটি হাতুড়ি হলেও সেটি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করা, এ ধরনের নানাবিধ প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা তাদের প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি। তারা কাউকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে বা জঙ্গিবাদের কার্যক্রমকে পরিচালনার জন্য সংগঠিত হয়ে কোনো সংগঠন আবার গড়ে তুলতে পেরেছে সেরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১লা জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হন। পরের দিন ২রা জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ‘থান্ডারবোল্ট’ নামক অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ২০১৮ সালের ২৩শে জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২১ জনকে চিহ্নিত করে এ মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরে গত বছরের ২৭শে নভেম্বর নজিরবিহীন এ জঙ্গি হামলায় নব্য জেএমবি’র ৭ সদস্যের ফাঁসির রায় দেয় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status