খেলা

সভাপতি-মহাসচিব দ্বন্দ্বে বেহাল দশা শুটিংয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার

২ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

সম্ভাবনাময় ডিসিপ্লিন শুটিংয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই হতাশা উপহার দিয়ে আসছেন শুটাররা। গত বছর নেপালে এসএ গেমসে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। সোনার হাসি হাসতে পারেননি কেউই। আর এখন সাফল্যের গ্রাফের মতোই খেলাটির সম্ভাবনা নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে শুধুমাত্র বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের অন্তঃকোন্দলের কারণে। ফেডারেশনের সভাপতি ও মহাসচিবের দুই মেরুতে অবস্থানে খেলাটির সম্ভাবনা এখন হুমকির মুখে।
ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর হাত ধরেই একটা সময় ঝিমিয়ে পড়া খেলাটি চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল। শুরুর দিনগুলোতে মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুই চালাতেন ফেডারেশন। এটা নিয়ে সেভাবে মাথাব্যথা ছিল না সভাপতি নাজিম উদ্দিনের। অপু খুব যে খারাপ করছিলেন তাও নয়। অভিজ্ঞ রাইফেল কোচ ক্লাবস ক্রিস্টেনসেনকে উড়িয়ে এনে ২০২৪ অলিম্পিক গেমসে সরাসরি খেলার লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছিলেন। শুটারদের সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছিল বেশ। বিদেশে নিয়মিত খেলার সুযোগও পাচ্ছিলেন বাকী-শাকিলরা। হঠাৎ করেই যেন পাল্টে গেল চিত্র। গত বছর বার্ষিক সাধারণ সভায় কাউন্সিলরদের হাতে আসে অপুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সংবলিত একটি উড়োচিঠি। এই উড়োচিঠির উপর ভিত্তি করেই গত জুলাইয়ে নির্বাহী সভায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। যাতে ছিলেন হোসনে আরা বেগম (আহ্বায়ক), জিয়াউদ্দিন আহমেদ (সদস্য) এবং ইয়াসমিন গফুর পিপিএম (সদস্য)। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও কার্যক্রম শেষে এ বছরের মার্চে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে ফেডারেশনের সভাপতি নাজিমউদ্দিন চৌধুরীর কাছে। প্রতিবেদন ছিল ৫০ পৃষ্ঠার। এতে মোট ২৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। মহাসচিব তার বক্তব্য দিতে বেশ কালক্ষেপণ করেন। এ মাসের শুরুতে (৬ই জুন) নির্বাহী সভায় ৫০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে নির্বাহী কমিটির কাছে। ফেডারেশন সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানালেন সেই প্রতিবেদনের প্রায় পুরোটা জুড়েই উঠে এসেছে অপুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। নাজিম জানান, আর্থিক অনিয়ম, সরঞ্জামাদি ক্রয়ে বেহিসাবি খরচ, নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শুটিং ফেডারেশনের কাজ পাইয়ে দেয়া, নিজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের ফেডারেশনের বিভিন্ন দায়িত্বে বসানো, অস্ত্র-গুলি ক্রয়ে সরকারি নিয়ম না মানা, খেয়ালখুশি মতো ফেডারেশন পরিচালনাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে অপুর বিরুদ্ধে। নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সব দেখে মনে হচ্ছে মহাসচিব সাহেব ফেডারেশনকে নিজের ব্যবসাক্ষেত্র বানাতে চেয়েছিলেন। অথচ সেটা হওয়ার কথা ছিল না। একটা সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডে আমি খুব বেশি সময় দিতে পারছিলাম না। তখন ওনার (অপু) ওপর আস্থা ছিল। কিন্তু পরে যখন দেখলাম অনেক ক্ষতি হচ্ছে, তখন লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করলাম। আর এখন তো তদন্তে অনেক কিছুই প্রকাশ পেয়েছে।’ অপু অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তার বিরুদ্ধে বানোয়াট, অসত্য অভিযোগ এনে আসছে ডিসেম্বরে ফেডারেশনের নির্বাচনের মাঠে সুবিধা নেয়ার পাল্টা অভিযোগ করেছেন সভাপতির বিরুদ্ধে। অপু বলেন, ‘আসলে যখন তিনি (নাজিম উদ্দিন) বুঝতে পারলেন সামনের নির্বাচনে তিনি সভাপতি থাকতে পারবেন না, তখন থেকেই তিনি আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনতে শুরু করলেন। সভাপতির উদ্দেশ্য নিজের লোকজন নিয়ে একটি পকেট কমিটি গঠন করা। আমাকে সেখান থেকে বাদ দিতে নানারকম চক্রান্ত করছেন। মিথ্যে-বানোয়াট, অসত্য অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমাকে কোনো কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। আমি কিছু করতে চাইলে, সেটায় বাধা দেয়া হচ্ছে নানাভাবে।’
অপু জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো প্রমাণ করতে পারবে না কেউ। বরং তার কাজে বাধা দিয়ে খেলাটারই ক্ষতি করছেন সভাপতিসহ ফেডারেশনের বেশ ক’জন কর্মকর্তা। অপু বলেন, ‘সভাপতি সাহেব কয়েকজন কর্মকর্তাকে হাত করে আমাকে কোণঠাসা করতে চাইছে। এখানে আমি স্বেচ্ছায় কাজ করতে এসেছি। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আসিনি। অথচ নানা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। এতে করে খেলাটারই ক্ষতি হচ্ছে। শুটারদের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারবেন।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status