শেষের পাতা

সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডাক্তারদের থাকা-খাওয়ার বিলে কোনো দুর্নীতি হয়নি

সংসদ রিপোর্টার

১ জুলাই ২০২০, বুধবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ায় কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের থাকা-খাওয়ার বিষয় নিয়ে যে কথা হয়েছে, সেটা আমি খোঁজ নিয়েছি। ৫০টি হোটেল ভাড়া হয়েছে। সেখানে তিন হাজার ৭০০ মানুষ একমাস থেকেছে। প্রত্যেকটি রুমের ভাড়া এক হাজার একশ’ টাকা। খাওয়ার খরচ যেটা বলা হয়েছে, তা টোলালি রং। সেখানে দিনের তিনটি মিলের জন্য খরচ ৫০০ টাকা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে মঞ্জুরি দাবির উপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, সরকার কাজ করেছে বলেই করোনায় অন্যান্য দেশের থেকে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার কম। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।
জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইসিইউ নিয়ে অনেক কথা হলো। ভেন্টিলেটর নিয়ে বিরাট হৈ চৈ। কিন্তু দেখা গেছে, ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেটরে যারা গেছেন, তাদের প্রায় সকলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের ৪০০ ভেন্টিলেটর আছে। এরমধ্যে ৫০টিও ব্যবহার হয়নি। সাড়ে তিনশ’ ভেন্টিলেটর খালি পড়ে আছে। করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ওষুধ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনার কী চিকিৎসা লাগবে ডব্লিউএইচও তা বারে বারে চেঞ্জ করেছে। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করেছি। কেউ কিন্তু আগে বলেনি পিপিই লাগবে। যখন বলা হলো, তখন সারা বিশ্ব লকডাউন। এই লকডাউনের কারণে আমরা পিপিই পাচ্ছিলাম না। যন্ত্রপাতি পাচ্ছিলাম না। পরে আস্তে আস্তে ব্যবস্থা করেছি। এখন আর সেই অভিযোগ নেই। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। এখন হাইফ্লো অক্সিজেনের প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। আমরা এক হাজার অক্সিজেনের অর্ডার দিয়েছি। প্রায় ১০ হাজার নতুন সিলিন্ডার বানানো হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। ৫ মাস কিন্তু আমরাই মাঠে আছি। ২৫ দিনে বসুন্ধরায় দুই হাজার বেডের হাসপাতাল বানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা পেলে কোভিড চলে যাবে। স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সংসদ সদস্যরা আমাদের কেবল দোষারোপ করে গেছেন। আমরা কী কাজ করেছি, তা আসেনি তাদের বক্তব্যে। কোভিড আসার শুরু থেকেই আমরা কাজ করছি। চীনে কোভিড দেখা দেয়ার পরপরই আমরা পোর্টগুলোতে স্ক্রিনিংসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রত্যেক জেলা-উপজেলার হাসপাতালে কোভিডের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করেছি। আমরা জাতীয় পর্যায়ে কমিটি তৈরি করেছি। ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ২৬ শতাংশ। এই হার ভারতে ৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ। এটা এমনিতেই হয়নি। সকলে কাজ করেছে বলেই এটা হয়েছে।
চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, পিপিই কীভাবে পরতে হবে এবং খুলতে হবে এই বিষয়টি জানা না থাকার কারণেই তারা আক্রান্ত হয়েছেন। এ জন্য আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ফলে আক্রান্তের হার কমেছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে আমরা ইতিমধ্যে কোভিডের জন্যই শুধু দুই হাজার নতুন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছেন। সেটা ১৫ দিনের মধ্যেই নিয়োগ হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব ছিল। দেড় মাসে আমরা এখন ৬৮টি ল্যাব করেছি। দিনে মাত্র দেড়শ’টা টেস্টের ব্যবস্থা ছিল সেটা এখন আঠার হাজারে উন্নীত হয়েছে। এটা এমনিতেই হয়নি। আমরা জানি, আমাদের আরো টেস্ট দরকার। আরো করলে ভালো হয়। কিন্তু কোটি কোটি লোককে টেস্ট করতে পারবেন না। এটা আমাদের মানতে হবে।
সরকারের উদ্যোগের ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হয়েছে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসার উদ্যোগ নেইনি। আমরা তাদের নিয়ে এসেছি। এখন তারা কোভিড চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে, এটা ঠিক তারা বিলটা একটু বেশি করছে। কোভিড চিকিৎসায় ব্যয় একটু বেশি। আমরা বলেছি আমরা চার্জ ঠিক করে দেবো। এই সময়ে আপনারা লাভের চিন্তা করবেন না। মানুষকে সেবা দিন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status